দুই প্রতিষ্ঠানের চুক্তি সই
ব্র্যাকের দুই চা–বাগান সিটির হাতে
সিটি গ্রুপ একসময় ভোগ্যপণ্য উৎপাদন করত। এরপর গ্রুপটি লবণ, সিমেন্ট, এলপিজি ও কাগজশিল্প হয়ে এখন চায়ে বিনিয়োগ করছে।
এবার সিটি গ্রুপের সাম্রাজ্য বিস্তৃত হচ্ছে চায়ের রাজ্যে। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে তিনটি বড় চা–বাগান কিনে নিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠীটি। এর মধ্যে গতকাল সোমবার বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক থেকে একসঙ্গে দুটি চা–বাগান কিনেছে তারা। সব মিলিয়ে সিটি গ্রুপের মালিকানায় এখন ছয়টি চা–বাগান রয়েছে। আর বাজারে তাদের চায়ের ব্র্যান্ড নাম হচ্ছে ‘বেঙ্গল টি’।
জানা গেছে, সিটি গ্রুপ গত অক্টোবরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত জুলেখা নগর চা–বাগান কিনেছে। গতকাল ব্র্যাকের কাছ থেকে তাদের চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির কর্ণফুলী চা–বাগান এবং একই জেলার রাঙ্গুনিয়ার কোদালা চা–বাগান কেনার ব্যাপারে চুক্তি করেছে বড় এই গ্রুপ। রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে এই চুক্তি সই হয়। এর আগে ২০১৫ সালে ব্র্যাকের কাছ থেকে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর চান্দপুর বেলগাঁও চা–বাগান কিনে নিয়েছিল সিটি গ্রুপ। তবে নতুন দুটি চা–বাগানের শেয়ার কত টাকায় কেনাবেচা হয়েছে, তা দুই পক্ষের কেউই বলতে চাননি।
বর্তমানে ব্র্যাকের হাতে শুধু রয়েছে কৈয়াছড়া চা–বাগান। ব্র্যাক কেন চা–বাগান ছেড়ে দিচ্ছে, তা জানতে চাইলে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘ মেয়াদে আমরা চা–শিল্পে থাকতে চাই না। কারণ, এখানে মুনাফা হয় খুবই কম। উল্টো লোকসান গুনতে হচ্ছে। আমরা মূল্যায়ন করে দেখেছি, চা–শিল্প কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই শিল্পে থাকতে হলে প্রচুর সময় দিতে হয় এবং এ জন্য দক্ষ জনবল থাকা দরকার। সে সময় দেওয়ার মতো আমাদের পর্যাপ্ত ও দক্ষ জনবল নেই। তাই চা–বাগান বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।’
আসিফ সালেহ আরও বলেন, ‘আমরা কৈয়াছড়া চা–বাগানকে মডেল চা–বাগানে রূপান্তর করতে চাই। ভবিষ্যতে আমাদের সব মনোযোগ থাকবে কৈয়াছড়া চা–বাগানকে ঘিরেই।’
জানা গেছে, কৈয়াছড়া চা–বাগানটি শতবর্ষী। নানা কোম্পানির হাত ঘুরে ব্র্যাকের হাতে এই চা–বাগানটি আসে ১৯৯৩ সালে। চা বিক্রির গড় দরে এটি প্রতিবছরই শীর্ষ পাঁচের মধ্যে অবস্থান থাকে। এখানকার চায়ের কেজিপ্রতি গড় বিক্রয়মূল্য যেখানে ২৯৭ টাকা, সেখানে অন্য বাগানের চা বিক্রি হয় গড়ে ১৯৬ টাকা কেজি। অর্থাৎ অন্যান্য কোম্পানির চেয়ে কৈয়াছড়ার চায়ের দাম কেজিতে ১০০ টাকা বেশি।
সিটি গ্রুপ চা–শিল্পে বড় হতে চায়। এই খাতে ভবিষ্যতে বিনিয়োগ আরও বাড়ানো হবে।পবন চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টা, সিটি গ্রুপ
চা–শিল্পে একসময় বিদেশিদের আধিপত্য থাকলেও এখন তা অনেকটা দেশীয় কোম্পানিগুলোর দখলে। সিটি গ্রুপও দিন দিন এই খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন ছয়টি বাগানের মোট আয়তন ১৬ হাজার একরের বেশি। ২০১৫ সাল পর্যন্ত সারা দেশে মাত্র দুটি চা–বাগান ছিল তাদের। একটি ছিল মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার সাগরনাল চা–বাগান, অন্যটি শ্রীমঙ্গলের নাহার চা–বাগান।
দেশের শীর্ষ ২০টি চা–বাগানের মধ্যে আয়তনের দিক থেকে সিটি গ্রুপের কর্ণফুলী চা–বাগান (৬,৫০০ একর) চতুর্থ, চান্দপুর বেলগাঁও চা–বাগান পঞ্চম (৩,৫০০ একর) ও কোদালা চা–বাগান ষষ্ঠ (২,৫০০ একর) অবস্থানে রয়েছে।
চা–শিল্পে এগিয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের প্রধান উপদেষ্টা পবন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশটা সবুজ হোক, আমরা সেটা চাই। চা–শিল্পে মুনাফা করা কঠিন। সিটি গ্রুপ এই ঝুঁকি নিচ্ছে। চায়ের উৎপাদন ও বাজার হিস্যা বৃদ্ধি এবং মান ঠিক রাখার জন্যই নতুন নতুন বাগান কেনা হচ্ছে।’ পবন চৌধুরী বলেন, সিটি গ্রুপ চা–শিল্পে বড় হতে চায়। এই খাতে ভবিষ্যতে বিনিয়োগ আরও বাড়ানো হবে।
জানা গেছে, সিটি গ্রুপ একসময় ভোগ্যপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে নিয়োজিত ছিল। সেখান থেকে তারা ব্যবসা বাড়িয়ে নতুন নতুন খাতে বিনিয়োগ করে চলেছে। এখন গ্রুপটি লবণ, সিমেন্ট, তরলীকৃত জ্বালানি গ্যাস (এলপিজি) ও কাগজ উৎপাদন করছে। সর্বশেষ চা–শিল্পেও নিজেদের শক্ত অবস্থান গড়ে তোলার কথা জানান দিচ্ছে তারা।
চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন মোট ১৬৭টি চা–বাগান রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চা–বাগান রয়েছে সিলেট বিভাগে। এই বিভাগের মৌলভীবাজার জেলায় ৯১টি, হবিগঞ্জ জেলায় ২৫টি ও সিলেট জেলায় ১৯টি চা–বাগান আছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম জেলায় আছে ২১টি চা–বাগান।
প্রসঙ্গত, চা–বাগান না থাকলেও লাইসেন্স নিয়ে চা বিপণনে যুক্ত হয়েছে আবুল খায়ের, মেঘনা, পারটেক্স স্টার ও এসিআই গ্রুপ।