ইউরোপের রাস্তায় চট্টগ্রামের বাইসাইকেল
এই সংবাদ ২০২৪ সালের ২০ জুলাই প্রথম আলোর ছাপা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। কিন্তু তখন দেশে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় এই সংবাদ সময়মতো অনলাইনে প্রকাশ করা যায়নি। ইন্টারনেট চালু হওয়ার পর এখন তা করা হলো।
শহরের ব্যস্ত রাস্তায় যানজট এড়াতে তরুণদের পছন্দের তালিকায় থাকে বাইসাইকেল। তবে চট্টগ্রাম নগরের অধিকাংশ রাস্তা বাইসাইকেলের উপযোগী নয়। রাস্তা অনুপযোগী হলেও চট্টগ্রামের দুই কারখানার তৈরি বাইসাইকেল চলছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের রাস্তায়। আবার রপ্তানির শুরুটাও হয়েছিল চট্টগ্রাম থেকেই।
ইউরোস্ট্যাটের তথ্যানুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ২৭ দেশে বাইসাইকেল রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। এ ছাড়া গোটা বিশ্বে বাইসাইকেল রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকায় অবস্থিত আলিটা (বাংলাদেশ) লিমিটেড ও কেইপিজেড এলাকায় অবস্থিত করভো সাইকেলস লিমিটেড চট্টগ্রাম থেকে বাইসাইকেল রপ্তানি করে।
দেশ থেকে প্রথম বাইসাইকেল রপ্তানি শুরু হয়েছিল ১৯৯৫ সালে, চট্টগ্রাম থেকে। শুরুর দিকে শুধু বিদেশি প্রতিষ্ঠান ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগের বাইসাইকেল রপ্তানি করত। ২০০৩ সালে রপ্তানিকারকের তালিকায় যুক্ত হয় দেশি মেঘনা গ্রুপ। আর ২০১৪ সালে যুক্ত হয় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। এরপর রপ্তানি বাড়তে থাকে। রপ্তানির তালিকায় যুক্ত হয় ইউরোপ, আমেরিকা, ভারতসহ ২৫টির বেশি দেশ। বাংলাদেশের বাইসাইকেল রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশের গন্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, গত এক দশকে প্রতিবছর গড়ে ১০ কোটি মার্কিন ডলারের বাইসাইকেল রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।
যাত্রা শুরু হয়েছিল চট্টগ্রামে
দেশে প্রথম দিকের রপ্তানিমুখী বাইসাইকেল প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের আলিটা (বাংলাদেশ) লিমিটেড। ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) বাইসাইকেল উৎপাদন শুরু করে মালয়েশিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৯৫ সালে যুক্তরাজ্যের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বাইসাইকেল রপ্তানির মাধ্যমে চট্টগ্রামে তৈরি বাইসাইকেল প্রথম ইউরোপের দেশে যায়।
আলিটা (বাংলাদেশ) লিমিটেডের রপ্তানির শুরুর প্রায় ১৬ বছর পর যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রামের আরেক বাইসাইকেল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান করভো সাইকেলস লিমিটেড। ২০১২ সাল থেকে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে বাইসাইকেল রপ্তানি করছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাইসাইকেলের পাশাপাশি বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠানটি ট্রিডেন্ট সাইকেলস কোম্পানি লিমিটেড নামে আরেকটি কারখানা স্থাপন করে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চট্টগ্রামের এই দুই প্রতিষ্ঠান প্রায় ৮২ হাজার বাইসাইকেল রপ্তানি করেছে। এর মাধ্যমে দেশে প্রায় ১০০ কোটি টাকার সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে।
রপ্তানি কমেছে গত অর্থবছর
আলিটা (বাংলাদেশ) লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক এ এইচ এম ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে ইউরোপের বাজারে রপ্তানিতেও কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, করোনাকালে বেশি আমদানির ফলে ইউরোপের দেশগুলোয় যে মজুত ছিল, তা এখন শেষের দিকে। ফলে চলতি অর্থবছর থেকে আবারও ইউরোপে রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
ইপিবির হিসাবে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশ থেকে প্রায় ১৪ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বাইসাইকেল বিভিন্ন দেশের রপ্তানি হয়েছে। এর আগের অর্থবছরের রপ্তানি হয়েছিল ১৬ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত বাইসাইকেল রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮ কোটি মার্কিন ডলারের।
করভো সাইকেলসের ব্যবস্থাপক বখতিয়ার জামাল প্রথম আলোকে বলেন, করোনার সময় ইউরোপে সাইকেলের চাহিদা বেড়ে গিয়েছিল। তখন প্রচুর সাইকেল আমদানি করেছিল ইউরোপের দেশগুলো। এতে তাদের মজুত বেড়ে যায়। এ কারণে পরের বছরগুলোতে রপ্তানি কিছুটা কমেছে। তবে বিকল্প বাজার হিসেবে ইউরোপের বাইরে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে বাইসাইকেল।