দেশের বস্ত্র খাত তারল্যসংকটে পড়েছে

বিটিএমএ

বস্ত্রকলগুলো ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্রের (এলসি) মাধ্যমে তৈরি পোশাকশিল্পে সুতা ও কাপড় সরবরাহ করে থাকে। তবে ঋণপত্র ইস্যু করা বাণিজ্যিক ব্যাংক মেয়াদ পূর্ণ হওয়া বিলের অর্থ যথাসময়ে পরিশোধ করছে না। কোনো কোনো বস্ত্রকলের বিলের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর দুই বছর পার হলেও তা পরিশোধ করছে না ব্যাংক। এতে অনেক বস্ত্রকলে তারল্যসংকট দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে লেখা এক চিঠিতে এমন দাবি করেছেন বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল। ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্রের বিপরীতে সরবরাহ করা পণ্যের বিলের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে অর্থ পরিশোধ করতে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়েছেন তিনি। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক, বিটিএমএ (বাংলাদেশ বস্ত্রকল সমিতি) ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠনের প্রস্তাবও দিয়েছেন শওকত আজিজ।

এ ছাড়া ঋণের কিস্তি পরিশোধে শিথিল, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) আংশিক সমন্বয় নিশ্চিতকরণ, শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন ও গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে ইন্টারেস্ট অনলি লোনের (নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শুধু সুদ পরিশোধের সুযোগ) প্রচলনসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়েছেন বিটিএমএ সভাপতি। তিনি গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দাবিদাওয়াগুলো তুলে ধরেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিটিএমএর সহসভাপতি আবুল কালাম, সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।

ব্যাংকঋণের মান নির্ধারণে আবার আন্তর্জাতিক চর্চা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সে অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কোনো ঋণ পরিশোধ না হলে তা মেয়াদোত্তীর্ণ হিসেবে গণ্য হবে। এরপর অনাদায়ি হিসেবে ওই ঋণ ৯০ দিন অতিক্রম করলে খেলাপি হয়ে যাবে। এই নীতিমালা আগামী বছরের এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়ার পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তটি শিথিল করার দাবি জানিয়েছে বিটিএমএ।

বিটিএমএ বলছে, রাশিয়া-ইউক্রেন ও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ, ২৫০ শতাংশ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, শ্রমিকদের বেতন ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, শ্রম–অসন্তোষ এবং গ্যাস-বিদ্যুতের অভাব এসব কারণে বস্ত্রকলগুলো উৎপাদনসক্ষমতার ৫০-৬০ শতাংশের বেশি ব্যবহার করতে পারছে না। সে কারণে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ঋণ পরিশোধে ছয় মাস সময় চায় সংগঠনটি।

ইডিএফের ঋণ পরিশোধের সহজীকরণ চায় বিটিএমএ। সংগঠনটি বলছে, ইডিএফের ঋণের আংশিক সমন্বয় ও অগ্রিম পেমেন্ট গ্রহণ করছে না বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ফলে ইডিএফের ঋণ পরিশোধের সমস্যা সমাধানে আংশিক সমন্বয় ও অগ্রিম পেমেন্ট নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে তারা।

মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে যেসব আমদানিনির্ভর শিল্প খাত ক্ষতির মুখে পড়েছে, তারা ঋণ পরিশোধে আট বছর পর্যন্ত সময় পাবে। এসব ঋণ আলাদাভাবে হিসাব করে এক বছরের বিরতিসহ প্রতি মাসে বা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পরিশোধ করা যাবে। যেসব আমদানিকারক বিলম্বে ঋণ পরিশোধের শর্তে পণ্য আমদানি করেছিলেন এবং ক্ষতির শিকার হয়েছেন, তাঁরাই শুধু এ সুযোগ পাবেন। এ ব্যাপারে গত ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করে। বস্ত্র খাতেও এই সুবিধা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিটিএমএ।

বিটিএমএ বলেছে, বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার মূল্যমান কমায় বস্ত্র খাতসহ উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানা কাঁচামাল আমদানি করতে গিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এতে চলতি মূলধনের ঘাটতিতে পড়েছে তারা। এমন পরিস্থিতিতে সরকার বিভিন্ন শিল্পকে সহায়তা দিতে যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেখানে বস্ত্রকলকে না রাখা খুবই দুঃখজনক। অথচ তৈরি পোশাক দেশের শীর্ষ রপ্তানি আয়ের খাত। আর তৈরি পোশাকশিল্পে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের জোগান দেয় বস্ত্রকল। তা ছাড়া দেশের ১৭ কোটি মানুষের পোশাকের চাহিদা মেটানোর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে বস্ত্র খাত।

বিটিএমএ বলেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বেতন-ভাতা ও গ্যাস-বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করা অনেক বস্ত্রকলের পক্ষে কঠিন। সে জন্য তারা ‘ইন্টারেস্ট অনলি লোন’ চালুর প্রস্তাব করেছে। এ ব্যবস্থা গ্রাহকেরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শুধু সুদ পরিশোধ করেন এবং মূল ঋণের অর্থ পরিশোধে সময় পান। এটি যুক্তরাজ্যে বেশ জনপ্রিয়। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আগামী দুই বছরের জন্য সব ঋণের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাটি করা যেতে পারে।