দেশে সংযোজিত হয় স্কুটার, বিক্রি বাড়ছে
থাইল্যান্ডে প্রায় সাত কোটি জনসংখ্যার প্রতি পাঁচজনের একজন মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। তবে সেখানে জনপ্রিয় স্কুটার। একই চিত্র ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোতে। বাংলাদেশেও এখন স্কুটার জনপ্রিয় হচ্ছে।
একসময় স্কুটারকে শুধু নারীদের বাহন হিসেবে বিবেচনা করা হতো। বিজ্ঞাপনেও দেখা যেত নারীদের ছবি। কিন্তু সেই ধারণা এখন পাল্টেছে। নারী-পুরুষ স্কুটার চালানোর দিকে ঝুঁকছেন।
বিপণনকারী কোম্পানিগুলো বলছে, দেশেই এখন স্কুটার সংযোজন হচ্ছে। এতে দাম কমছে। আর সাধারণ মোটরসাইকেলের তুলনায় স্কুটার চালানো সহজ ও আরামদায়ক। তাই শহরে চলাচলে স্কুটার কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকে। কোম্পানিগুলোর প্রত্যাশা, ভবিষ্যতে স্কুটারের বাজার সাধারণ মোটরসাইকেলের মতোই বড় হবে।
ভারতীয় ব্র্যান্ড টিভিএসের মোটরসাইকেল ও স্কুটার বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান টিভিএস অটো বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বিপ্লব কুমার রায় প্রথম আলোকে বলেন, স্কুটার তৈরি করতে কারখানায় আলাদা ‘সেটআপে’র (যন্ত্র ও সরঞ্জামে তৈরি ব্যবস্থা) প্রয়োজন হয়। টিভিএস সেই ব্যবস্থা করে দুটি মডেলের স্কুটার তৈরি করছে।
মোটরসাইকেল ও স্কুটার—দুটোই দুই চাকার বাহন। তবে স্কুটারে ‘অটো গিয়ার’ থাকে। মানে হলো সাধারণ মোটরসাইকেলের মতো বারবার ‘ক্লাচ’ চেপে ‘গিয়ার’ পাল্টাতে হয় না। সামনে দুই পা রাখার মাঝে বেশ খানিকটা ফাঁকা জায়গা থাকে। কারণ, স্কুটারের ইঞ্জিন ও তেলের ট্যাংক পেছনে থাকে। স্কুটার ওজনে হালকা।
কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে ভারতীয় ব্র্যান্ড টিভিএস ও হিরো, জাপানি ব্র্যান্ড সুজুকি এবং দেশীয় ব্র্যান্ড রানারের স্কুটার সংযোজনের কারখানা রয়েছে। বাকিরা সম্পূর্ণ তৈরি অবস্থায় (সিবিইউ) স্কুটার আমদানি করে বিক্রি করে।
সিবিইউ অবস্থায় আমদানি করলে শুল্ক–করের ভার দাঁড়ায় ১৫৩ শতাংশের মতো। মানে হলো, বিদেশে দাম যদি ১ লাখ টাকা হয়, তার ওপর শুল্ক–কর বসবে ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। তবে সম্পূর্ণ বিযুক্ত অবস্থায় (সিকেডি) আমদানি করলে করভার দাঁড়ায় ৮৯ শতাংশের মতো।
দেশে যদি স্কুটারের চাহিদা বাড়ে, তাহলে কোম্পানিগুলো স্কুটারের চেসিস (কাঠামো) ও যন্ত্রাংশ তৈরি শুরু করবে। এতে শুল্ক–করের হার ৩০ থেকে ৪২ শতাংশের মধ্যে নেমে আসবে। দামও কমানোর সুযোগ তৈরি হবে।
ব্যবসায়ীদের হিসাব অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে ১ হাজার ৫৭৯টি, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪ হাজার ৫৪৯টি এবং সর্বশেষ অর্থবছরের ১১ মাসে (২০২২-২৩) ৭ হাজারের কিছু বেশি স্কুটার বিক্রি হয়েছে। বাজারে এখন অন্তত ১০টি মডেলের স্কুটার পাওয়া যায়। এগুলো ৫০ থেকে ১২৫ সিসি পর্যন্ত হয়। আর দাম ৭০ হাজার থেকে শুরু করে প্রায় সোয়া ৪ লাখ টাকা।
মোটরসাইকেল ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ১৯৮০–এর দশকে বাংলাদেশে সাধারণ মোটরসাইকেলের মতোই জনপ্রিয় ছিল স্কুটার। বিশেষ করে ইতালীয় কোম্পানি ভেসপার স্কুটার বেশি বিক্রি হতো। অনেকেই স্কুটার মানেই ভেসপা বলে জানতেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অভিজ্ঞতায় প্রথম দিনে সাধারণ মোটরসাইকেলের বিক্রি বাড়ে; পরে স্কুটারের জনপ্রিয়তা পায়।
র্যানকন মোটরবাইকস লিমিটেডের ডিভিশনাল ডিরেক্টর শোয়েব আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ায় স্কুটার খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে স্কুটার জনপ্রিয় হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
কেউ কেউ এখন সাধারণ মোটরসাইকেল ছেড়ে স্কুটার চালানো শুরু করেছেন। তাঁদের একজন ভাস্কর তানভীর মাহমুদ। তিনি ২০০০ সালে মোটরসাইকেল ব্যবহার শুরু করেন। ২০২০ সালে সাধারণ মোটরসাইকেল ছেড়ে স্কুটার কেনেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণ মোটরসাইকেলের তুলনায় শহরে স্কুটার চালানো আরামদায়ক। পেশাগত কারণে তাঁকে অনেক জিনিস বহন করতে হয়, যেটি স্কুটারে সহজ।
দুই চাকার যান
সাধারণ মোটরসাইকেলের মতো বারবার ‘ক্লাচ’ চেপে ‘গিয়ার’ পাল্টাতে হয় না। তাই স্কুটার চালানো সহজ।