বিজিএমইএ পর্ষদের পদত্যাগ দাবি করল সদস্যদের একাংশ
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ও পরিচালকদের পদত্যাগ দাবি করেছে সংগঠনটির সাধারণ সদস্যদের একাংশ। একই সঙ্গে দলীয় প্রভাবমুক্ত অন্তর্বর্তী পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে স্বচ্ছ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি তুলেছেন তাঁরা।
সংগঠনটির নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট ফোরামের নেতা-কর্মীরা সাধারণ সদস্যদের ব্যানারে আজ সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করেন। তাঁরা বিজিএমইএর ভেতরে সংঘটিত দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক ও অনন্ত কোম্পানিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনামুল হক খান। তাঁর পাশে ছিলেন ওয়েগা নিটেক্সের চেয়ারম্যান মেসবাহ উদ্দিন আলী, নেক্সাস গ্রুপের রশীদ আহমেদ হোসাইনী প্রমুখ। এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনস্থলে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি ফয়সাল সামাদ, এম এ রহিম, সাবেক পরিচালক আসিফ ইব্রাহিম, নাভিদুল হক প্রমুখ। তাঁরা অতীতে ফোরামের হয়ে একাধিকবার বিজিএমইএর নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
বিজিএমইএর সভাপতি এস এম মান্নান গত মার্চের নির্বাচনে কারচুপি ও সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করছেন—এমন অভিযোগ সামনে এনেছেন ফোরামের নেতা–কর্মীরা।
লিখিত বক্তব্যে এনামুল হক খান বলেন, নির্বাচনে এস এম মান্নান তাঁর ক্যাডার বাহিনী দিয়ে নজিরবিহীন কারচুপি ও ভোট জালিয়াতির মাধ্যমে পর্ষদে আসেন। এসব অবৈধ কাজে বিজিএমইএর সাবেক তিনজন সভাপতি নিজেদের লোকজন নিয়ে সরাসরি অংশ নেন। এসব ঘটনায় সাধারণ সদস্যদের মনে ব্যাপক রক্তক্ষরণ হয়। সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে কারচুপি নিয়ে একটি ভিডিও দেখানো হয়। প্রসঙ্গত, বিজিএমইএর সভাপতি এস এম মান্নান ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ৭ আগস্ট ফোরামের নেতা–কর্মীরা বিজিএমইএর কার্যালয়ে গিয়ে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের ওপর অনাস্থা জানিয়ে স্মারকলিপি দেন। তাঁরা ওই দিনই কমিটি ভেঙে দিতে পর্ষদকে চাপ দেন। এ বিষয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনায় বেশ হট্টগোলও হয়। ওই দিন রাতে বিজিএমইএ পর্ষদ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সংগঠনের কার্যালয়ে ফোরামের সদস্যরা যেভাবে হট্টগোল করে পর্ষদের নেতৃত্ব অধিগ্রহণের চেষ্টা করেছে, তাতে দেশের বৃহত্তম রপ্তানি খাতের ভাবমূর্তি আরও ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ নিয়ে আজকের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পুরো ঘটনার মিথ্যা ব্যাখ্যা দিয়ে বিজিএমইএ মনগড়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।
ফোরাম নেতারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসাদ বিন রনিকে সংবাদ সম্মেলনে নিয়ে আসেন। এই সমন্বয়ক বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসরদের কোনো প্রতিষ্ঠানে রেখে সংস্কার সম্ভব নয়। সব প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁদের পদত্যাগ করতে হবে। বিজিএমইএ থেকেও ফ্যাসিবাদের দোসরদের পদত্যাগ করা উচিত।
ওয়েগা নিটেক্সের চেয়ারম্যান মেসবাহ উদ্দিন আলী বলেন, ইউডি করতে গেলেও ঘুষ দিতে হয়। ব্যবসায়ী ও সরবরাহকারীদের মধ্যকার বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য গঠিত আরবিট্রেশন কমিটিতেও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বসানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন, গত মার্চে নির্বাচনের পর ফোরাম নেতারা বিজয়ীদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিলেও এখন কেন কারচুপির কথা বলছেন? এর জবাবে ফয়সাল সামাদ জানান, পরিস্থিতির কারণে তাঁরা তখন কারচুপির বিষয়টি সামনে আনেননি।