বয়সভেদে ফ্রিজের খাবার যেভাবে খাবেন
অতীতে দেখা যেত, পরিবারের কর্তা সাতসকালে বাজারে যেতেন। আধুনিক ব্যস্ততম জীবনে নিত্য বাজারে যাওয়ার ঝামেলা কমিয়ে দিয়েছে ঘরে থাকা ফ্রিজ। বাজার থেকে কিনে আনা মাছ-মাংস থেকে শুরু করে সবজি–ফলমূল ইত্যাদি সংরক্ষণ করা এখন সহজ হয়ে গেছে অনেক। সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ফ্রিজে সংরক্ষিত এই খাবারগুলো খেতে পারেন অনায়াসে। কিন্তু বাড়িতে থাকা শিশু, রোগী কিংবা বয়স্ক ব্যক্তিরা কি স্বাভাবিক মানুষের মতো ফ্রিজে রাখা খাবার গ্রহণ করতে পারবেন?
রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালের সাবেক প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা আখতারুন নাহার এ বিষয়ে বলেন, ‘প্রাপ্তবয়স্ক সবল মানুষ সহজেই ফ্রিজের খাবার খেয়ে দিন যাপন করতে পারেন। কিন্তু শিশু, রোগী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের একটু স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই খাবার খেতে হবে। সেই সঙ্গে বাড়ির অন্তঃসত্ত্বা নারীদেরও ফ্রিজের খাবার গ্রহণের সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত।’
সবকিছু তাজা খাওয়ার মধ্যে স্বাস্থ্যগত ইতিবাচক দিক আছে অনেক। কিন্তু জীবন যাপন যেহেতু এখন আর আগের মতো এত সহজ-সরল নয়, তাই আধুনিকতাকেই ধারণ করে নিতে হয়। ফ্রিজে রাখা খাবার সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ খুব সহজেই খেতে পারবেন। তাঁদের জন্য তেমন সচেতন হওয়ার দরকার নেই। তবে শিশু, রোগী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ফ্রিজে রাখা খাবার খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে। ফ্রিজের ঠান্ডা খাবার খেতে হলে মানতে হবে কিছু স্বাস্থ্যবিধি।
শিশু, রোগী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের ফ্রিজে রাখা রান্না করা ও কাঁচা—দুই রকমের খাবার খাওয়াতে হয়। তাদের জন্য ফ্রিজে কাঁচা খাবার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এক রকম করে রাখতে হবে। আবার রান্না করা খাবারও রাখতে হবে বিশেষ যত্নে। খাবার রাখার সময় ফ্রিজের তাপমাত্রার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী ফ্রিজের তাপমাত্রা বাড়াতে-কমাতে হবে।
‘শিশু, রোগী ও বয়স্ক মানুষের জন্য ফ্রিজে দুই থেকে সর্বোচ্চ তিন মাস পর্যন্ত মাংস সংরক্ষণ করতে পারবেন। এর বেশি হলে না খাওয়ানোই উচিত।’ এমনটাই বলেন র্যাংগস ইলেকট্রনিকস লিমিটেডের হেড অব মার্কেটিং খান মোহাম্মদ সাকিব উস সালেহীন। তিনি আরও জানান, ফ্রিজে রাখা যেকোনো খাবার খাওয়ানোর আগে পরখ করে দেখা উচিত। আবার ফ্রিজে রাখার পর যদি কখনো কোনো খাবারের বর্ণ, গন্ধ ও স্বাদ পরিবর্তন হয়ে যায়, তাহলে সে খাবার কারও খাওয়া উচিত নয়।
প্রতি বেলা রান্নার ঝামেলা থেকে রেহাই পেতে আমরা এখন রান্না করা খাবার বক্সে করে ফ্রিজে রেখে দিই। শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য যদি বক্সে করে রান্না করা খাবার রাখেন, তবে বক্সগুলোর মধ্যে কিছুটা জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে। এর ফলে ভেতরে বাতাস চলাচল করতে পারবে। অনেকে রোগীর জন্য মাসের পর মাস ডিপ ফ্রিজে মৌসুমি ফলমূল রেখে দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সংরক্ষণের নিয়মাবলি মেনে তারপর রাখতে হবে। কারণ, দীর্ঘদিন ফ্রিজে খাবার রাখলে খাবারের পুষ্টিগুণ নষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়ে। রোগীদের খাওয়ানোর জন্য আমরা বাঙ্গি, পেঁপে, তরমুজ—এগুলো কিনে ফ্রিজে রাখি। এতে এগুলোর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দ্রুত ভেঙে যায়। তাই এই ফলগুলো খোলামেলা জায়গায় রেখে সংরক্ষণ করতে হবে।
আধুনিক ফ্রিজগুলোতে শাকসবজি তাজা রাখার আলাদা ভাগ আছে। এতে সবজি অনেক দিন পর্যন্ত তাজা থাকে। তবে শাকটা ফ্রিজে বেশি দিন রাখা উচিত নয়। চেষ্টা করতে হবে এগুলো টাটকা খেয়ে ফেলতে। শাক যতই পুষ্টিগুণসম্পন্ন হোক না কেন, ফ্রিজে রাখা শাক শিশু ও বয়স্কদের খাওয়ানো উচিত নয়। রোগীকে পথ্য হিসেবে চিকিৎসক বিভিন্ন সবজি খেতে বলেন। সেই সবজি বাজার থেকে কিনে ফ্রিজে না উঠিয়ে বাইরে, আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে এমন জায়গায় রাখতে হবে। ফ্রিজ খাদ্যনিরাপত্তা দেয়। তাই একটু সচেতনভাবে ব্যবহার করলে সব বয়সী মানুষ নিরাপদে ফ্রিজের খাবার খেতে পারবেন। এটা স্বাস্থ্যের জন্য কোনো ঝুঁকি বয়ে আনে না।