সাক্ষাৎকার

ডলারের কারণে বেড়ে গেছে আমদানি খরচ

সেলিম এইচ রহমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক, হাতিল
প্রশ্ন:

প্রথম আলো: দেশের আসবাব খাতে বর্তমানে বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড দাঁড়িয়ে গেছে। আসবাব খাতের ব্যবসার বর্তমান অবস্থা কী?

সেলিম এইচ রহমান: আপনি ঠিকই বলেছেন, দেশে এখন বেশ কয়েকটি আসবাব ব্র্যান্ড রয়েছে। নতুন নতুন ব্র্যান্ডও আসছে। এর ফলে ক্রেতারা তাঁদের বাজেটের মধ্যে আসবাব কিনতে পারছেন। অবশ্য ডলার–সংকট, লোডশেডিং ও কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় আসবাব খাতের ব্র্যান্ড ও নন-ব্র্যান্ডেড প্রতিষ্ঠানগুলো সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এদিকে মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মানুষ আসবাব কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। এককথায় বলতে গেলে, মূল্যস্ফীতির কারণে আসবাব খাতে কিছুটা হলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা, খুব দ্রুতই এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসব।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: দেশে ডলারের সংকট চলছে। আসবাব খাতে এ সংকটের কী ধরনের প্রভাব পড়েছে?

সেলিম এইচ রহমান: জাতীয় পর্যায়ের যেকোনো সংকটে শুধু কোনো একটি বিশেষ খাতেই প্রভাব পড়ে না। সবাইকে কোনো না কোনোভাবে এই সংকটের কারণে সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকে। তাই অন্যান্য শিল্পের মতো আসবাব খাতেও ডলার–সংকটের অনেকটা বেগ পোহাতে হচ্ছে। বাংলাদেশে বনায়ন অত্যন্ত সীমিত, যার কারণে আসবাব প্রস্তুতে প্রধান কাঁচামাল কাঠ আমরা জার্মানি থেকে আমদানি করি। আসবাব খাতের সংযোগ শিল্প গড়ে না ওঠার কারণে বিভিন্ন সরঞ্জাম থেকে শুরু করে ফিনিশিংয়ে ব্যবহৃত লেকারও আমদানি করতে হয়। তাই ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এসব কাঁচামাল আমদানিতে খরচ বেড়েছে। যার কারণে আসবাবের দামও বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন উদ্যোক্তারা। অন্যদিকে ডলার–সংকটের কারণে ঋণপত্র খুলতেও বিলম্ব হচ্ছে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: কাঠ, বোর্ড থেকে শুরু করে কলকবজা—সবই তো আমদানি করতে হয়। তাতে দেশে আসবাব তৈরিতে মূল্য সংযোজন কেমন হয়?

সেলিম এইচ রহমান: এটা সত্য যে কাঠ, লেকার, সরঞ্জাম ইত্যাদি আমরা আমদানি করি। তবে আসবাবের চাহিদা বাড়লে সংযোগ শিল্প গড়ে উঠবে। তৈরি পোশাকশিল্পের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে সরকারের নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। আমদানি শুল্ক কমলে উৎপাদন খরচ কমবে। তাতে পণ্যের দাম কমবে। বিশ্ববাজারেও আমাদের আসবাবের রপ্তানি বাড়বে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: দেশে আসবাবের ব্র্যান্ডের সম্ভাবনা কেমন দেখছেন?

সেলিম এইচ রহমান: দেশে আসবাবের বাজার কত বড়, তার কোনো সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই। আমাদের ধারণা, আসবাবের বাজার প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার। প্রায় ১০০ আসবাবের ব্র্যান্ড থাকা সত্ত্বেও দেশের আসবাব খাতের প্রায় ৬৫ শতাংশ বাজার এখনো নন–ব্র্যান্ডেড ছোট-মাঝারি প্রতিষ্ঠানের দখলে। তারপরও আমরা বলব, দেশের আসবাব খাতটি খুবই সম্ভাবনাময়। তার অন্যতম কারণ, উন্নত দেশের তুলনায় আমাদের উৎপাদনসংশ্লিষ্ট ব্যয় অনেক কম ও সহজলভ্য। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত এই প্রাপ্তিটি খুব ভালোভাবে কাজে লাগাতে পেরেছে। সে কারণে বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানিতে আমরা শক্ত অবস্থান নিতে পেরেছি। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে এই খাতে বিশেষ নজর দেওয়া হলে তৈরি পোশাকের মতো এই খাতটি অনেক বড় হতে পারে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: বাংলাদেশ থেকে আসবাব রপ্তানিতে হাতিল নেতৃত্ব দিচ্ছে। সামগ্রিকভাবে আসবাব রপ্তানি বাড়ছে না কেন?

সেলিম এইচ রহমান: বাংলাদেশের আসবাবের ব্র্যান্ড হিসেবে হাতিলই একমাত্র নিজস্ব ব্র্যান্ডের নামে প্রতিবেশী দেশ ভারতে ২৭টি বিক্রয়কেন্দ্র খুলেছে। পাশাপাশি ভুটান ও নেপালেও চালু হয়েছে হাতিলের বিক্রয়কেন্দ্র। এ ছাড়া হাতিল মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মতো বাজারেও আসবাব রপ্তানি করছে। আমাদের আসবাব আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করার পরও বিশ্ববাজারে সাফল্য না পাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, আমরা এখনো প্রতিযোগিতামূলক দামে পৌঁছাতে পারিনি। আমাদের আসবাব তৈরিতে ৫০ শতাংশ কাঁচামালই দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। এ জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে নানা ধরনের শুল্ক দিতে হয়। আমদানি পর্যায়ে আমরা যখন বিভিন্ন কাঁচামাল নিয়ে আসি, তখন অগ্রিম কর নেওয়া হয়। বছর শেষে অনেক কোম্পানি অগ্রিম কর ফেরত পেলেও এই খাতের ব্যবসায়ীরা তা পান না। তাই প্রস্তুত পণ্য হিসেবে আমাদের আসবাব বিশ্ববাজারে ভালো অবস্থান করতে পারছে না।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: হাতিল বাংলাদেশের শীর্ষ আসবাব ব্র্যান্ড। আপনারা নতুন কী করছেন?

সেলিম এইচ রহমান: হাতিল দেশের শীর্ষস্থানীয় আসবাব ব্র্যান্ড। মানসম্মত পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি ছাড়াও আমরা সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে কিছু কাজ করছি। এ জন্য আমাদের কারখানার শিল্পবর্জ্য পুনর্ব্যবহারের উপযোগী করে তুলেছি। কারখানায় কর্মরত কর্মীদের শারীরিক সুস্থতার বিষয়টি চিন্তা করে কেন্দ্রীয়ভাবে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য সেন্ট্রাল ডাস্ট কালেকটর সেটআপ করেছি। গ্রিন ইনিশিয়েটিভের অংশ হিসেবে গত বছর পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কারখানায় সৌরবিদ্যুৎ বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা সামাজিক, পরিবেশগত ও আর্থিক—সব দিক দিয়েই বিশ্ববাজারে নিজেদের অবস্থান সম্প্রসারণ করতে চাই। এ জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।