কত সক্ষমতার এসি কিনবেন

নতুন এসি কেনার আগে তার সক্ষমতা ও কক্ষের আকার বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। নইলে এসি টিকবে না।

এসিপ্রতীকী ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে দুই শয়নকক্ষের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন সরকারি চাকরিজীবী সাজিদুল ইসলাম। তাঁর পরিবারে সদস্যসংখ্যা ৫। গরমের তীব্রতা বাড়ায় তিনি দুই কক্ষের জন্য দুটি শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু কোন কক্ষের জন্য কত সক্ষমতার এসি কিনবেন, তা নিয়ে ভাবনায় পড়েছেন তিনি। 

সাজিদুল ইসলামের মতো যাঁরা নতুন করে এসি কেনার কথা ভাবছেন, তাঁদের মনেও হয়তো নানা ভাবনা রয়েছে। যেমন কোন সক্ষমতার এসি কিনবেন, কোন ব্র্যান্ডের এসি ভালো; কিংবা এসির দরদাম কেমন ইত্যাদি। 

নতুন এসি কেনার আগে কক্ষের আকার ও যন্ত্রটির সক্ষমতা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকসের সেবা (সার্ভিস) বিভাগের প্রধান এ এস এম রোকনুজ্জামান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপনি যদি এসিটি ভালো রাখতে ও দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করতে চান, তবে এসির সঠিক সক্ষমতা নির্বাচন করা অপরিহার্য। এসি কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরপরই কত টনের এসি কিনবেন, সেটি ভাবতে হয়।’ 

এই টন মানে কিন্তু এসির ওজন নয়। মূলত টন হলো একটি ইউনিট। টন বলতে এক দিনে এক টন বরফ গলানোর সমপরিমাণ তাপক্ষমতাকে বোঝায়। অর্থাৎ যে তাপ দিয়ে দিনে দেড় টন বরফ গলানো যায়, একটি দেড় টন এসি দিনে সেই পরিমাণ তাপ অপসারণ করতে পারে। আরও সহজ করে বললে, এক টন বরফ এক ঘণ্টায় একটি ঘরের তাপমাত্রা যতটা ঠান্ডা করবে, এক টন এসির কার্যক্ষমতাও একই। 

সুতরাং কক্ষের আকার যত বড় হবে, এসিকে তত বেশি শীতল করার ক্ষমতা থাকতে হবে। অর্থাৎ বেশি টন সক্ষমতার এসি প্রয়োজন হবে। 

আপনি কোন শহরে বাস করছেন, আপনার কক্ষের আকার, সূর্যের আলোর সংস্পর্শে থাকা দেয়ালের সংখ্যা, দেয়ালের ধরন, কক্ষের অবস্থান (সর্বোচ্চ তলায় নাকি অন্য কোনো তলায়), দরজা-জানালার সংখ্যা, বাসিন্দার সংখ্যা প্রভৃতি বিষয়ের ওপর কত সক্ষমতার এসি প্রয়োজন হবে, তা নির্ভর করে। 

ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট বা বিটিইউ হলো তাপের একক। এসির সক্ষমতা বা টনের হিসাব পরিমাপে এটি ব্যবহার করা হয়। এক টনের একটি এসি প্রতি ঘণ্টায় ঘর থেকে ১২ হাজার বিটিইউ তাপ শোষণ করতে পারে। এসির সক্ষমতা যত বেশি, তত বেশি ঠান্ডা করার ক্ষমতা থাকে। 

অবশ্যই ঘরের আয়তনের সঙ্গে মিল রেখে এসির সক্ষমতা ঠিক করা উচিত। যে ঘরে চার টনের এসি প্রয়োজন, সেখানে এক টনের এসি লাগালে ঘর সহজে ঠান্ডা হবে না এবং আর্দ্রতা বেশি থাকবে। আবার ছোট ঘরের জন্য বড় সক্ষমতার এসি স্থাপন করা হলে কক্ষটি বেশি ঠান্ডা হবে। তাতে ব্যবহারকারীদের ঠান্ডাজনিত অসুস্থতা তৈরি হতে পারে। 

গ্রি ব্র্যান্ডের এসির পরিবেশক প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রোমার্টের ন্যাশনাল সেলস ম্যানেজার মো. জুলহক হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত ১০০ থেকে ১২০ বর্গফুটের ঘরে এক টনের এসি যথেষ্ট। আর ১২০ থেকে ১৫০ বর্গফুট ঘরের জন্য প্রয়োজন হয় দেড় টন এসি। পাশাপাশি ২৫০ বর্গফুট পর্যন্ত আয়তনের ঘরের জন্য দুই টনের এসি কেনা ভালো। ঘরের আকার যদি ২৫১ থেকে ৪০০ বর্গফুট আয়তনের হয়, সে ক্ষেত্রে গ্রাহক আড়াই টনের এসি কিনতে পারেন। 

জুলহক জোসাইন বলেন, এসব হিসাব শুধু আবাসিক ভবনের জন্য। শিল্প খাতে ব্যবহারের এসির সক্ষমতা ভিন্ন হয়। 

কক্ষের ধরন অনুসারে এসির সক্ষমতা পরিমাপের জন্য বিভিন্ন কোম্পানি অনলাইনে ‘টন ক্যালকুলেটর’ সুবিধা রেখেছে। এই ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে উপযুক্ত সক্ষমতার এসি কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। 

বিক্রেতারা বলছেন, এসি কেনার সময় আকারের পাশাপাশি ভালো ব্র্যান্ড যাচাই-বাছাই করে নেওয়া উচিত। দাম ও মানের পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর বিক্রয়-পরবর্তী সেবা এবং আপনার নিকটস্থ এলাকায় তাদের সেবাকেন্দ্র (সার্ভিস সেন্টার) আছে কি না, তা জেনে নেওয়া প্রয়োজন।