বছরে ১৫% মজুরি বৃদ্ধির প্রস্তাব শ্রমিকপক্ষের

তৈরি পোশাকশিল্পফাইল ছবি: এএফপি

তৈরি পোশাকশিল্পের নিম্নতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট বা মজুরি বৃদ্ধি ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছেন শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিরা। তবে গত দুই সপ্তাহেও এ-সংক্রান্ত কোনো প্রস্তাব শ্রম মন্ত্রণালয়ে দেয়নি মালিকপক্ষ। ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতির পরিপ্রেক্ষিতে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি সময়মতো শেষ করা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গাজীপুর ও সাভারের আশুলিয়ার শ্রমিকেরা মজুরি বৃদ্ধিসহ নানা দাবিতে টানা বিক্ষোভ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত সেপ্টেম্বরে ১৮টি বিষয়ে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিক ও শ্রমিকনেতারা সমঝোতায় পৌঁছান। সমঝোতা অনুযায়ী, ছয় মাসের মধ্যে মজুরি পুনর্মূল্যায়ন ও চলতি নভেম্বরের মধ্যে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারকে প্রতিবেদন দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ বিষয়ের জন্য করণীয় নির্ধারণে একটি কমিটি করেছে শ্রম মন্ত্রণালয়। কমিটিতে মালিক ও শ্রমিকপক্ষের তিনজন করে প্রতিনিধি রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৪ নভেম্বর শ্রম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সবুর হোসেনের সভাপতিত্বে কমিটির দ্বিতীয় সভায় শ্রমিক প্রতিনিধিরা নিম্নতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত বার্ষিক মজুরি ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব দেন। ওই সভায় বর্তমান মূল্যস্ফীতিকে বিবেচনায় নিয়ে মালিকপক্ষকে শ্রমিকদের বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে ১৯ নভেম্বরের মধ্যে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। এর পরদিন অর্থাৎ গত বুধবার কমিটির তৃতীয় সভা হওয়ার কথা ছিল। তবে মালিকপক্ষ প্রস্তাব না দেওয়ায় সভাটি স্থগিত হয়। আগামী রোববার সভার তারিখ পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।

গত বছরের ১ ডিসেম্বর তৈরি পোশাকশিল্পে নিম্নতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা কার্যকর হয়। যদিও প্রথমে ২০ হাজার ৩৯৩ টাকার মজুরি প্রস্তাব দিয়েছিল শ্রমিকপক্ষ।

শ্রমিকপক্ষের প্রস্তাবে কী আছে

নিম্নতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত বার্ষিক মজুরি ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করার পেছনে শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিরা যুক্তি দিয়েছেন, ঐতিহাসিকভাবে পোশাকশ্রমিকদের মজুরি শোভন জীবনযাপনের প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। জীবনধারণের ন্যূনতম মান বজায় রাখার অনুপযুক্ত মজুরি হওয়ায় বৈষম্য বাড়ছে। অস্থিরতার সৃষ্টির পেছনেও তাঁদের অপর্যাপ্ত মজুরি অন্যতম কারণ।

কমিটিতে শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে আছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুববিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার ও বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি কবির আহম্মেদ।

শ্রমিকপক্ষের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি। অথচ মজুরি বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে শ্রমিকদের প্রকৃত আয় ও ক্রয়ক্ষমতা প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে। পোশাকশ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ৭২ শতাংশ কমেছে। প্রস্তাবিত অতিরিক্ত ১০ শতাংশ ইনক্রিমেন্টে শ্রমিকদের শোভন ও উন্নত জীবনমান অর্জনে সহায়ক হবে।

প্রতিযোগী দেশের তুলনায় বাংলাদেশে পোশাকশিল্পের শ্রমিকেরা এখনো কম বেতন পান বলেও তাদের প্রস্তাবে উল্লেখ করেছে শ্রমিকপক্ষ। তাদের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের পোশাকশ্রমিকেরা যেখানে নিম্নতম মজুরি ১০৫ ডলার (১২ হাজার ৫০০ টাকা) পান, সেখানে কম্বোডিয়ার শ্রমিকেরা পান ২০৪ ডলার। ভিয়েতনামে পোশাকশ্রমিকদের মজুরি অঞ্চলভেদে ভিন্ন হয়—১৩২ থেকে ১৯১ ডলার। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কায় পোশাকশ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ১২৫ ডলার, জর্ডানে ৩৬৬ ডলার, হাইতিতে ১৫৯ ডলার এবং ইন্দোনেশিয়ায় অঞ্চলভেদে মজুরি ২৫৮ থেকে ৩২০ ডলার।

জানতে চাইলে বাবুল আখতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোশাকশ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ নিয়ে আমরা কাজ করছি। শিগগিরই মন্ত্রণালয়ের কমিটির কাছে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব দেব।’

মালিকপক্ষ সময় চায়

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে কোনো প্রস্তাব চূড়ান্ত করেনি মালিকপক্ষ। সে জন্য কমিটির তৃতীয় বৈঠক পিছিয়ে দিতে মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে তারা।

কমিটিতে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি ও নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আরেকটু সময় নিয়ে প্রস্তাবটি দিতে চাই। সে জন্য আমরা ২৪ নভেম্বর বৈঠকটি করতে অনুরোধ করেছি।’