বছরের প্রথম আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে ২২%
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গত বছর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৯৭৩ কোটি মার্কিন ডলারে উঠেছিল। কিন্তু চলতি বছর রপ্তানি প্রবৃদ্ধি তো দূরের কথা, উল্টো কমছে। এ বছরের প্রথম আট মাস জুলাই থেকে আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি ২১ দশমিক ৭৭ শতাংশ কমেছে। অবশ্য রপ্তানি কমলেও বাংলাদেশি পোশাকের দাম বেড়েছে ১০ শতাংশ।
এককভাবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পোশাকের প্রায় এক পঞ্চমাংশের গন্তব্য এই বাজার। বর্তমানে দেশটির বাজারে চীন ও ভিয়েতনামের পর তৃতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এরপর পর্যায়ক্রমে যে সাত দেশ রয়েছে, সেগুলো হলো ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, মেক্সিকো, হন্ডুরাস, পাকিস্তান ও কোরিয়া। গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে এই ১০ দেশেরই পোশাক রপ্তানি কমেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। তবে সবচেয়ে বেশি কমেছে চীন ও পাকিস্তানের।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ৫ হাজার ৩৪৫ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেন। এই আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২দশমিক ৭৭ শতাংশ কম।
অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট সময়ে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ৫১৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২১ দশমিক ৭৭ শতাংশ কম। গত বছরের প্রথম আট মাসে দেশটিতে ৬৬২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। ওই সময় প্রতি বর্গমিটার কাপড়ে তৈরি পোশাকের দাম ছিল ২ দশমিক ৯৭ ডলার। চলতি বছর প্রথম আট মাসে তা বেড়ে ৩ দশমিক ২৭ ডলার হয়েছে। তার মানে, পোশাকের দাম বেড়েছে ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি করে চীন। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে চীন ১ হাজার ৯৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে যুক্তরাষ্ট্রে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তাদের রপ্তানি কমেছে ২৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ। গত বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট সময়ে চীন রপ্তানি করে ১ হাজার ৫৫৭ কোটি ডলারের পোশাক।
এদিকে ভিয়েতনাম আলোচ্য সময়ে ৯৬৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ কম। গত বছরের প্রথম আট মাসে ভিয়েতনাম ১ হাজার ২৮০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানিতে চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে আছে যথাক্রমে ভারত ও ইন্দোনেশিয়া। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ভারত ৩২৬ ও ইন্দোনেশিয়া ২৮৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে যুক্তরাষ্ট্রে। এতে ভারতের রপ্তানি ২১ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ার ২৬ দশমিক ০৯ শতাংশ কমেছে।
নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তখন থেকেই দেশটিতে পোশাকের চাহিদা কম। এ কারণে ক্রয়াদেশও কম। মূল্যস্ফীতি কমলেও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়ায়নি। আগামী বছরের শেষ দিকে দেশটিতে নির্বাচন। তত দিন পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি থাকতে পারে বলে আমাদের ক্রেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন।’
অবশ্য প্রতিযোগী দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকে এখনো সন্তোষজনক বলেই মনে করেন মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের প্রধান প্রতিযোগী চীন ও ভিয়েতনাম। চীনের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ চলছে। তার রেশে ভিয়েতনাম সমস্যায় আছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ বর্তমানে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় নিরাপদ। পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনেও ডাবল সেঞ্চুরি (দুই শতাধিক) হয়েছে। এসব কারণে বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো আকৃষ্ট হচ্ছে। সে জন্যই চীন ও ভিয়েতনামের চেয়ে বাংলাদেশের রপ্তানি পরিস্থিতি ভালো।