২৪ বছর ধরে আমদানির শীর্ষে সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার

এই সংবাদ ২০২৪ সালের ২০ জুলাই প্রথম আলোর ছাপা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। কিন্তু তখন দেশে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় এই সংবাদ সময়মতো অনলাইনে প্রকাশ করা যায়নি। ইন্টারনেট চালু হওয়ার পর এখন তা করা হলো।

প্রথম আলোর ফাইল ছবি

আমদানির পরিমাণে একটানা ২৪ বছর ধরেই শীর্ষে রয়েছে পণ্যটি। বছরে এই পণ্যটি যে পরিমাণে আমদানি হয়, তা স্তূপ করে রাখলে আস্ত একটি পাহাড়ে রূপ নেবে। এই পণ্য হলো সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল ক্লিংকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আমদানির তথ্য পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

এনবিআরের হিসাবে, সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ক্লিংকার আমদানি হয়েছে ২ কোটি ৫ লাখ টন। এই আমদানি ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় সামান্য কমলেও শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। আমদানির তালিকায় দ্বিতীয় শীর্ষ পণ্য কয়লা। গত অর্থবছরে কয়লার চেয়ে ক্লিংকার আমদানির পরিমাণ ছিল ৭৮ লাখ টন বেশি। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভাঙা পাথর। বিদায়ী অর্থবছরে ভাঙা পাথর আমদানি হয়েছে সোয়া কোটি টন।

সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, অবকাঠামো নির্মাণে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় সিমেন্ট। আবার সিমেন্ট তৈরির পাঁচটি কাঁচামালের মধ্যে ক্লিংকারই বেশি ব্যবহার করা হয়। এ কারণে এই শিল্পের কাঁচামাল আমদানি পরিমাণে বেশি হচ্ছে।

সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানির ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়। ১৯৯৫ সালের আগে দেশে দুটি কারখানা চালু ছিল। ফলে চাহিদা মেটাতে সরাসরি সিমেন্ট আমদানি হতো। এরপর দেশীয় উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসতে থাকেন। সেই সঙ্গে বাড়তে শুরু করে ক্লিংকার আমদানি। ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছর থেকে নিয়মিত ক্লিংকার আমদানি শুরু হয়। ২০০০-২০০১ অর্থবছরে প্রথম ক্লিংকার আমদানি অন্য সব পণ্যকে ছাড়িয়ে শীর্ষে জায়গা করে নেয়।

ক্লিংকারের আগে এই তালিকায় ছিল মূলত খাদ্যশস্য গম কিংবা চাল। খাদ্য বিভাগের হিসাবে, ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে গম আমদানি হয়েছিল ১৬ লাখ ৭১ হাজার টন, যা একক পণ্য হিসেবে ছিল শীর্ষে। এর এক বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে শীর্ষ আমদানি পণ্য ছিল চাল। সেবার চাল আমদানি হয়েছিল ৩০ লাখ ৬৪ হাজার টন।

এদিকে বর্তমানে দেশে যত পণ্য আমদানি হয়, তার ১৫ শতাংশই সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার। বিদায়ী অর্থবছরে ক্লিংকার আমদানিতে খরচ হয়েছে ১৩ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা। শিল্পের এই কাঁচামাল আমদানি থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ৩ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা।

সিমেন্ট খাতের উদ্যোক্তারা জানান, সিমেন্ট তৈরিতে পাঁচ ধরনের কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়। যার বেশির ভাগ আমদানিনির্ভর। কাঁচামাল পাঁচটি হলো ক্লিংকার, জিপসাম, স্ল্যাগ, চুনাপাথর ও ফ্লাই অ্যাশ। এই পাঁচ পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি ও ব্যবহৃত হয় ক্লিংকার। চুনাপাথরের সঙ্গে বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে উচ্চতাপে ক্লিংকার তৈরি করা হয়।