প্রথম আলো: বছরে আপনারা কত ফ্রিজ ও ফ্রিজার বিক্রি করেন?
রিতেশ রঞ্জন: বছরে আমাদের ৩৫ হাজার ফ্রিজ ও ফ্রিজার বিক্রি হয়।
প্রথম আলো: আপনারা এখন কি দেশে ফ্রিজ উৎপাদন করছেন?
রিতেশ রঞ্জন: দেশের বাজারে বিক্রির জন্য আমরা ওয়ার্লপুল ও হিটাচি ফ্রিজ উৎপাদন করি। ট্রান্সকম ডিজিটালের বেশির ভাগ রেফ্রিজারেটরই স্থানীয়ভাবে কেনা বা সংযোজন করা হয়।
প্রথম আলো: রপ্তানি সম্ভাবনা কেমন দেখছেন?
রিতেশ রঞ্জন: আমরা এখন পর্যন্ত বিদেশে রপ্তানি করছি না, তবে ভবিষ্যতে রপ্তানি করতেও পারি, এই বিষয়ে উন্মুক্ত।
প্রথম আলো: দেশের কোন ধরনের এলাকায় (সিটি করপোরেশন, জেলা শহর, উপজেলা, গ্রাম) আপনাদের পণ্য (ফ্রিজ ও ফ্রিজার) বেশি বিক্রি হয়?
রিতেশ রঞ্জন: ট্রান্সকম ডিজিটাল নামে দেশের ২৮টি জেলায় আমাদের খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র আছে। তবে নিজস্ব পরিবেশক ও নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেশের সব জেলা ও উপজেলায় আমাদের উপস্থিতি আছে।
প্রথম আলো: বছরের কোন সময়ে (মৌসুম) বেশি বিক্রি হয়? তখন কী পরিমাণে বিক্রি হয়?
রিতেশ রঞ্জন: বছরের মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার বেশি বিক্রি হয়, তবে ঈদুল আজহার সময় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়।
প্রথম আলো: আপনাদের ফ্রিজ ও ফ্রিজারে কী কী ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে?
রিতেশ রঞ্জন: ফ্রস্ট থেকে শুরু করে নন-ফ্রস্ট—দুই ধরনের ফ্রিজই আছে। এ ছাড়া অন্যান্য ব্র্যান্ডের মতো হিটাচি ফ্রিজে প্রযুক্তিগত অনেক নতুনত্ব এসেছে, যেমন হিটাচি এমন রেফ্রিজারেটর এনেছে, যা ১৬০ থেকে ৩০০ ভোল্ট পর্যন্ত ওঠানামা নিতে পারে। এটা অনেক বড় বিষয়। কারণ, এতে ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার প্রয়োজন হয় না। রেফ্রিজারেটর ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থায় প্রভাব না ফেলেই ভোল্টেজ ওঠানামার প্রভাব মানিয়ে নেওয়া যায়। ফলে এটি অনেক বড় পরিবর্তন বলেই আমি মনে করি। বাইরের তাপমাত্রা ৫৫ থেকে ৬০ ডিগ্রি হলেও খাবার সংরক্ষণ ও ঠান্ডা রাখার ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়ে না। দাবদাহের মধ্যেও আমাদের রেফ্রিজারেটর ঠিকঠাক কাজ করেনি, এমন অভিযোগ নেই।
প্রথম আলো: কোন ধরনের গ্রাহকদের জন্য আপনারা ফ্রিজ উৎপাদন করেন? সর্বনিম্ন কত থেকে সর্বোচ্চ কত দাম পর্যন্ত ফ্রিজ ও ফ্রিজার আছে?
রিতেশ রঞ্জন: সব ধরনের গ্রাহকের জন্য আমাদের ফ্রিজ আছে। ২০০ লিটার থেকে শুরু করে ৭২০ লিটার পর্যন্ত। রেফ্রিজারেটরের এমন বৈচিত্র্য আর কোথাও নেই। দাম ৩১ হাজার ৯০০ টাকা থেকে ৬ লাখ ৪ হাজার ৯০০ টাকা পর্যন্ত।
প্রথম আলো: ফ্রিজ কেনার ক্ষেত্রে কিস্তিসহ কী কী সুবিধা আছে? ওয়ারেন্টিসহ আরও কী কী ধরনের সুবিধা আছে? বিক্রয়–পরবর্তী সেবা কেমন?
রিতেশ রঞ্জন: ৩৫টি ব্যাংকের সঙ্গে ট্রান্সকম ডিজিটালের চুক্তি আছে এবং ৩৬ মাস পর্যন্ত ইএমআই সুবিধা আছে। ৯টি ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের বিশেষ চুক্তি আছে—এসব ব্যাংকের কার্ড ব্যবহারে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ ছাড় বা ক্যাশব্যাক সুবিধা আছে। এ ছাড়া আমরা আইপিডিসির সহায়তার গ্রাহকদের অগ্রাধিকারমূলক ক্রয়সুবিধা দিচ্ছি, ১২ মাস পর্যন্ত বিনা সুদে এই সুবিধা পাওয়া যায়। এ ছাড়া বিক্রয়–পরবর্তী পর্যায়ে আমরা গ্রাহকদের এক দরজায় সেবা দিই। ১৬২১২ নম্বরে ফোন করে গ্রাহকেরা স্বল্পতম সময়ে প্রয়োজনীয় সেবা নিতে পারেন।
প্রথম আলো: করোনা ও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিকভাবে চিপ, যন্ত্রাংশ ও সরবরাহ প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটেছে। এতে দেশের ফ্রিজার খাতে কেমন প্রভাব পড়েছে? বিশেষ করে দামের ক্ষেত্রে?
রিতেশ রঞ্জন: এখন পর্যন্ত সরবরাহের ক্ষেত্রে আমরা সমস্যায় পড়িনি, কিন্তু গত এক বছরে দাম অনেকটা বেড়ে গেছে।
প্রথম আলো: আগামী ১০ বছরে দেশের ফ্রিজ খাত কতটুকু সম্প্রসারিত হবে বলে মনে করেন?
রিতেশ রঞ্জন: রেফ্রিজারেটরের বাজার বড় হচ্ছে। আমরা আশা করছি, আগামী ছয়-সাত বছরের মধ্যে এই খাতের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি হবে, সেই সঙ্গে নতুন প্রযুক্তি আসবে, পণ্যের ক্ষেত্রেও উদ্ভাবন ঘটবে।
প্রথম আলো: পুরোনো বা অব্যবহৃত ফ্রিজ কোথায় যাচ্ছে, সেকেন্ডারি কোনো বাজার তৈরি হয়েছে কি না?
রিতেশ রঞ্জন: পুরোনো ফ্রিজের বদলে আমরা অনেক সময় নতুন ফ্রিজ দিই। সেই পুরোনো ফ্রিজগুলো আমরা কিছু মানুষের কাছে বিক্রি করি, যাঁরা আবার সেগুলো কিছুটা সারাই করে পুরোনো ফ্রিজের বাজারে বিক্রি করে দেন।