যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউতে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমছে
চলতি বছর বড় দুই বাজার—যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) ভালো করতে পারতে পারছে না বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত। বছরের প্রথম সাত মাসে (জানুয়ারি-জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ১০ দশমিক ২৮ শতাংশ। আর ইইউতে কমেছে ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান কার্যালয় (ইউরোস্ট্যাট) ও ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। প্রসঙ্গত, একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজার। মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির ১৭-১৮ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে অঞ্চল হিসেবে তৈরি পোশাক রপ্তানির অর্ধেকের গন্তব্য ইইউ।
ইউরোস্ট্যাট ও অটেক্সার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে তৈরি পোশাকের আমদানি ৫ দশমিক ২২ শতাংশ কম করেছেন ইইউর ব্যবসায়ীরা। এই সময়ে কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও মরক্কো ছাড়া শীর্ষস্থানে থাকা বাকি সাত দেশের রপ্তানি কমেছে। এর মধ্যে আছে চীন, বাংলাদেশ, তুরস্ক, ভারত, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়া।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই—এই সাত মাসে ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ তৈরি পোশাক কম আমদানি করেছেন। শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারকের মধ্যে কম্বোডিয়া ও পাকিস্তানের তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়লেও বাকিদের কমেছে। রপ্তানি কমার তালিকায় আছে চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, মেক্সিকো, হন্ডুরাস ও কোরিয়া।
ইইউর বাজারে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ে ১ হাজার ১১১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ১৬৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। তার মানে চলতি বছর এই বাজারে রপ্তানি কমেছে ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ইইউতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ চীন ও ভারতের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমার হার তুলনামূলক কম। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে চীন ১ হাজার ২৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। তাদের রপ্তানি কমেছে ৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ। চীন এই বাজারে শীর্ষ রপ্তানিকারক। অন্যদিকে ভারতের রপ্তানি কমেছে ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে বাংলাদেশ ৪১০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয় ৪৫৭ কোটি ডলারের পোশাক। তার মানে চলতি বছর রপ্তানি কমেছে ১০ দশমিক ২৮ শতাংশ। গত বছর এই বাজারে ৭২৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। বর্তমানে বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া তৈরি পোশাকের ৯ শতাংশ দখলে নিয়ে বাংলাদেশ তৃতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ।
যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীন শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ৮৭৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে দেশটি। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ কম। এই বাজারে দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক ভিয়েতনাম চলতি বছরের সাত মাসে ৮০৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। গত বছরের একই সময়ে তাদের রপ্তানি ছিল ৮২২ কোটি ডলারের পোশাক। অর্থাৎ চলতি বছর দেশটির রপ্তানি কমেছে দেড় শতাংশ।
কোটা আন্দোলন ও তারপর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে জুলাই ও আগস্ট মাসে তৈরি পোশাকে উৎপাদন ও রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়। চলতি মাসে সাভারের আশুলিয়া ও গাজীপুরের বেশ কিছু কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়। এখনো কিছু কারখানা বন্ধ আছে। সব মিলিয়ে দেশে তিন মাস ধরে চলমান ঘটনার কারণে আগামী মৌসুমের ক্রয়াদেশ কমবে—এমন আশঙ্কা করছেন তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি আসিফ আশরাফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমার প্রবণতাটি আরও কিছুদিন থাকতে পারে। আশুলিয়ার অনেক কারখানায় গত ২০-২২ দিন উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। আশুলিয়ার কারখানাগুলোর রপ্তানি শ্রীলঙ্কার মোট রপ্তানির চেয়েও বেশি। তা ছাড়া গত তিন মাসে দেশের বিভিন্ন ঘটনায় বহির্বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তির ক্ষতি হয়েছে। ক্রেতাদের মধ্যে আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তাই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে শিল্পকারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।’