১৬ টাকায় প্রতি পিস প্যান্ট রপ্তানি, তা–ও মিথ্যা ঘোষণায়

চট্টগ্রাম বন্দরফাইল ছবি

বাংলাদেশ থেকে প্রতি পিস প্যান্ট রপ্তানি হচ্ছে মাত্র ১৫ সেন্ট বা ১৬ টাকায়। এই দামের ডেনিম বা জিনসের প্যান্টের গন্তব্য ছিল সৌদি আরব। এমন অবিশ্বাস্য দামে জিনস প্যান্ট রপ্তানি করছিল নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ফাইয়্যাজ ফ্যাশন লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান।  

চালানটি রপ্তানির জন্য শুল্কায়নসহ সব প্রক্রিয়াও শেষ হয়েছিল। চট্টগ্রামের বেসরকারি ডিপো শফি মোটরস থেকে চালানটি চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে জাহাজে তুলে দেওয়ার আগেই বাদ সাধে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। ১৫ জানুয়ারি চালানটি পরীক্ষা করে বেরিয়ে আসে অবিশ্বাস্য ঘটনা।

শুল্কায়নে ফাইয়্যাজ ফ্যাশন ঘোষণা দিয়েছিল, তারা ১৪ হাজার ৩৫০ পিস সোয়েটার ও অন্তর্বাস রপ্তানি করবে। তাতে দেশে আসবে ১২ হাজার ৪৮৫ ডলার। তবে এটা ছিল শুধু কাগজে-কলমে। কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কনটেইনার খোলার পর দেখতে পান ভিন্ন চিত্র। রপ্তানিকারক যে পণ্য রপ্তানি করার কথা, তার কোনোটিই তাতে নেই। চালানটি পরীক্ষা করে সেখানে কর্মকর্তারা পেয়েছেন, ৮৫ হাজার ৩৬৮ পিস ডেনিম লং প্যান্ট। অর্থাৎ এসব প্যান্ট রপ্তানি হলেও রপ্তানি আয় আসবে সেই ১২ হাজার ৪৮৫ ডলার-ই। এ হিসাবে প্রতি পিসের রপ্তানি মূল্য পড়ে প্রায় ১৫ সেন্ট বা ১৬ টাকা।  

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ ডেনিম প্যান্ট রপ্তানি হয়। গত অর্থবছরে গড়ে প্রতি পিস ডেনিম প্যান্ট রপ্তানি হয়েছে ছয় ডলারে। ডেনিমের এ গড় দাম ধরা হলে এই চালানটির রপ্তানি মূল্য হওয়ার কথা ছিল ৫ লাখ ১২ হাজার ডলার। অর্থাৎ এই চালানটি রপ্তানি হলে প্রায় পাঁচ লাখ ডলার দেশে আসত না। বিষয়টি রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচারের ঘটনাই।

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. মিনহাজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, রপ্তানিকারক কম মূল্য ও কম পোশাক দেখিয়ে অর্থ পাচারের চেষ্টা করেছিল। কাস্টমস গোয়েন্দার নজরদারিতে তারা সেটি করতে পারেনি। এখন এই চালানটির বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ফাইয়্যাজ ফ্যাশন মূলত বাণিজ্যিক রপ্তানিকারক। এই রপ্তানিকারকের আরও একটি চালান আটকে রাখা হয়েছে। সেখানেও অর্থ পাচারের ঘটনা থাকতে পারে বলে সন্দেহ কর্মকর্তাদের।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যে দেখা যায়, এই প্রতিষ্ঠানটি গত অর্থবছর থেকে রপ্তানি শুরু করে। গত অর্থবছরেও তারা আট লাখ পিস পোশাক রপ্তানি করে। তাতে রপ্তানি আয় আসে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক বছরে তারা যা রপ্তানি করে দেশে যে ডলার এনেছে, মাত্র এক চালানে তার কাছাকাছি ডলার পাচার হতো যদি চালানটি ধরা না পড়ত।

প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানির পুরোনো নথিপত্রে দেখা যায়, ২২-২৩ অর্থবছরেও তারা কম মূল্যে পণ্য রপ্তানি করেছে। যেমন প্রতি পিস ২১ সেন্ট বা ২১ টাকা দরে তারা সৌদি আরবে প্যান্ট রপ্তানি করেছে। ২২-২৩ অর্থবছরে তাদের একটি ছাড়া সব চালান রপ্তানি হয়েছে সৌদি আরবের আল ম্যামাল ফর ট্রেডিং কোম্পানির কাছে। একই ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের সংযুক্ত আরব আমিরাতেও একটি চালান গেছে বাংলাদেশি এই রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান থেকে।