বড় হচ্ছে দেশীয় টাইলসের বাজার

বর্তমানে টাইলসের বাজারে দেশীয় উদ্যোক্তাদের অংশীদারত্ব প্রায় ৮৬ শতাংশ। দেড় দশক আগেও এ বাজার ছিল আমদানিনির্ভর।

দেশে গত কয়েক বছরে দ্রুত বর্ধনশীন খাতগুলোর একটি সিরামিকশিল্প। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। রুচিরও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। অন্যদিকে আমদানিনির্ভরতা কমাতে দেশীয় উদ্যোক্তারা সিরামিক খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করছেন। এতে দেশীয় কোম্পানিগুলো এখন মানসম্মত টাইলস দেশেই তৈরি করছে। তাতে সব মিলিয়ে প্রতিবছর দেশের সিরামিক পণ্যের বাজার বড় হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেড় দশক আগেও দেশের টাইলসের বাজার ছিল আমদানিনির্ভর। তবে সেই চিত্র বদলেছে। এখন বাংলাদেশের টাইলসের বাজার প্রায় পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো।

বর্তমানে টাইলসের বাজারে দেশীয় উদ্যোক্তাদের অংশীদারত্ব প্রায় ৮৬ শতাংশ। অর্থাৎ দেশে যত টাইলস বিক্রি হয়, তার ৮৬ শতাংশই দেশি কোম্পানির তৈরি। ফলে গ্রাহকেরাও দেশীয় টাইলস পণ্য কিনতে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন।

রাজধানীর হাতিরপুল এলাকায় একটি টাইলস বিক্রির দোকানে গত শনিবার কথা হয় বেইলি রোডের বাসিন্দা মনজুরে এলাহীর সঙ্গে। পেশায় চিকিৎসক এই ব্যক্তি বাসার রান্নাঘরের জন্য পছন্দের টাইলস খুঁজছেন। জানতে চাইলে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘পছন্দের টাইলস খুঁজতে কয়েকটি বিক্রয়কেন্দ্রে ঘুরে ঘুরে দেখছি। প্রত্যাশা ও দরদামে যেটা মানানসই হবে, সেটাই কিনব।’

বাংলাদেশ সিরামিক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিসিএমইএ) তথ্য অনুযায়ী, দেশে সিরামিকের উপখাত হচ্ছে তিনটি—তৈজসপত্র, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার। এসব পণ্য উৎপাদনে ৭০টি কারখানা রয়েছে। তার মধ্যে ৩২টি টাইলস, ২০টি টেবিলওয়্যার ও ১৮টি স্যানিটারিওয়্যার উৎপাদনের কারখানা।

বিসিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, দেশে সিরামিক পণ্যের বাজারের আকার প্রায় ৭ হাজার ২৫০ কোটি টাকার। এর মধ্যে বিক্রির দিক থেকে সবচেয়ে বড় বাজার টাইলসের। গত অর্থবছরে ৫ হাজার ২১৯ কোটি টাকার টাইলস বিক্রি হয়। এর মধ্যে দেশীয় কোম্পানির হিস্যা ছিল ৪ হাজার ৫০৬ কোটি টাকার।

জানা গেছে, দেশীয় সিরামিকস তথা টাইলস শিল্পে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করেন। এর মধ্যে নারী কর্মীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। খাতটিতে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে দেশীয় কোম্পানিগুলো বছরে ২১ কোটি বর্গমিটার টাইলস উৎপাদন করতে পারছে। উৎপাদন সক্ষমতা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।

তিন দশকে দেশীয় টাইলস

প্রায় সাড়ে ছয় দশক আগে এ ভূখণ্ডে সিরামিক পণ্যের উৎপাদন শুরু হয়। তবে টাইলসের যাত্রাটা শুরু হয় আরও পরে। ১৯৯৩ সালে মধুমতি সিরামিকস দেশে প্রথম টাইলস কারখানা স্থাপন করে। তারপর গত তিন দশকে একে একে বাজারে আসে আরএকে, সিবিসি, মীর, গ্রেটওয়াল, আকিজ, স্টার, ডিবিএল, শেলটেক, ফ্রেশ, তুষার, বিএইচএলসহ বেশ কিছু কোম্পানি।

সিরামিক খাতের বেশির ভাগ বিনিয়োগ এসেছে ২০০০ সালের পর, অর্থাৎ গত ২২ বছরে। এই খাতের কারখানাগুলোর মধ্যে ৬০টিই গত দুই দশকে প্রতিষ্ঠিত। এদের বেশির ভাগ কারখানা ইউরোপীয় ও জাপানি প্রযুক্তি ব্যবহার করে। ফলে গুণগত দিক দিয়ে ভালো মানের পণ্য তৈরি করতে পারছেন দেশীয় উদ্যোক্তারা। তবে দেশে সিরামিকের বাজার বৃদ্ধির পেছনে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন নীতিসহায়তাও সহায়ক ছিল বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

পাঁচ বছরের তুলনা

২০১৭-১৮ অর্থবছরে স্থানীয় বাজারে ৩ হাজার ১৪৩ কোটি টাকার দেশীয় টাইলস পণ্য বিক্রি হয়। তার বিপরীতে আমদানি হয় ১ হাজার ১৬৯ কোটি টাকার। ২০২১-২২ অর্থবছরে স্থানীয় বাজারে দেশীয় টাইলস বিক্রি বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৫০৬ কোটি টাকায়। একই অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ কমে হয় ৭১৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে দেশীয় টাইলসের বাজারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৩ শতাংশ বা প্রায় সাড়ে ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকার। বিপরীতে আমদানি কমেছে ৩৯ শতাংশ বা প্রায় ৪৫৬ কোটি টাকার।

জানতে চাইলে গ্রেটওয়াল সিরামিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামসুল হুদা বলেন, দেশের অবকাঠামো খাতে অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। মানুষজন এখন পাকা বাড়ি তৈরির চিন্তা করেন। তাই টাইলসের বর্তমান চাহিদা আরও কিছুদিন থাকবে। ফলে টাইলস উৎপাদনে যদি আরও কিছু কারখানা আসে, তাহলেও সমস্যা হবে না।