রিহ্যাব আবাসন মেলা
মাঝারি আকারের ফ্ল্যাটের চাহিদা বেশি
প্রথম সারির কোম্পানিগুলো ১ কোটি টাকার কম দামে ফ্ল্যাট দিতে পারছে না।
রিহ্যাবের আবাসন মেলার প্রথম দিন আড়াই হাজার ক্রেতা-দর্শনার্থী এলেও দ্বিতীয় দিন সেই সংখ্যা আরও বেড়েছে। মেলায় আসা অধিকাংশ দর্শনার্থীই ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ বর্গফুটের মাঝারি আকারের অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট খুঁজেছেন। অংশগ্রহণকারী প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের কাছেই এ ধরনের ফ্ল্যাট কম-বেশি রয়েছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলমান আবাসন মেলায় অংশ নেওয়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার এমন তথ্য দিলেন। তাঁরা জানান, মেলায় নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ক্রেতা-দর্শনার্থী বেশি আসছেন। তাঁদের একটি অংশ এক কোটি টাকার কম এবং আরেকটি অংশ দুই কোটি টাকার কম দামের ফ্ল্যাট খুঁজছেন। তবে প্রথম সারির কোম্পানিগুলোর কাছে এক কোটি টাকার কম দামের ফ্ল্যাট নেই বললেই চলে। কারণ হিসেবে জমি ও নির্মাণসামগ্রীর উচ্চমূল্যের কথা উল্লেখ করেছে কোম্পানিগুলো।
অন্যতম শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি কম্প্রিহেনসিভ হোল্ডিংস ৪০টি আবাসন প্রকল্পের ২০০টির বেশি ফ্ল্যাট নিয়ে এসেছে। সিদ্ধেশ্বরী, ইকবাল রোড, পশ্চিম ধানমন্ডি, তেজতুরী বাজার, গ্রিন রোড, মালিবাগ ও পুরান ঢাকায় তাদের আবাসন প্রকল্পে ১ হাজার ২৫০ থেকে ২ হাজার ৯০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে। ফ্ল্যাটের দাম বর্গফুটপ্রতি ১০ থেকে ২২ হাজার টাকা। এ প্রতিষ্ঠানটির ফ্ল্যাটের সর্বনিম্ন দাম ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ধানমন্ডি ও শান্তিনগরে তাদের বাণিজ্যিক প্রকল্পও আছে।
কম্প্রিহেনসিভ হোল্ডিংসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক কাজী শামসুল আলম বলেন, ‘মেলায় মধ্যবিত্তরাই বেশি আসছেন। তাঁরা পৌনে দুই কোটি টাকার মধ্যে ফ্ল্যাট চাইছেন। আশা করছি, গত কয়েক মাসের বেচাবিক্রির খরা মেলায় কিছুটা হলেও কাটবে।’
আবাসন খাতের প্রথম দিকের প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড (ইএইচএল) গুলশান-২, ধানমন্ডি, আফতাবনগর, বনশ্রী ও নিকেতনে ছয়টি আবাসন প্রকল্পের ফ্ল্যাট বিক্রি করছে। এসব প্রকল্পে ২ হাজার ১২৯ থেকে শুরু করে ৩ হাজার ৯২২ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে। ফ্ল্যাটের দাম বর্গফুটপ্রতি ১২ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা। প্রতিষ্ঠানটির এই ছয় প্রকল্পে একটি ফ্ল্যাট কিনতে হলে কমপক্ষে আড়াই কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে।
ইস্টার্ন হাউজিংয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক মোস্তফা মহসিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পেশাজীবী ক্রেতারা মেলায় আসতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে দুই–তিনজন সম্ভাব্য ক্রেতাও পেয়েছি আমরা। আশা করছি, মেলার তৃতীয় দিনে আমরা ফ্ল্যাট বিক্রি করতে পারব।’
দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় আবাসন প্রতিষ্ঠান দ্য স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (এসইএল) ৪০টি আবাসন প্রকল্পে ২৫০টির বেশি ফ্ল্যাট নিয়ে মেলায় এসেছে। তাদের বসুন্ধরা, ধানমন্ডি, এলিফ্যান্ট রোড, গ্রিন রোড, মালিবাগ, মগবাজার, মোহাম্মদপুর, মহাখালী, শ্যামলী, তেজগাঁও, উত্তরা ও গেন্ডারিয়ায় প্রকল্প রয়েছে। ঢাকার বাইরে সাভার, কুমিল্লা ও খুলনায় আবাসন প্রকল্প করছে এসইএল। তাদের ফ্ল্যাটের আকার ৮০০ থেকে শুরু করে আড়াই হাজার বর্গফুট পর্যন্ত। প্রতি বর্গফুটের দাম ৪ হাজার ৯০০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। ঢাকায় কোটি টাকার নিচে ফ্ল্যাট দিতে না পারলেও সাভারে দিতে পারছে তারা। মেলায় প্রতি বর্গফুটে ৩০০ টাকা মূল্যছাড় দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
জানতে চাইলে এসইএলের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী (বিক্রয়) মো. ইমাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অভিজাত ফ্ল্যাটের বিক্রি কমেছে। তবে মাঝারি মানের ফ্ল্যাট কমবেশি বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার বাইরে কুমিল্লায় বিক্রি ভালো। আশা করছি, মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ফ্ল্যাটের বুকিং পাওয়া যাবে।’
আরেক শীর্ষস্থানীয় আবাসন প্রতিষ্ঠান আনোয়ার ল্যান্ডমার্ক ধানমন্ডি, উত্তর গুলশান, উত্তরা, বসুন্ধরা, আফতাবনগর, জলসিঁড়ি আবাসন ও গোপীবাগে ৩০টির বেশি আবাসন প্রকল্প নিয়ে এসেছে। তাদের ফ্ল্যাটের আকার ১ হাজার ১০০ থেকে ৫ হাজার বর্গফুট। এ ছাড়া শ্যামলীতে প্রতিষ্ঠানটির একটি কনডোমিনিয়াম প্রকল্প রয়েছে। সেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে।
আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের উপমহাব্যবস্থাপক (বিক্রয়) এস এম মাসুদ রানা বলেন, ‘ধানমন্ডি ও গুলশানের অভিজাত ফ্ল্যাটের ক্রেতারা খুব একটা মেলায় আসেন না। তবে পেশাজীবীরা আসছেন। আশা করছি, কিছু ফ্ল্যাটের বুকিং হবে।’
গত সোমবার শুরু হওয়া আবাসন মেলায় ১৭০টি কোম্পানি অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে দেড় শ আবাসন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আগামী শুক্রবার পর্যন্ত মেলা চলবে।