মেয়াদ শেষ, পদ ছাড়তে চাচ্ছেন না নেতারা

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে পর্ষদের মেয়াদ ছয় মাস বাড়িয়ে নেন বর্তমান সভাপতি। এখন আবার মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর লোগোছবি: সংগৃহীত

তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর আগামী পর্ষদ নির্বাচন নিয়ে জটিলতা শুরু হয়েছে। গত এপ্রিলে বর্তমান পর্ষদের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে মেয়াদ ছয় মাস বাড়িয়ে নেন বর্তমান সভাপতি ফারুক হাসান।

অতিরিক্ত এ মেয়াদ শেষ হবে অক্টোবরে, তার আগে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। আইন অনুযায়ী, নির্বাচনের ৯০ দিন আগে নির্বাচন বোর্ড গঠন এবং ৮০ দিন আগে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বাধ্যবাধকতা থাকলেও বর্তমান পর্ষদ সেটি করেনি। উল্টো এখন আবার নতুন করে মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করছে বর্তমান পর্ষদ।

এদিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দাবি করেছে বিজিএমইএর নির্বাচনকালীন জোট ফোরাম। গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের মহাপরিচালকের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দেয় তারা। এতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচনপ্রক্রিয়া শুরু না করায় বর্তমান সভাপতির বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনার পাশাপাশি আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান ফোরামের নেতারা।

এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হলো। এমন প্রেক্ষাপটে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিজিএমইএর নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু না করায় আমরা বিব্রত বোধ করছি।
ফয়সাল সামাদ, প্যানেল লিডার, ফোরাম

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফোরামের প্যানেল লিডার ও বিজিএমইএর পরিচালক ফয়সাল সামাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হলো। এমন প্রেক্ষাপটে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিজিএমইএর নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু না করায় আমরা বিব্রত বোধ করছি। আইন অমান্য করে নির্বাচনপ্রক্রিয়া এখনো কেন শুরু করা হচ্ছে না, সেটি পরিষ্কার করছেন না সভাপতি। যদি তাঁর কাছে কোনো উত্তর না থাকে, তাহলে শিল্পের স্বার্থে গ্রহণযোগ্য সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া উচিত এবং যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা দরকার।’

বিষয়টি নিয়ে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসানের বক্তব্য নিতে তাঁর মুঠোফোনে গত দুই দিনে একাধিকার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগে পাঠানো ফোরামের চিঠিসহ বার্তা পাঠালেও কোনো জবাব দেননি তিনি।

২০২১ সালের এপ্রিলে নির্বাচনে জয়ী হয়ে নির্বাচনকালীন জোট সম্মিলিত পরিষদ জয়ী হয়। সভাপতি ফারুক হাসানের নেতৃত্বে দুই বছরের জন্য পর্ষদ গঠিত হয়। তবে চলতি বছরের শুরুর দিকে তৈরি পোশাকশিল্পের বর্তমান অবস্থা, শ্রমিক গতিবিধি ও পবিত্র রমজান মাসের শ্রম পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার কারণ দেখিয়ে পর্ষদের মেয়াদ ছয় মাস বাড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে বর্তমান পর্ষদ। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কয়েকটি শর্তে তা অনুমোদন দেয় বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগ।

নির্বাচন দিতে আমাদের কোনো বাধা নেই। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে সবুজসংকেত না পাওয়ায় নির্বাচন বোর্ড গঠন করা হয়নি।
শহিদউল্লাহ আজিম, সহসভাপতি, বিজিএমইএ

অনুমতিপত্রে বলা হয়, বর্তমান পর্ষদের মেয়াদ ১২ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হলো। বর্ধিত মেয়াদের ১৫ দিন আগেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। নির্বাচনের জন্য মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না। ফলে নির্বাচনের ৯০ দিন আগে তিন সদস্যের নির্বাচন বোর্ড ও তিন সদস্যের নির্বাচন আপিল বোর্ড গঠন করতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচনের অন্তত ৮০ দিন আগে নির্বাচন বোর্ডকে নির্বাচন তফসিল প্রকাশ করতে হবে। যদিও এগুলো কিছুই হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিজিএমইএর নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট করতে চান না সম্মিলিত পরিষদের শীর্ষ নেতারা। তাঁরা সরকারের উচ্চ মহলকে এ বিষয়ে অবহিত করেছেন। সেখান থেকেও সবুজসংকেত আছে। নতুন করে এখন পর্ষদের মেয়াদ বাড়াতে হলে বাণিজ্য সংগঠন আইন, ২০২২ সংশোধন করতে হবে। কারণ, আইনানুযায়ী বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের মহাপরিচালক বাণিজ্য সংগঠনের মেয়াদ ছয় মাসের বেশি বৃদ্ধি করতে পারেন না।

এ বিষয়ে বিজিএমইএর একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বিজিএমইএর বর্তমান পর্ষদের মেয়াদ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বর্তমানে বাণিজ্য সংগঠন আইন সংশোধনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে রয়েছে। পরবর্তী সংসদ অধিবেশনে সেটি পাস হতে পারে।

‘বিজিএমইএর বর্তমান পর্ষদ পুনরায় অতিরিক্ত সময় চেয়েছে। আবার সময় দেওয়া যায় কি না, সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে। মন্ত্রণালয় এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।’
তপন কান্তি ঘোষ, বাণিজ্যসচিব

২০১৩ সালে সাধারণ সদস্যদের সরাসরি ভোটে বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচিত হয়েছিল। পরেরবার সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম দুই মেয়াদের জন্য সমঝোতা করে। সেই সমঝোতার প্রথম দফায়, অর্থাৎ ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সম্মিলিত পরিষদের সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে কমিটি হয়। সেই কমিটি নানা অজুহাত দেখিয়ে ৪৩ মাস দায়িত্ব পালন করে।

পরের মেয়াদে সমঝোতা কমিটি করার উদ্যোগ নেয় দুই জোট। শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা পরিষদ খণ্ডিত প্যানেলে প্রার্থী দেয়। সে কারণে ঢাকায় নিয়ম রক্ষার ভোট হয়েছিল। ২০২১ সালের নির্বাচনে সম্মিলিত পরিষদ ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৩৫ পরিচালক পদের মধ্যে ২৪টিতে বিজয়ী হয়েছে। এ বি এম সামছুদ্দিনের নেতৃত্বাধীন ফোরাম ১১ পরিচালক পদে বিজয়ী হয়েছে।

এদিকে বিজিএমইএর আগামী পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনের জন্য সম্মিলিত পরিষদের নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে প্যানেল লিডারের নাম ঘোষণা করেনি। তবে বিজিএমইএর বর্তমান জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এস এম মান্নান, সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম এবং পরিচালক ও তুসুকা ফ্যাশনসের চেয়ারম্যান আরশাদ জামাল (দিপু) প্যানেল লিডার হওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে আছেন। অন্যদিকে ফোরামের নেতারা। সুরমা গার্মেন্টসের পরিচালক ফয়সাল সামাদকে প্যানেল লিডার হিসেবে চূড়ান্ত করেছে।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, ‘নির্বাচন দিতে আমাদের কোনো বাধা নেই। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে সবুজসংকেত না পাওয়ায় নির্বাচন বোর্ড গঠন করা হয়নি।’

এ বিষয়ে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিজিএমইএর বর্তমান পর্ষদ পুনরায় অতিরিক্ত সময় চেয়েছে। আবার সময় দেওয়া যায় কি না, সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে। মন্ত্রণালয় এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।’