বিজিএমইএ পরিচালনায় ১০ সদস্যের সহায়ক কমিটি
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ পরিচালনায় সহায়ক কমিটি গঠন করেছেন সংগঠনটিতে সরকার নিযুক্ত প্রশাসক। গতকাল বৃহস্পতিবার গঠিত এই কমিটিতে সংগঠনের নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরামের পাঁচজন করে প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।
সহায়ক কমিটিতে স্থান পাওয়া সম্মিলিত পরিষদের পাঁচ সদস্য হলেন ক্ল্যাসিক ফ্যাশন কনসেপ্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শহিদউল্লাহ আজিম, মিসামি গার্মেন্টসের এমডি মিরান আলী, উর্মি গার্মেন্টসের এমডি আসিফ আশরাফ, এম এস ওয়্যারিং অ্যাপারেলসের এমডি আ ন ম সাইফুদ্দিন ও শাশা গার্মেন্টসের এমডি শামস মাহমুদ। এই পাঁচজনই বিভিন্ন সময় বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন।
সহায়ক কমিটিতে স্থান পাওয়া ফোরামের প্রতিনিধিরা হলেন অনন্ত ক্লথিংয়ের এমডি এনামুল হক খান, ক্লিফটন ফ্যাশনের পরিচালক এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সফটেক্স কটনের এমডি রেজওয়ান সেলিম, এমিটি ডিজাইনের এমডি মো. শিহাবুদ্দোজা এবং অনন্ত অ্যাপারেলসের এমডি শরীফ জহির।
সহায়ক কমিটি গঠনের অফিস স্মারকে বলা হয়েছে, বাণিজ্য সংগঠন আইনের আলোকে বিজিএমইএর দায়িত্বে থাকা প্রশাসককে তাঁর কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করতে সংগঠনটির সদস্যদের সমন্বয়ে এই সহায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার (২০ অক্টোবর) একাধিক অভিযোগে বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেনকে প্রশাসক পদে বসায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তারপর দিন অর্থাৎ সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব বুঝে নেন তিনি।
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, চট্টগ্রাম চেম্বার, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) পর্ষদ ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় বিজিএমইএতেও প্রশাসক বসানো হয়। মূলত বিদায়ী সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী, এমনকি আওয়ামী লীগের পদধারী ব্যক্তিও এই সংগঠনগুলোতে নেতৃত্ব ছিলেন।
বিজিএমইএর পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন-২ শাখা আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছে, গত ২৪ আগস্ট এস এম মান্নান সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করার পর পর্ষদ পুনর্গঠন করা হলেও সেটি ছিল ত্রুটিপূর্ণ। এ ছাড়া তৈরি পোশাকশিল্পের সাম্প্রতিক অস্থিরতা ও শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে পর্ষদ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। মূলত এসব অভিযোগে পর্ষদ ভেঙে ১২০ দিনের মধ্যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন পর্ষদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বিজিএমইএর নির্বাচনকেন্দ্রিক দুই জোট সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম। গত ১৫ বছরে একবার ছাড়া সব মেয়াদেই সম্মিলিত পরিষদ সংগঠনটির নেতৃত্ব দিয়েছে। সম্মিলিত পরিষদের নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম এবং সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদী ও শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এবং আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান। প্রভাবশালী এই জোট বিজিএমইএর গত মার্চের নির্বাচনে সব কটি পদে বিজয়ী হয়। আর সভাপতি হন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান। যদিও ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর তাঁকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা মামলাও হয়েছে।
বিজিএমইএর পর্ষদ ভেঙে দিতে ক্রীড়নকের ভূমিকায় ছিলেন সংগঠনটির নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট ফোরামের নেতারা। তাঁরা রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সংগঠনের সভাপতিসহ পর্ষদের অন্য সদস্যদের পদত্যাগের দাবি তোলেন। ৭ আগস্ট পর্ষদের ওপর অনাস্থা জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতিকে স্মারকলিপি দেয় ফোরাম নেতারা। ওই দিন সম্মিলিত পরিষদের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের হট্টগোলও হয়। গত মার্চে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগে সংগঠনটির পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার দাবিতে গত ১৯ আগস্ট বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের মহাপরিচালককে চিঠি দেয় ফোরাম নেতারা। পরে ফোরামের নেতারা পর্ষদ ভেঙে ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে একটি অন্তর্বর্তী পর্ষদ গঠনের চেষ্টা করেন। তবে সম্মিলিত পরিষদের নেতারা রাজি না হওয়ায় প্রশাসক বসানোর সিদ্ধান্ত হয়।