জুলাই ও আগস্টে পণ্য রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে

পোশাক কারখানাফাইল ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলন, কারফিউ জারি ও ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং ভয়াবহ বন্যার পরও চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই ও আগস্টে পণ্য রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে। এর মধ্যে জুলাইয়ে প্রায় ৩ শতাংশ ও আগস্টে প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ বেড়েছে রপ্তানি। এ দুই মাসে মোট ৭৮৯ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩২ কোটি ডলার বেশি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে পণ্য রপ্তানির এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। এই হিসাবের মধ্যে অবশ্য রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) প্রচ্ছন্ন রপ্তানি এবং স্যাম্পল বা নমুনা রপ্তানির তথ্যও সংযুক্ত আছে। যদিও পরিমাণটি কম।

এনবিআরের তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৩৮২ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই মাসে ছিল ৩৭১ কোটি ডলার। তার মানে গত জুলাইয়ে রপ্তানি বেড়েছে ২ দশমিক ৯৬ শতাংশ বা ১১ কোটি ডলার। অন্যদিকে আগস্টে ৪০৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়, যা গত বছরের একই মাসে ছিল ৩৮৬ কোটি ডলার। অর্থাৎ সদ্য সমাপ্ত আগস্ট মাসে পণ্য রপ্তানি ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ বা ২১ কোটি ডলার বেড়েছে।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, পরিমাণের দিক থেকে জুলাইয়ে মোট ৫৩ কোটি কেজি ও আগস্টে ৫৭ কোটি কেজি পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছরে এ দুই মাসে রপ্তানি হয়েছে যথাক্রমে ৫১ কোটি ৬০ লাখ কেজি ও ৫৩ কোটি ৮০ লাখ কেজি পণ্য।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুলাইয়ে হঠাৎ প্রকৃত পণ্য রপ্তানির ভিত্তিতে লেনদেনের ভারসাম্যের তথ্য প্রকাশ করে। এর ফলে পণ্য রপ্তানির হিসাবে বড় ধরনের গরমিলের তথ্য উঠে আসে। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) দীর্ঘদিন ধরে রপ্তানির হিসাব প্রকাশ করলেও সে অনুযায়ী দেশে আয় আসছিল না। এ নিয়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা থেকেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে, এত রপ্তানি হয়নি। তাই আয় বেশি আসার যৌক্তিকতা নেই। এখন থেকে প্রকৃত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করা হবে।

গত দুই মাসে আন্দোলন–সংগ্রাম ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে বারবার উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরও বন্ধ ছিল। ফলে রপ্তানি বৃদ্ধির তথ্য আমাদের কাছে সঠিক বলে মনে হয় না
মোহাম্মদ হাতেম, সভাপতি, বিকেএমইএ

এরপর থেকে ইপিবি পণ্য রপ্তানির হিসাব প্রকাশ করা বন্ধ রেখেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুন মাস পর্যন্ত রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪০ দশমিক ৮১ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৮১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি তার আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ কম।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৩ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৩৩৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। যদিও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) আগে বলেছিল, ওই অর্থবছরে রপ্তানি হয় ৫৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের পণ্য। তার মানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রকৃত পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ইপিবির দেওয়া হিসাবের তুলনায় ১ হাজার ২২০ কোটি ডলার কম।

এনবিআরের হিসাবের চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকৃত রপ্তানি কম হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক গত মাসে পৃথক এক প্রতিবেদনে এনবিআরের তথ্য দিয়ে বলেছে, গত অর্থবছরে ৪৪ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন অথবা ৪ হাজার ৪৪৭ কোটি ৪৯ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০২ কোটি ডলার বা ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম।

জুলাইয়ের শুরু থেকে দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। ওই মাসের মাঝামাঝি সময়ে আন্দোলন সহিংস আকার ধারণ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৯ জুলাই কারিফিউ জারি করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। তখন কারখানার উৎপাদনের পাশাপাশি রপ্তানিও বাধাগ্রস্ত হয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আবারও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হয়। পরবর্তী সময়ে দেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক কয়েক দিন বন্ধ থাকায় পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়।

এদিকে জুলাই ও আগস্টে রপ্তানি বৃদ্ধির তথ্য বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেন নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত দুই মাসে আন্দোলন–সংগ্রাম ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে বারবার উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরও বন্ধ ছিল। ফলে রপ্তানি বৃদ্ধির তথ্য আমাদের কাছে সঠিক বলে মনে হয় না।’