বড় বাজারের সঙ্গে নতুন বাজারেও পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধির গতি কম
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও কানাডার মতো প্রচলিত বড় বাজারের সঙ্গে নতুন বাজারেও তৈরি পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধির গতি কমেছে। এতে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসে পোশাকের সামগ্রিক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ। গত অর্থবছর শেষে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ শতাংশের বেশি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণ করে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এমন তথ্য জানিয়েছে। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৮৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছরের ১২ মাসে পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলারের।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রায় ৫০ শতাংশের গন্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই বাজারে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের ১১ মাস শেষে এই বাজারে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি মাত্র ২ শতাংশ। ইইউর শীর্ষ গন্তব্য জার্মানিতে এখন পর্যন্ত রপ্তানি কমেছে ১০ শতাংশ। গত অর্থবছর জার্মানির বাজারে রপ্তানি কমেছিল ৬ দশমিক ৮১ শতাংশ। তার মানে জার্মানিতে রপ্তানি পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।
ইইউ ছাড়া কানাডার বাজারেও পোশাক রপ্তানি কমেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই–মে মাসে ১৩৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয় দেশটিতে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশ কম। যদিও গতবার এই বাজারে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে ১৬ শতাংশ।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নেতিবাচক ধারা থেকে বের হতে পারছে না বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত। গত অর্থবছর শেষে এই বাজারে পোশাক রপ্তানি কমেছিল সাড়ে ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে রপ্তানি কমেছে ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এ সময়ে দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে ৭৪৭ কোটি ডলারের পোশাক।
আরেক প্রচলিত বাজার যুক্তরাজ্যে অবশ্য পোশাক রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ৫১৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে দেশটিতে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের শেষে এই বাজারে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১১ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও ভিয়েতনামের রপ্তানি যেভাবে বাড়ছে, আমাদের সেভাবে বাড়ছে না। মোটাদাগে চারটি কারণে আমরা পোশাক রপ্তানিতে পিছিয়ে যাচ্ছি।মোহাম্মদ হাতেম, নির্বাহী সভাপতি, বিকেএমইএ
প্রচলিত বাজারে যখন এ অবস্থা তখন নতুন বাজারেও পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধির গতি কমেছে। গত অর্থবছর নতুন বাজারে ৮৩৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে তা কমে ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৮১৯ কোটি ডলারের পোশাক। গত অর্থবছরের একই সময়ে পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৭৬৯ কোটি ডলার।
নতুন বাজারের মধ্যে বড় গন্তব্য জাপানে প্রবৃদ্ধির হার বেশ কমে গেছে। গত অর্থবছর শেষে জাপানে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে ৪৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি মাত্র ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এ ছাড়া ভারতে রপ্তানি কমেছে ২৩ শতাংশ। গত অর্থবছর শেষে ভারতে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সাড়ে ৪১ শতাংশ।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও ভিয়েতনামের রপ্তানি যেভাবে বাড়ছে, আমাদের সেভাবে বাড়ছে না। মোটাদাগে চারটি কারণে আমরা পোশাক রপ্তানিতে পিছিয়ে যাচ্ছি। এক. জ্বালানি–সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। দুই. কাস্টমসের হয়রানি। তিন. ব্যাংকের অসহযোগিতা। ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খুলতে ১৫–২০ দিন সময় নিচ্ছে কোনো কোনো ব্যাংক। চার. লিড টাইম বেশি (ক্রয়াদেশ থেকে পণ্য জাহাজীকরণের সময়)। এ ছাড়া উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান পোশাক তৈরির দাম বাড়াচ্ছে না। ফলে আগের দামে অনেক ক্রয়াদেশই নেওয়া যাচ্ছে না। এসব কারণে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি।’