উত্তাল আন্দোলন, রাজধানীর বিপণিবিতান ও মার্কেটগুলোতে ক্রেতা নেই

ঢাকায় কয়েক দিন ধরে চলছে সংঘাত-সংঘর্ষ। তাই বিপণিবিতান ও মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের উপস্থিতি কমে গেছে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিরপুর রোডের রাপা প্লাজায়ছবি: প্রথম আলো

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বিপণিবিতান ও বিক্রয়কেন্দ্রের বেচাকেনায় ভাটা পড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতারা এখনো বিপর্যস্ত ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। এ ছাড়া কারফিউ পরিস্থিতির মধ্যে সন্ধ্যার পর দোকান খোলা রাখা যাচ্ছে না। এ কারণেও বেচাকেনা একপ্রকার তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, চলমান পরিস্থিতিতে গত দুই দিনে (শুক্র ও শনিবার) তাঁদের বেচাকেনা একেবারেই কম হয়েছে। বিশেষ করে শুক্রবার দুপুরের পর বেশ কয়েক ঘণ্টা রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় বিপণিবিতান ও বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ ছিল।

রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও নিউমার্কেট এলাকায় শতাধিক বিপণিবিতান বা মার্কেট রয়েছে। সেখানে সাধারণত শুক্র ও শনিবারই সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয়। তবে এ সপ্তাহ ছিল ব্যতিক্রম। ওই এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার জুমার নামাজের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় সড়ক অবরোধ ছিল। ফলে এ সময় ওই এলাকার বেশির ভাগ দোকানপাটে বেচাকেনা কার্যত বন্ধ ছিল। আর গতকাল শনিবার দোকান খোলা থাকলেও গ্রাহক উপস্থিতি একেবারেই কম ছিল।

গতকাল শনিবার দুপুরে সায়েন্স ল্যাব মোড়ের হ্যাপি অর্কিড শপিং মলে গিয়ে দেখা গেছে, ভেতরে কোনো ক্রেতা নেই; বিক্রেতারা বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। হ্যাপি অর্কিডের দ্বিতীয় তলার শাড়ির দোকান টাঙ্গাইল শাড়ি কুটিরের ব্যবস্থাপক মো. ফরহাদ হোসেন জানান, গত তিন দিনে কমবেশি বেশ কয়েক ঘণ্টা করে দোকান খোলা ছিল। কিন্তু এ সময়ে একটি শাড়ি বা থ্রি-পিসও বিক্রি হয়নি। এ ধরনের পরিস্থিতি আগে কখনো হয়নি।

শনিবার সায়েন্স ল্যাব মোড় থেকে নিউমার্কেটের দিকে যেতে প্রায় সব মার্কেট ও বিপণিবিতানে গ্রাহকের খুব কম উপস্থিতি দেখা গেছে। বিক্রেতারা বলেন, একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ কেনাকাটার জন্য আসছেন না। বেলা আড়াইটার দিকে চাঁদনীচক মার্কেটে কথা হয় পোশাক বিক্রেতা আমজাদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় দোকান খুলে রাত আটটায় বন্ধ করেছি। এ সময়ে মাত্র দুজনের কাছে পোশাক বিক্রি করতে পেরেছি। দোকানে ক্রেতারা আসছেন না।’ আমজাদ হোসেন জানান, বন্ধের দিনগুলোতে যেখানে ২০ হাজার টাকার বেশি বিক্রি হতো, সেখানে এখন দুই হাজার টাকার জিনিসপত্রও বিক্রি হয় না।

বিক্রেতা আমজাদ হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই দোকানটিতে আসেন ক্রেতা মাহফুজা রহমান। পেশায় চিকিৎসক এই নারী গত বুধবার ফরিদপুর থেকে ঢাকায় এসেছেন বিয়ের কেনাকাটা করতে। কিন্তু আন্দোলনের কারণে পরিকল্পনামাফিক অনেক মার্কেটে যেতে পারেননি। জানতে চাইলে মাহফুজা রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেকটা বাধ্য হয়ে একধরনের শঙ্কা মাথায় নিয়ে এসেছি। তা-ও অনেক জরুরি কেনাকাটা করতে পারিনি। সন্ধ্যার মধ্যে যা পারি কিনে দ্রুত বাসায় ফিরতে চাই।’

নিউমার্কেট এলাকা ছাড়াও পুরো এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় ঘুরে সড়কের দুই পাশের দোকানগুলোতেও বেচাকেনার বেহাল চিত্র দেখা গেছে। ওই সড়কে তিন শতাধিক ছোট ছোট জুতার দোকান রয়েছে। এসব দোকানের বিক্রেতারা জানান, প্রায় ২০ দিন ধরে তাঁদের বেচাকেনা অর্ধেকের বেশি কমেছে।

এলিফ্যান্ট রোডের অন্যান্য বিক্রয়কেন্দ্রেও কথা বলে একই ধরনের চিত্র পাওয়া গেছে। যেমন জেন্টেল পার্কের বিক্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. জুবায়ের হোসেন বলেন, ‘গত দুই দিনে আমাদের বেচাকেনা ৭০ ভাগের বেশি কমেছে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ কেনাকাটা করতে আসছেন না।’

এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। একই সঙ্গে তারা আজ থেকে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচিও পালন করবে। গতকাল রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাজার হাজার মানুষের সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেয় তারা। এমন বাস্তবতায় দ্রুত স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরতে চান ব্যবসায়ীরা।

নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন, সাধারণত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ না থাকলে মানুষ কেনাকাটা করতে আসেন না। ফলে বর্তমানে ছোট ব্যবসায়ীরা চরম বাজে অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। জুলাই মাসজুড়েই তেমন বেচাকেনা হয়নি। ব্যবসায়ীরা এখন পুঁজি ভেঙে খাচ্ছেন; অনেকের সে অবস্থাও নেই।