এসি চালালে বিদ্যুৎ বিল কতটা বেশি আসে

এককালীন ব্যয় করে এসি কিনে ফেলা অনেকের পক্ষেই সম্ভব। কিন্তু মাসে মাসে উচ্চ হারে বিদ্যুৎ বিল দেওয়া কঠিন। 

শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) সক্ষমতা কতটা দরকার, তা নির্ভর করে ঘরের আয়তনসহ নানা বিষয়ের ওপর। সেসব বুঝেই ক্রেতারা এসি কেনেন। গত রোববার রাজধানীর বিজয় সরণিতে ইলেকট্রার বিক্রয়কেন্দ্রেছবি: প্রথম আলো

তাপপ্রবাহের কারণে অনেকেই বাসার জন্য শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) কেনার পরিকল্পনা করছেন। তবে সে ক্ষেত্রে প্রথমেই যে চিন্তা মাথায় আসে, সেটি হলো বিদ্যুৎ বিল কতটা বাড়বে।

জমানো টাকা এককালীন ব্যয় করে এসি কিনে ফেলা অনেক পরিবারের পক্ষেই সম্ভব। কিন্তু মাসে মাসে উচ্চ হারে বিদ্যুৎ বিল দেওয়া কঠিন। বিক্রেতারা বলছেন, সঠিক এসিটি না কিনলে বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

দেশে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসে বাড়ানো হয়। তাতে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম বাড়ে সাড়ে ৮ শতাংশ। এর আগে ২০২৩ সালেও তিন দফায় ৫ শতাংশ করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছিল। সরকার আগামী তিন বছর ধরে বিদ্যুতের ভর্তুকি সমন্বয় করবে। আপাতত সমন্বয় মানে মূল্যবৃদ্ধি। কারণ, বিদ্যুৎ খাতে বিপুল ভর্তুকির বোঝা সরকারের ঘাড়ে রয়েছে।

দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ ভোক্তারা চাপে রয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে এসি কিনলে বিদ্যুৎ বিল কতটা বাড়বে, তা নিয়ে ধারণা থাকা প্রয়োজন।

ইলেকট্রনিক পণ্যের প্রতিষ্ঠানগুলো এসি তৈরির সময় বিদ্যুৎ খরচের বিষয়টি বিবেচনায় রাখে। বর্তমানে কোম্পানিগুলো বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ‘ইনভার্টার’ প্রযুক্তির এসি তৈরি করছে। গ্রাহকেরাও এ ধরনের এসি বেশি পছন্দ করছেন।

রাজধানীর উত্তরা এলাকার বাসিন্দা মো. হাসনাত সম্প্রতি দেড় টনের একটি ইনভার্টার প্রযুক্তির এসি কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘পরিচিতদের কাছে শুনেছি, ইনভার্টার এসিতে বিল কম আসে। তাই দাম কিছুটা বেশি হলেও ইনভার্টার এসি কিনেছি।’

কোম্পানিগুলো জানায়, ইনভার্টার প্রযুক্তিতে এসি প্রথমে পূর্ণ শক্তিতে চালু হয়। পরে ঘরের আরামদায়ক তাপমাত্রা ঠিক রেখে এসিটি শক্তি খরচ কমিয়ে আনে। এভাবে কম শক্তিতে চলার কারণে কম বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় এবং বিল কমে আসে।

ইলেকট্রনিক পণ্য বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রোমার্টের ন্যাশনাল সেলস ম্যানেজার মো. জুলহক হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ইনভার্টার প্রযুক্তির এসিতে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয় করা সম্ভব। এসির অন্যতম প্রধান অংশ হলো কম্প্রেসর। ইনভার্টার এসির কম্প্রেসরের স্থায়িত্ব বেশি দিন থাকে। এ ধরনের কম্প্রেসরে ১০ বছরের ওয়ারেন্টি (বিক্রয়োত্তর সেবার নিশ্চয়তা) সুবিধা দেয় কোম্পানিগুলো। বিপরীতে নন-ইনভার্টার এসির কম্প্রেসরে দেওয়া হয় ৩ থেকে ৫ বছরের ওয়ারেন্টি।

কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এক টন সক্ষমতার একটি ইনভার্টার এসিতে মাসে বিদ্যুৎ বিল আসে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, যেখানে একই সক্ষমতার নন-ইনভার্টার এসিতে বিল আসতে পারে দেড় হাজার টাকার মতো।

এক টনের বেশি সক্ষমতার এসিতে বিদ্যুৎ বিল আরও বেশি আসে। যেমন ইনভার্টার প্রযুক্তির এসিতে দেড় টনে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, দুই টনে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা, আড়াই টনে ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকা এবং তিন টনে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিল আসতে পারে। অন্যদিকে নন-ইনভার্টার প্রযুক্তির এসির ক্ষেত্রে দেড় টনে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা, দুই টনে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা, আড়াই টনে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা এবং তিন টনে ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিল আসতে পারে।

এসি ব্যবহার করলে আপনার বাসায় মোট বিদ্যুৎ ব্যবহার বাড়বে। বেশি ইউনিট ব্যবহার করলে বিদ্যুতের দামও ভিন্ন হয়। ফলে সার্বিকভাবে বিদ্যুৎ বিল একটু বেশি আসতে পারে।

এসি ব্যবহারে বাড়তি বিদ্যুৎ খরচ এড়াতে গ্রাহকদের কিছু পরামর্শ দিয়েছেন ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকসের সার্ভিস বিভাগের প্রধান এ এস এম রোকনুজ্জামান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখলে এসির বিদ্যুৎ খরচ কমানো যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এসির কার্যক্ষমতা ঠিক রাখা। এ জন্য দক্ষ টেকনিশিয়ান দ্বারা এসির বাষ্পীভবন ও কনডেনসার কয়েলের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি গ্রাহকেরা নিয়মিত এসির এয়ার ফিল্টার পরিষ্কার করতে পারেন।

রুমের প্রয়োজন অনুসারে এসির সঠিক তাপমাত্রা নির্বাচন করাও গুরুত্বপূর্ণ। এসি চলার সময় ঘরের জন্য দরজা-জানালা ভালো করে লাগানো উচিত। এগুলো করা গেলে এসির কর্মক্ষমতা ঠিক থাকে ও বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। বর্তমানে অনেক এসিতে ‘স্লিপ মোড’ ও ‘টাইমার’ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি ব্যবহারে নির্দিষ্ট সময় পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসি বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য এই প্রযুক্তিগুলো ব্যবহারের পরামর্শ দেন বিপণনকারীরা।