সরকারি লাল চিনির দাম বাড়ানোর কয়েক ঘণ্টা পর সিদ্ধান্ত বাতিল
পবিত্র রমজান মাসের আগে সরকারি মিলের লাল চিনির দাম কেজিতে ২০ টাকা বাড়ানো ঘোষণার দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর তা বাতিল করা হয়েছে। দুপুরে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার স্বাক্ষরে এক চিঠির মাধ্যমে এক কেজির প্যাকেটজাত লাল চিনির নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় ১৬০ টাকা। আগে এ দাম ছিল ১৪০ টাকা।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) আজ বৃহস্পতিবার দাম বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত নেয়। রাতে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দাম বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার বা বাতিল করেছে বিএসএফআইসি।
এর আগে দুপুরে সংস্থাটির চিঠিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় চিনির বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিএসএফআইসির উৎপাদিত চিনির বিক্রয়মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। তাতে এখন থেকে এক কেজির প্যাকেটজাত লাল চিনি মিলগেট বা করপোরেট সুপারশপ পর্যায়ে বিক্রি হবে ১৫৫ টাকায়। বিভিন্ন সুপারশপ, চিনি শিল্প ভবনের বেজমেন্ট ও বাজারে সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয়মূল্য ১৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া এখন থেকে সরকারি সংস্থাটির খোলা (বস্তাকৃত) লাল চিনির মিলগেট মূল্য হবে প্রতি কেজি ১৫০ টাকা, যা ডিলার পর্যায়ে বিক্রি হবে ১৫৭ টাকা কেজি। তবে খুচরা পর্যায়ে খোলা লাল চিনির বিক্রয়মূল্য কত হবে, তা জানায়নি বিএসএফআইসি কর্তৃপক্ষ। সর্বোচ্চ খুচরামূল্য নির্ধারণ না করে দিলেও খোলা লাল চিনির দাম কেজিতে সরকারিভাবে ২০ টাকার মতো বাড়বে।
এদিকে বাজারে লাল চিনি সরকার নির্ধারিত দামে পাওয়া যায় না। কারণ, এই চিনির সরবরাহ একেবারে কম। দু-একটি জায়গায় পাওয়া গেলেও দাম বাড়িয়ে রাখেন বিক্রেতারা। সরকার নির্ধারিত জায়গা ছাড়া লাল চিনি কিনতে গেলে দোকানদারেরা নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম রাখেন, এ অভিযোগ বহু পুরোনো। সরকারি লাল চিনির উৎপাদনও দেশে চিনির মোট চাহিদার তুলনায়ও একেবারে নগণ্য। অনেক ক্রেতার কাছে এই চিনির চাহিদা রয়েছে। এই সুযোগ নিতে একটি চক্র নকল লাল চিনি বাজারে ছাড়ে বলে অভিযোগ আছে।
দেশে চিনির বাজারে (সাদা চিনি) গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সরকার দফায় দফায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে চিনির দাম ঠিক করে দিলেও বাজারে দাম কার্যকর করতে পারেনি। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) আজকের বাজারদরের প্রতিবেদন অনুসারে ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। সরকার ও ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে ঠিক করে দেওয়া দাম—খোলা চিনির ক্ষেত্রে ১৩০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনির বেলায় ১৩৫ টাকা কেজি।
স্থানীয় চিনিশিল্পের সুরক্ষায় বিদেশ থেকে আমদানি করা চিনিতে সরকার উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করে রেখেছে। এরপরও বিএসএফআইসির উৎপাদিত স্থানীয় লাল চিনির উৎপাদন মোট চাহিদার মাত্র ১ শতাংশ। দেশে চিনি আমদানি হয় বছরে ২০–২২ লাখ টন। আর লাল চিনি উৎপাদিত হয় মাত্র ৩০ হাজার টনের মতো। অর্থাৎ চিনির বাজার প্রায় পুরোপুরি আমদানির ওপর নির্ভরশীল।
এ জন্য সরকারি লাল চিনির পরিবর্তে আমদানি করা সাদা চিনির ওপরই ক্রেতাদের নির্ভর করতে হয়। বিদেশ থেকে অধিকাংশ চিনি অপরিশোধিত অবস্থায় আসে। দেশে আসার পর তা পরিশোধন করে বাজারে ছাড়া হয়।