বিকেএমইএতে ভোটের হাওয়া, প্রার্থী হতে লাগবে ২ লাখ টাকা

বিকেএমইএ

প্রায় এক যুগ পর নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে অবশেষে ভোট ফেরার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আগামী ১০ মে সংগঠনটির ৩৫টি পরিচালক পদে ভোট গ্রহণ হবে। এই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে একজন ব্যবসায়ীকে ২ লাখ টাকায় মনোনয়নপত্র কিনতে হবে।

চলতি মাসের শুরুতে বিকেএমইএর ২০২৫-২৭ মেয়াদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান সফিউল্লা চৌধুরী। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৫ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। ৫ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন আগ্রহী ব্যবসায়ীরা। ১৯ এপ্রিল চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন বোর্ড।

বিকেএমইএর পরিচালক পদের মনোনয়ন ফি ২ লাখ টাকা হলেও সভাপতি, নির্বাহী সভাপতি ও সহসভাপতি পদে আরও বেশি অর্থ গুনতে হবে নির্বাচিতদের। সভাপতি পদে ৩ লাখ, নির্বাহী সভাপতি পদে ২ লাখ ৭৫ হাজার এবং সহসভাপতি পদের মনোনয়নপত্র কিনতে লাগবে আড়াই লাখ টাকা। সংগঠনটিতে একজন করে সভাপতি, নির্বাহী সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ছাড়া ছয়টি সহসভাপতি পদ রয়েছে।

আরও পড়ুন

২০১০ সালের পর বিকেএমইএতে সরাসরি ভোটে নেতা নির্বাচন হয়নি। সেবার নির্বাচনে জয়ী হয়ে সভাপতি পদে বসেন নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের এ কে এম সেলিম ওসমান। পরে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সংসদ সদস্য হোন। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সমঝোতা করে ছয়বার বিকেএমইএর সভাপতির পদে ছিলেন। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিভিন্ন চাপে পদত্যাগ করেন সেলিম ওসমান। ২৫ আগস্ট সংগঠনটির সভাপতির পদে বসেন মোহাম্মদ হাতেম। তার আগে তিনি নির্বাহী সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সব মিলিয়ে সেলিম ওসমান যে সাত মেয়াদে সভাপতি ছিলেন, তার মধ্যে পাঁচ মেয়াদে নির্বাহী সভাপতি ও সহসভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ হাতেম।

জানা যায়, সেলিম ওসমান সভাপতির পদ আঁকড়ে থাকতে প্রতিবারই বিভিন্ন কৌশলে সরাসরি ভোটকে পাশ কাটিয়ে সমঝোতার কমিটি করেন। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জে সংগঠনের প্রধান কার্যালয় নির্মাণের কারণ দেখিয়েও কমিটির মেয়াদ ছয় মাস বাড়িয়েছিলেন সেলিম ওসমান।

বিকেএমইএর সভাপতি পদ ধরে রাখতে ২০১৯ সালে ভিন্ন কৌশল নিয়েছিলেন সেলিম ওসমান। সেবার তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়েছিলেন, নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তবে তাঁর অনুসারীরা নিশ্চিত করেন, কোনো শিল্পমালিক যাতে মনোনয়নপত্র না কেনেন। ফলে দুই দিন একটি মনোনয়নপত্রও বিক্রি হয়নি। পরে সেলিম ওসমানের অনুসারী ব্যবসায়ীরা তাঁকে মনোনয়নপত্র কিনতে অনুরোধ করেন। তারপর যে কয়টা পদ আছে, সে কয়টা মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়। শেষ পর্যন্ত সেলিম ওসমান সভাপতি হোন।

এ ছাড়া ২০২১ সালে ৩৫টি পরিচালক পদের বিপরীতে সেলিম ওসমানের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত নিট ফোরামের সমানসংখ্যক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এভাবে সমঝোতার ভিত্তিতে আবার সভাপতি হন তিনি

সর্বশেষ ২০২৩ সালে সমঝোতার কমিটি করার জন্য ২০২১-২৩ মেয়াদের পর্ষদের সব সদস্যকে ঢাকায় নিজের বাসভবনে ডাকেন সেলিম ওসমান। সবাইকে তিনি বার্তা পাঠান, সভায় না এলে মনোনয়নবঞ্চিত থাকতে হবে। শেষ পর্যন্ত চারজন অনুপস্থিত থাকেন। তাঁদের পরিবর্তে নতুন চারজনসহ ৩৪ প্রার্থীকে নিয়ে ২০ জুলাই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন সেলিম ওসমান। ওই দিন এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করে নির্বাচিত ৩৪ পরিচালকের তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন বোর্ড। পরে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে নির্বাচিত পরিচালকেরা সভাপতি, নির্বাহী সভাপতি এবং সাতজন সহসভাপতি নির্বাচিত করেন। এভাবেই অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে পুরো নির্বাচনের প্রক্রিয়া মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়। সভাপতি হন সেলিম ওসমান।

ভোটের হাওয়া কোন দিকে
তফসিল ঘোষণা হলেও বিকেএমইএতে ভোটের হাওয়া শুরু হয়নি। তবে সম্মিলিত নিট ফোরামের প্যানেল লিডার হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন মোহাম্মদ হাতেম। আর কোনো প্যানেল হবে কি না, সেটি জানা যায়নি।

নির্বাচন নিয়ে মোহাম্মদ হাতেম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিকেএমইর সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা করার সুযোগ পাচ্ছেন না। সদস্যদের সেই সুযোগ করে দিতে আমরা আগাম নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তিনি জানান, তাঁর নেতৃত্বাধীন পর্ষদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী সেপ্টেম্বরে।

আরও পড়ুন