এফবিসিসিআই
নেতৃত্ব নির্বাচনে ছয় বছর পর ভোট ফিরছে, তা–ও আংশিক
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনটির ২৩ পরিচালক নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন সদস্যরা। বাকি ২৩ জন সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হওয়ার পথে।
অর্ধযুগ পর দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদের একাংশ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রদানের সুযোগ পাচ্ছেন সাধারণ ভোটাররা। যদিও বেশির ভাগ পদে সমঝোতার ভিত্তিতে পরিচালক নির্বাচন করার সব আয়োজন শেষ।
সব পদে নির্বাচন না হওয়ায় নেতৃত্ব নির্বাচনে এবারও পুরোপুরি ভোটের ধারায় ফিরতে পারল না এফবিসিসিআই। সংগঠনটিতে সর্বশেষ ভোট হয় ২০১৭ সালে, তা-ও আংশিক। ওই সময় সভাপতি নির্বাচিত হন শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। সেবার পরিচালক পদে চেম্বার অংশে ভোট ছাড়াই প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। পণ্যভিত্তিক সংগঠন বা অ্যাসোসিয়েশন অংশে ভোট হয়েছিল। পরের দুই মেয়াদে নির্বাচন ছাড়াই সভাপতি হন যথাক্রমে শেখ ফজলে ফাহিম ও মো. জসিম উদ্দিন। নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট না করার এফবিসিসিআইয়ের উদাহরণ অনুসরণ করছে অনেক পণ্যভিত্তিক ব্যবসায়ী সংগঠন। সেগুলোতেও বর্তমানে সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি হচ্ছে।
গত বুধবার রাতে বস্ত্রকলমালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সাবেক সভাপতি এ মতিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন নির্বাচনী বোর্ড এফবিসিসিআইয়ের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। ওই দিন ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। চেম্বার গ্রুপের ছয় প্রার্থী তাঁদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। ফলে বর্তমানে চেম্বার গ্রুপের ২৩ পরিচালক পদের বিপরীতে সমানসংখ্যক প্রার্থী থাকায় ভোটের প্রয়োজন হবে না। অন্যদিকে অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ২৪ প্রার্থী নিজেদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখন এই গ্রুপে ২৩ পদের বিপরীতে ৪৯ প্রার্থী থাকায় সেখানে ভোট হবে। ৩১ জুলাই এফবিসিসিআইয়ের ২০২৩-২৫ মেয়াদের পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনের ভোট হবে। ভোটারসংখ্যা চেম্বার গ্রুপে ৪৬৯ ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপে ১ হাজার ৯৯০।
এফবিসিসিআইয়ের এবারের নির্বাচনে ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ ও সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ নামে দুটি প্যানেল রয়েছে। ঐক্য পরিষদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি চেম্বার গ্রুপ থেকে মনোনীত পরিচালক হচ্ছেন। অন্যদিকে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ।
এফবিসিসিআইয়ের ৮০টি পরিচালক পদ দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে জেলাভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠন বা চেম্বার ও অন্যান্য চেম্বার থেকে ৪০ জন পরিচালক হন। বাকি পদ পণ্যভিত্তিক ব্যবসায়ী সংগঠনের জন্য সংরক্ষিত। যদিও চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে ৩৪ জন মনোনীত পরিচালক হন। আর চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন থেকে ২৩ জন করে ৪৬ জন সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন।
অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ২৩ পদের জন্য ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ ও সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ সমানসংখ্যক, অর্থাৎ ২৩ জন করে ৪৬ জন প্রার্থী দিয়েছে। বাকি তিনজন প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অন্যদিকে চেম্বার গ্রুপের ২৩ পরিচালক পদের জন্য শুধু ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের প্রার্থী রয়েছে। আর চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে ৩৪ মনোনীত পরিচালক পদের বিপরীতে প্রার্থী আছেন ৩২ জন। ফলে দুটি পদ শেষ পর্যন্ত ফাঁকা থাকবে বলে জানা যায়।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কে হবেন, সেটি দীর্ঘদিন ধরে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে চূড়ান্ত করা হয়। এবার সভাপতি পদে চট্টগ্রাম চেম্বারের বর্তমান সভাপতি মাহবুবুল আলম সবুজ সংকেত পেয়েছেন। গত ২০ জুন তাঁকে এফবিসিসিআইয়ের পরবর্তী সভাপতি হিসেবে সমর্থন দিয়েছেন ফেডারেশনের সাবেক সভাপতিসহ বিভিন্ন চেম্বার ও পণ্যভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠনের নেতারা। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
ইতিমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরিচালক নির্বাচিত হওয়ায় মাহবুবুল আলমের সভাপতি হওয়া মোটামুটি নিশ্চিত। নিয়ম অনুযায়ী, পরিচালক নির্বাচিত হওয়ার পর সভাপতি ও সাত সহসভাপতির ভোট হয়। তবে ভোটের আগেই ৫৫ পরিচালক পদ মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বাধীন প্যানেলের হাতে রয়েছে।
জানতে চাইলে ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মাহবুবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের প্যানেলটি সাবেক সভাপতি ও সহসভাপতিদের সমর্থিত প্যানেল। ফলে যেখানে আমরা ভোটের জন্য সভা করছি, সেখানে বিপুল সমর্থন পাচ্ছি। আমাদের প্রত্যাশা, আমরা পূর্ণ প্যানেলে বিজয়ী হতে পারব।’
এদিকে অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ২৩ পরিচালক পদের ভোটের জন্য ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ ও সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের প্রার্থীরা সাধারণ ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইছেন। তবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ভোটারদের উপহার দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রার্থীদের বিপক্ষে। এ বিষয়ে নির্বাচন বোর্ড গত রোববার প্রার্থীদের সতর্ক করে নোটিশও দিয়েছে।
জানতে চাইলে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের আহ্বায়ক মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাধারণ সদস্যদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচিত হলে সংগঠন পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হয়।’