একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক উৎপাদন বন্ধে সময় চান উৎপাদনকারীরা
একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক উৎপাদন বন্ধে সময় চান দেশের প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনকারীরা। তাঁরা মনে করেন, সরকার এ ধরনের প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন বন্ধে যে প্রচেষ্টা শুরু করেছে, তার ফল ভালো হবে না। এসব উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে। কাজ হারাবেন বিপুলসংখ্যক শ্রমিক।
এ ছাড়া একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক উৎপাদন বন্ধ হলে দেশের অন্যান্য শিল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনকারীরা। এতে প্লাস্টিক খাতের ছয় হাজার শিল্পপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং কয়েক লাখ শ্রমিক–কর্মচারী চাকরি হারাবেন। এ ছাড়া অনেক পণ্যের গুণগত মান রক্ষায় প্লাস্টিকের মোড়কের বিকল্প নেই। এই বাস্তবতায় উৎপাদনকারীদের দাবি, নিষিদ্ধ করতে হলে জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে ধাপে ধাপে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হোক।
আজ সোমবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে প্লাস্টিক ফাউন্ডেশন। সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি উত্থাপন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো জয়, খাদ্যনিরাপত্তা আইন অনুযায়ী আয়োডিনযুক্ত লবণ প্লাস্টিক ছাড়া মোড়কীকরণ সম্ভব নয়। অন্য কোনো পণ্য দিয়ে মোড়কীকরণ করা হলে তার গুণগত মান থাকবে না। এ ছাড়া সরকার ভোজ্যতেলের সঙ্গে ভিটামিন এ যুক্ত করতে চায়, প্লাস্টিক কনটেইনার ছাড়া তা সম্ভব নয়। তরল দুধ প্লাস্টিক প্যাকেজিং ছাড়া বাজারজাত সম্ভব নয়। কারণ হিসেবে বলা হয়, অতিবেগুনি রশ্মি থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থা না থাকলে দুধ নষ্ট হয়ে যায়। সেই সঙ্গে ওষুধের গুণগত মান রক্ষা ও আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে প্লাস্টিক প্যাকেজিং ছাড়া বিকল্প নেই।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সামিম আহমেদ। তিনি বলেন, গত ২৭ আগস্ট পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ১৭টি একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের তালিকাসংবলিত গেজেট প্রকাশ করেছে। সেই গেজেট অনুযায়ী, এসব বন্ধ করার প্রচেষ্টা চলছে। ফলে প্লাস্টিক খাতের ব্যবসা-বাণিজ্য ও সংযোগ শিল্প হিসেবে অন্যান্য খাতের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ আইনের কারণে শিল্পের বিকাশ ব্যাহত হবে এবং বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সামিম আহমেদ আরও বলেন, জাতিসংঘের প্রস্তাবে আধুনিক সভ্যতায় প্লাস্টিকের ভূমিকা ও অবদান লিপিবদ্ধ করার পাশাপাশি স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এমনকি প্লাস্টিকদূষণ প্রতিরোধে চলমান বৈশ্বিক আলোচনায়ও প্লাস্টিক বন্ধ করার কথা বলা হয়নি।
এ বাস্তবতায় প্লাস্টিক ফাউন্ডেশনের দাবি, প্লাস্টিক পুনচক্রায়নের মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করা। এর মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাস ও মহাসাগরীয় প্লাস্টিকদূষণ রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করা। দ্বিতীয়ত, একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করা হলে তার অর্থনৈতিক প্রভাব কী হবে, তা নিরূপণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, বিডা, এফবিসিসিআই ও অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার পয়লা অক্টোবর থেকে সুপারশপে প্লাস্টিক ব্যাগ দেওয়া নিষিদ্ধ করেছে। ১ নভেম্বর থেকে ঢাকার ১০টি কাঁচাবাজারে পলিথিন ব্যবহার বন্ধে কার্যক্রম শুরু হবে। দেশব্যাপী পলিথিন উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে প্লাস্টিক উৎপাদনকারীরা মনে করছেন, ২০০২ সালে শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধের আইন বাস্তবায়নযোগ্য করতে বিকল্প ব্যাগের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা। সে লক্ষ্যে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি, শিক্ষা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্তি, জনগণের অংশগ্রহণ, যথেষ্ট পরিমাণে বর্জ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা করা ও সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরিত করতে বিনিয়োগ করা।
সেই সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণ বিকল্প ব্যাগের ব্যবস্থা বা সরবরাহ নিশ্চিত না করে কোনো অভিযান পরিচালনা সফল হবে না বলে প্লাস্টিক শিল্পের উদ্যোক্তাদের দাবি।
সেই সঙ্গে উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের জ্ঞান, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা, প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ ও সুষ্ঠু নীতিমালা গ্রহণ করা জরুরি বলে উৎপাদনকারীদের মত।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ প্লাস্টিক প্যাকেজিং, রোল ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু মোতালেব উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, প্লাস্টিক মানেই খারাপ নয়। বিভিন্ন গ্রেডের প্লাস্টিক বাজারে পাওয়া যায়। দূষণের যে অভিযোগ আছে, তা মূলত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সংকটের কারণে। সিটি করপোরেশনের ময়লা সংগ্রহের অর্ধেক গাড়ি সব সময় নষ্ট থাকে। আবার তারা আলাদাভাবে প্লাস্টিক সংগ্রহ করে না।
আবু মোতালেব আরও বলেন, প্লাস্টিক পুনচক্রায়নের মাধ্যমে দূষণ অনেকাংশে কমিয়ে আনা যায়। উন্নত দেশে এভাবে দূষণ প্রতিরোধ করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য প্রতিষ্ঠানের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।