ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম
ফ্রিজের বড় বাজার এখন গ্রামে
দেশের ৫৩ শতাংশ পরিবারে এখন ফ্রিজ রয়েছে। গ্রামে বিদ্যুৎ ও সাশ্রয়ী দাম বাড়িয়েছে ফ্রিজের চাহিদা।
দেশে বছরে যত রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ বিক্রি হয়, তার বড় অংশ হয় গ্রামে। উপজেলা পর্যায়ে ও বড় ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে ইলেকট্রনিকস পণ্যের দোকান।
বিক্রেতারা বলছেন, গ্রামে ঘরে ঘরে এখন বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। পরিবারগুলো প্রবাসী আয় পাচ্ছে। কেউ কেউ ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে ফ্রিজ কিনছে। সচ্ছল গৃহস্থ পরিবার ফ্রিজ কিনছে তার কৃষি খাতের আয় দিয়ে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস প্রতিবেদন (২০২৩) অনুযায়ী, দেশের ৫৩ শতাংশের বেশি খানায় এখন ফ্রিজ রয়েছে, যা ২০২১ সালে ছিল ৪৫ শতাংশের মতো। উল্লেখ্য, খানা বলতে বোঝায় মূলত একটি পরিবারকে।
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার শিবরামপুর গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম চার বছর আগে একটি ফ্রিজ কেনেন। এর আগে তাঁদের বাড়িতে কারও ফ্রিজ ছিল না। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে ১০টি পরিবার বাস করে। এখন বাড়ির প্রতিটি পরিবারে একটি করে ফ্রিজ রয়েছে।’
বিদ্যুৎ–সুবিধায় বেড়েছে ফ্রিজের চাহিদা
বিবিএসের ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, দেশের ৯৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ খানা (পরিবার) জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ–সুবিধার আওতায় এসেছে। ফ্রিজ বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মনে করে, বিদ্যুৎ যাওয়ার কারণেই ফ্রিজের চাহিদা বেড়েছে। এর পাশাপাশি গ্রামের মানুষের ফ্রিজ কেনার মতো আর্থিক সক্ষমতাও তৈরি হয়েছে।
দেশের শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম উৎপাদন ও বিপণকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের ফ্রিজ বিভাগের প্রধান ব্যবসায়িক কর্মকর্তা বা চিফ বিজনেস অফিসার তাহসিনুল হক প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামগঞ্জে ফ্রিজের বাজার বাড়ছে। ওয়ালটনের ফ্রিজের প্রায় ৭০ শতাংশ বিক্রি হয় উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে এবং প্রায় ৩০ শতাংশ বিক্রি হয় শহরাঞ্চলে।
অবশ্য গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং বা বিদ্যুৎ–বিভ্রাট বেশি। আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগেও বিদ্যুতের সংকটে বেশি পড়েন গ্রামাঞ্চলের মানুষ। ঘূর্ণিঝড় রিমালের পর অনেক গ্রামে তিন থেকে চার দিন বিদ্যুৎ ছিল না। ফলে অনেকের ফ্রিজে থাকা খাদ্যদ্রব্য নষ্ট হয়েছে।
গ্রামগঞ্জের বিদ্যুতের এই সংকটের বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে ফ্রিজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ না থাকলেও দীর্ঘ সময় খাবার ভালো রাখার প্রযুক্তিযুক্ত ফ্রিজ তৈরি করছে। ওয়ালটন বলছে, ভালোভাবে হিমায়িত হলে ১৬০ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ না থাকলেও তাদের তৈরি ফ্রিজে খাবার ভালো থাকে।
ফ্রিজ উৎপাদনকারীরা গ্রামের মানুষদের ‘ইনভার্টার’ প্রযুক্তির ফ্রিজ কেনার পরামর্শ দেয়। কারণ, এ ধরনের ফ্রিজ বিদ্যুৎসাশ্রয়ী।
আমাদের বাড়িতে ১০টি পরিবার বাস করে। এখন বাড়ির প্রতিটি পরিবারে একটি করে ফ্রিজ রয়েছে।
সাধ্যের মধ্যে ফ্রিজ
শুধু বিদ্যুৎ ও মানুষের আয়বৃদ্ধি নয়, গ্রামে ফ্রিজ বিক্রি বৃদ্ধির আরেকটি কারণ সাশ্রয়ী মূল্য। ৩০ হাজার টাকার আশপাশের দামেই এখন মোটামুটি আকারের ফ্রিজ পাওয়া যায়। কোম্পানিগুলোর তথ্য অনুযায়ী, গ্রামাঞ্চলে সাশ্রয়ী ফ্রিজের চাহিদাই বেশি। ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা দামের ফ্রিজ গ্রামে বেশি বিক্রি হয়।
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার ইলেকট্রনিক সরঞ্জামের বিক্রয়কেন্দ্র ভিশন এম্পোরিয়ামের ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের দোকান থেকে গ্রামের মানুষ বেশি ফ্রিজ কেনেন। গ্রামের মানুষ সাধারণত মৌসুমের সময় ধান বিক্রি করে, কেউ গবাদিপশু বিক্রি করে ফ্রিজ কেনেন।