গাড়ির নিবন্ধন বন্ধ, ব্যবসায়ীদের ৩৫০ কোটি টাকার ক্ষতি

গাড়ির শোরুমফাইল ছবি

নতুন গাড়ি কিনে সড়কে নামাতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছ থেকে নিবন্ধন নিতে হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষে সংস্থাটির বনানীর প্রধান কার্যালয় ও মিরপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। তাতে প্রায় ১২ দিন ধরে সংস্থাটির সার্ভার অচল রয়েছে। এ কারণে বন্ধ হয়ে গেছে গাড়ির নিবন্ধন কার্যক্রম।

গাড়ি ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গাড়ি কেনায় এখন ঋণ দিচ্ছে না। তাই গাড়ি বিক্রিও আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। দেশের রিকন্ডিশনড গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশনড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা) জানিয়েছে, নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় গত ১২ দিনে তাদের প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার মতো ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে। যত দিন যাচ্ছে এই ক্ষতি তত বাড়ছে। এ কারণে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সনাতন (ম্যানুয়াল) পদ্ধতিতে নিবন্ধন চালুর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার মধ্যে ১৮ জুলাই বনানীতে বিআরটিএর প্রধান কার্যালয় ও মিরপুরে আঞ্চলিক কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে সংস্থাটির সার্ভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ওই দিন থেকে বিআরটিএর গাড়ি নিবন্ধন সেবা বন্ধ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিআরটিএতে মোটরযান নিবন্ধনের প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি অনলাইননির্ভর। এ ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান, তথ্য সংশোধন, মোটরযানের মালিকানা বদল, ইঞ্জিন পরিবর্তন, মোটরযানের ফিটনেস সনদ, ট্যাক্স টোকেন ও রুট পারমিট প্রদানের মতো কাজগুলোও অনলাইনে করা হয়। এখন এসব কাজ বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে বারভিডা সভাপতি মো. হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, ‘সহিংস পরিস্থিতির পর অন্য সব ব্যবসা চালু হলেও আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। বিআরটিএ সার্ভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দৈনন্দিন সেবাগুলো পাচ্ছি না। সার্ভার কবে চালু হবে, তা-ও নিশ্চিত করে সংস্থাটি জানাতে পারেনি। নিবন্ধন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গাড়ি বিক্রি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে।’

বিআরটিএর সর্বশেষ হিসাবে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সংস্থাটি প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার যানবাহনের নিবন্ধন দিয়েছে। গত বছর নিবন্ধনের এ সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ লাখ ৬১ হাজার।

দৈনিক ক্ষতি ৩৫ কোটি টাকা

গাড়ি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিআরটিএতে প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১২০টি ব্যক্তিগত গাড়ির নিবন্ধন হয়। কিন্তু প্রায় ১২ দিন ধরে এ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বারভিডা বলেছে, গাড়ির নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় প্রতিদিন অন্তত ৩০-৩৫ কোটি টাকা করে লোকসান হচ্ছে।

এ বিষয়ে রিকন্ডিশনড গাড়ির আমদানিকারক হকস বে-এর স্বত্বাধিকারী আবদুল হক বলেন, বর্তমানে বেশির ভাগ গাড়ি কেনা হয় ব্যাংকঋণে। সে ক্ষেত্রে গাড়ির নিবন্ধনের পর ব্যাংকের ঋণ ছাড় হয়। আবার যাঁরা ঋণ না নিয়ে গাড়ি কেনেন, তাঁরাও নিবন্ধন ছাড়া গাড়ি নিতে চান না। আবদুল হক বলেন, এমনিতে দেড়-দুই বছর ধরে গাড়ির ব্যবসায় মন্দা চলছে। চলমান পরিস্থিতি গাড়ি ব্যবসায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

কমেছে বেচাকেনা ও উৎপাদন

দেশীয় অনেক কোম্পানি এখন গাড়ি, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি উৎপাদন ও সংযোজন করছে। তবে সাম্প্রতিক অস্থিরতা, ইন্টারনেট বন্ধ ও কারফিউর কারণে সবারই উৎপাদন কার্যক্রম সীমিত হয়ে গেছে। পাশাপাশি কমেছে বিক্রিও। দেশীয় একটি গাড়ি উৎপাদক ও সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ১৭ জুলাইয়ের পর বন্দর থেকে গাড়ির কোনো যন্ত্রাংশ ছাড় করতে পারেননি। এ কারণে কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলার্স ও ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও উত্তরা মোটরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউর রহমান বলেন, কারফিউর কারণে প্রথম কয়েক দিন বেচাকেনা বন্ধ ছিল। সর্বশেষ দুই দিনে বিক্রয়কেন্দ্রগুলো খুলেছে, তবে বিক্রি খুবই কম।

যা বলছে বিআরটিএ

বিআরটিএ জানিয়েছে, অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতায় সংস্থাটির বনানীর প্রধান কার্যালয়ের প্রায় ১২১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বিআরটিএর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগুন সার্ভার রুমের মধ্যে প্রবেশ করেনি, তবে সেখানে আগুনের অনেক তাপ গেছে। সার্ভারের বিদ্যুৎ-সংযোগও পুড়ে গেছে। ফলে নিবন্ধনসহ প্রায় সব ধরনের সেবা বন্ধ রয়েছে।

জানতে চাইলে বিআরটিএ চেয়ারম্যান গৌতম চন্দ্র পাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সার্ভার চালুর কাজটি করছি। আশা করছি এ সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে সার্ভার চালু করতে পারব। তখন যদি সার্ভারের সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, তাহলে সীমিতভাবে আমাদের সেবাগুলো চালু করা যাবে।’