প্রথম আলো: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার–সংকট, মূল্যস্ফীতি ইত্যাদি কারণে দেশের অর্থনীতি এখন বেশ চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ইলেকট্রনিকস পণ্য খাত কেমন করছে?
মোহাম্মদ নূরুল আফছার: ডলার–সংকট ও মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিটি ক্ষেত্রই কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশের ইলেকট্রনিকস খাতের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানিনির্ভর। ফলে পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণসহ প্রতিটি পর্যায়ই জটিল আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এই পরিস্থিতিকে আরও দীর্ঘায়িত করছে। তবে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থার দিকে যাচ্ছে।
প্রথম আলো: ফ্রিজের দাম কেমন বেড়েছে?
নূরুল আফছার: আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, দেশের অভ্যন্তরে জ্বালানির মূল্য সমন্বয়, পরিবহন ব্যয় ও জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধির কারণে আমাদেরও সব ধরনের পণ্যের মূল্য সমন্বয় করতে হয়েছে। এতে গত এক বছরে ফ্রিজের দাম ৫ থেকে ৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
সুদের হার পরিবর্তনের ফলে বিনিয়োগপ্রক্রিয়া কিছুটা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এ ছাড়া মূল্য সমন্বয়ের ফলে পণ্যের চাহিদায় পরিবর্তন আসবে। এতে আমাদের উৎপাদনপ্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হবে।
প্রথম আলো: দেশে ইলেকট্রনিকস পণ্য খাতে নতুন বিনিয়োগ কেমন আসছে?
নূরুল আফছার: এই খাতে নতুন নতুন বিনিয়োগ আসছে। সরকারের নীতি–সহায়তার কারণে দেশীয় উদ্যোক্তারা যেমন বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন, তেমনি বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোও শিল্প স্থাপন করতে চাচ্ছে। সরকার শুল্ক–সুবিধা দেওয়ায় কয়েক বছরের মধ্যে এই খাতে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে।
প্রথম আলো: বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়িয়েছে। এটি ব্যবসা ও বিনিয়োগে কেমন প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন?
নূরুল আফছার: এক অঙ্কের সুদের হার ব্যবসা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। এখন সুদের হার পরিবর্তনের ফলে বিনিয়োগপ্রক্রিয়া কিছুটা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এ ছাড়া মূল্য সমন্বয়ের ফলে পণ্যের চাহিদায় পরিবর্তন আসবে। এতে আমাদের উৎপাদনপ্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হবে।
প্রথম আলো: ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ইলেকট্রনিক পণ্য খাতে কী পরিবর্তন আনা হয়েছে?
নূরুল আফছার: প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার প্রগতিশীল উৎপাদনব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিয়েছে। অর্থাৎ দেশে উৎপাদনের কার্যক্রম ঠিক রাখতে বিগত সময়ের কর ও অন্যান্য সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়েছে। তবে এসব সুবিধা আরও ৭ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করার দাবি জানাই। কারণ, শিল্পের বিকাশের জন্য নীতির ধারাবাহিকতা ও দীর্ঘস্থায়িত্ব থাকা প্রয়োজন। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও আকৃষ্ট হবেন। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা চীন থেকে সরে আসার চিন্তা করছেন। তাঁরা বাংলাদেশের ব্যাপারে আগ্রহী। আবার শ্রমিকসংকটের কারণে ইউরোপের অনেক দেশ এসব শিল্পে ভালো করতে পারছে না। ফলে সরকারের নীতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে বিদেশি বিনিয়োগ আরও বাড়বে।
প্রথম আলো: এ বাজারে স্থানীয় ফ্রিজ প্রস্তুতকারকেরা কেমন করছেন?
নূরুল আফছার: বর্তমানে দেশে চাহিদার প্রায় ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ ফ্রিজ স্থানীয়ভাবে উৎপাদন ও সরবরাহ হচ্ছে। খুব অল্প পরিমাণে ফ্রিজ সরাসরি আমদানি হচ্ছে। সরকারের নীতি–সহায়তা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এই শিল্প দেশের চাহিদা মিটিয়ে বড় পরিসরে রপ্তানিমুখী শিল্পে পরিণত হবে।
প্রথম আলো: কোরবানির ঈদে ফ্রিজ ও ফ্রিজারের চাহিদা কেমন থাকে?
নূরুল আফছার: কোরবানির ঈদের সময়েই বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ফ্রিজ বিক্রি হয়। এ জন্য ঈদ উপলক্ষে আমরা দেশের সব বিক্রয়কেন্দ্রে পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করেছি। এ ছাড়া স্ক্র্যাচ কার্ডের মাধ্যমে ‘একটি কিনলে একটি ফ্রি’ অথবা নগদ মূল্যছাড়সহ বিভিন্ন উপহারের ব্যবস্থা রেখেছি।