পোশাক রপ্তানিতে ভারত ইতিবাচক ধারায় ফিরলেও পারেনি বাংলাদেশ

বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক শিল্পগোষ্ঠী প্যাসিফিক জিনস গ্রুপের কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকেরা।ফাইল ছবি: প্রথম আলো

তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিযোগীদের তুলনায় বেশ কিছুদিন ধরেই পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। বড় এই বাজারে চলতি বছর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমলেও ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও পাকিস্তানের বাড়ছে। সর্বশেষ ভারতের পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে।

চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে বাংলাদেশ এই বাজারে ৫৪১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করলেও তা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৬ শতাংশ কম। অন্যদিকে ভারতের রপ্তানি বেড়েছে দশমিক ৪৬ শতাংশ। একইভাবে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও পাকিস্তানের পোশাক রপ্তানিও বেড়েছে।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৫ হাজার ৯৩২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছেন। এই আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ কম।

২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি দ্রুত বাড়তে থাকে। ওই বছরের জুনে দেশটির মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়ায়। মূল্যস্ফীতি ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছানোর কারণে নিত্যপণ্য ছাড়া অন্য পণ্য কেনাকাটা কমিয়ে দেন ভোক্তারা। দেশটি বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ায় মূল্যস্ফীতি কমে। তারপরও গত বছর দেশটিতে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৪ দশমিক ১ শতাংশ। সে কারণে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকেরা তার আগের বছরের তুলনায় ২২ শতাংশ কম তৈরি পোশাক আমদানি করে। ফলে শীর্ষ পাঁচ রপ্তানিকারক দেশের পোশাক রপ্তানি ২১ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।

অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে ৫৪১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ কম। গত বছর এই বাজারে বাংলাদেশ ৭২৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছিল। তখন রপ্তানি কমেছিল ২৫ শতাংশ। বাজারটিতে বাংলাদেশ তৃতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানিকারক। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পোশাকের বাজার হিস্যা ৯ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।

এই বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি যখন কমছে, তখন একাধিক প্রতিযোগী দেশ ভালো করছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক ভিয়েতনাম। চলতি বছরের নয় মাসে ১ হাজার ১২১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে দেশটি। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তাদের রপ্তানি বেড়েছে ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। বর্তমানে বাজারটির পৌনে ১৯ শতাংশ ভিয়েতনামের দখলে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের পোশাক রপ্তানি গত বছর ২১ শতাংশ কমেছিল। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসেও দেশটির রপ্তানি কমেছে। তবে সেপ্টেম্বরের শেষে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সব মিলিয়ে চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে ৩৬৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে ভারত। তাদের প্রবৃদ্ধি দশমিক ৪৬ শতাংশ। এই বাজারে ভারত চতুর্থ শীর্ষ রপ্তানিকারক। তার পরের অবস্থানে আছে ইন্দোনেশিয়া।

একইভাবে কম্বোডিয়া ও পাকিস্তানের পোশাক রপ্তানিও বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে কম্বোডিয়া ২৭৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে পাকিস্তান রপ্তানি করেছে ১৫৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। তাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৪১ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষস্থান ধরে রাখলেও চীন ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি এখনো। বর্তমানে চীন এই বাজারের ২১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে ১ হাজার ২৫১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে দেশটি। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ৯৫ শতাংশ কম।