জুয়েলার্স সমিতি
সোনার অলংকার বদল ও বিক্রিতে মিলবে বেশি অর্থ
এত দিন অলংকারের ওজন থেকে ২০ শতাংশ বাদ দিয়ে মূল্য নির্ধারণ করত জুয়েলার্স। এখন ১৫ শতাংশ বাদ দেওয়া হবে।
দেশের বাজারে সোনার দাম এখন রেকর্ড উচ্চতায়। ভালো মানের প্রতি ভরি সোনা বিক্রি হচ্ছে ৮৪ হাজার ৩৩১ টাকায়, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। দফায় দফায় সোনার দাম বেড়ে যাওয়ায় যাঁরা অলংকার তৈরির পরিকল্পনা করছিলেন, তাঁরা পড়েছেন মহা দুশ্চিন্তায়। জুয়েলার্স ব্যবসায়ীরাও ক্রেতার দেখা পাচ্ছেন না। তবে যাঁদের ঘরে তুলনামূলক কম দামে কেনা অলংকার আছে, তাঁরা আছেন মধুর সমস্যায়। বিক্রি করে দেবেন কি না, সেই প্রশ্ন হয়তো উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে সময়-সময়।
যাঁরা সোনার পুরোনো অলংকার বিক্রির চিন্তাভাবনা করছেন, তাঁদের জন্য সুখবর দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি বা বাজুস। আগে অলংকারের ওজন থেকে ২০ শতাংশ বাদ দিয়ে মূল্য নির্ধারণ করতেন জুয়েলার্সের মালিকেরা। এখন থেকে ওজনের ১৫ শতাংশ বাদ দিতে নির্দেশ দিয়েছে সমিতি। একইভাবে অলংকার পরিবর্তনেও আগে ওজন থেকে ১০ শতাংশ বাদ দিয়ে হিসাব করা হতো। সেটিও কমিয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে।
জুয়েলার্স সমিতির স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিংয়ের চেয়ারম্যান এম এ হান্নান আজাদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল সোমবার বিষয়টি জানানো হয়েছে। এ ছাড়া সোনার অলংকার বিক্রির সময় ক্রেতার কাছ থেকে প্রতি গ্রামে কমপক্ষে ৩০০ টাকা মজুরি নিতে সদস্য প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ করেছে সমিতি।
‘সোনার দাম সাধারণ মানুষের আওতার বাইরে চলে গেছে।সোনার অলংকার কিনতে ক্রেতাদের উদ্বুদ্ধ করতেই এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে।যদিও আমাদের ব্যবসায়ীদের লোকসান হবে।’এম এ হান্নান আজাদ
তাহলে পুরোনো অলংকার বিক্রি করলে এখন মুনাফা কত দাঁড়াচ্ছে? সাধারণত পুরোনো অলংকার জুয়েলার্সে বিক্রি করতে গেলে তারা ওজন করার পর তা কোন ক্যারেটের সোনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হবে। তারপর অলংকারটির বর্তমান ওজন থেকে ১৫ শতাংশ বাদ দিয়ে মূল্য নির্ধারণ করা হবে।
ধরুন, আপনি কয়েক বছর আগে ৪৩ হাজার টাকায় ২২ ক্যারেটের এক ভরি ওজনের অলংকার কিনেছিলেন। এখন সেটি বিক্রি করতে গেলে আপনি ৭১ হাজার ৬৮১ টাকা পাবেন। তাতে ভরিতে আপনার মুনাফা হবে ২৮ হাজার ৬৮১ টাকা। ২১ ও ১৮ ক্যারেটের অলংকার হলে মুনাফা ভিন্ন হবে।
হঠাৎ করে ক্রেতাদের সুবিধা হয়, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ কী, জানতে চাইলে জুয়েলার্স সমিতির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাকা সোনার দাম হিসাবে নিয়ে পুরোনো অলংকারের মূল্য নির্ধারণ করা হতো। এখন সোনার বারের হিসাব আমলে নেওয়া হবে। পাকা সোনায় বিশুদ্ধতার পরিমাণ ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ। বারের ক্ষেত্রে তা ৯৯ দশমিক ৯৯।
ফলে পাকা সোনার চেয়ে বারের দাম ১ থেকে ২ হাজার টাকা বেশি। সে কারণেই পুরোনো অলংকারের ওজন থেকে ২০ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের ৫০০-৬০০ টাকা লোকসান গুনতে হবে।
জানতে চাইলে এম এ হান্নান আজাদ গতকাল রাতে প্রথমআলোকে বলেন, ‘সোনার দাম সাধারণ মানুষের আওতার বাইরে চলে গেছে।সোনার অলংকার কিনতে ক্রেতাদের উদ্বুদ্ধ করতেই এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে।যদিও আমাদের ব্যবসায়ীদের লোকসান হবে।’