২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

আমদানি কমেছে সূর্যমুখী ও জলপাই তেলের   

করোনার পরে স্বাস্থ্যসচেতনতায় অনেকে বিকল্প ভোজ্যতেলে ঝুঁকেছিল। এখন আবার চাহিদা কমতির দিকে।  

শৌখিন ভোজ্যতেল হিসেবে পরিচিত অলিভ অয়েল বা জলপাই তেল ও সূর্যমুখী তেলের বাজার প্রায় পুরোটা আমদানিনির্ভর। কয়েক বছর আগেও এসব তেল শুধু তারকা মানের হোটেল কিংবা অভিজাত শ্রেণির লোকদের রান্নার তালিকায় ছিল। স্বাস্থ্যকর হওয়ায় মহামারি করোনার পর সাধারণ ভোক্তাদের অনেকেই এ-জাতীয় ভোজ্যতেলে ঝোঁকেন। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় জলপাই ও সূর্যমুখী তেলের আমদানিও বাড়ে। যদিও ডলার-সংকটের কারণে এসব তেলের আমদানি খানিকটা কমে গেছে। 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যানুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের ১ হাজার ৫৩৭ টন জলপাই তেল এবং ৪ হাজার ৪৫৮ টন সূর্যমুখী তেল আমদানি করা হয়েছিল। সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে জলপাই তেল আমদানি হয়েছে ৮১১ টন। আর সূর্যমুখী তেল আমদানি হয়েছে ২ হাজার ৩৭২ টন। তার মানে গত অর্থবছর জলপাই তেলের আমদানি কমেছে ৭২৬ টন। আর সূর্যমুখী তেলের আমদানি কমেছে ২ হাজার ৮৬ টন। 

অবশ্য দেশের জলপাই ও সূর্যমুখী তেলের বাজার করোনাকালের আগে এতটা বড় ছিল না। করোনার পরই মূলত বাজারটা বাড়তে থাকে। এনবিআরের তথ্যানুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জলপাই তেলের আমদানি হয়েছিল ১ হাজার টনের কম। তখন সূর্যমুখী তেলের আমদানি হয় মাত্র ৩ হাজার ৫৬০ টন। করোনার পর সামর্থ্যবানদের অনেকেই সয়াবিন তেল খাওয়া কমিয়ে বিকল্প ভোজ্যতেলে (শর্ষের তেল, কুড়ার তেল, জলপাই তেল, সূর্যমুখী তেল, তিলের তেল ও বাদাম তেল) ঝুঁকলে আমদানি বাড়ে।

এর মধ্যে শর্ষের তেল খাওয়ার রীতি এ দেশে থাকলেও কুঁড়ার তেল থেকে শুরু করে বাদামের তেলের বড় ক্রেতা শহরের মানুষ। জলপাই ও সূর্যমুখী তেলের পাশাপাশি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভেজিটেবল ফ্যাটের আমদানিও কমেছে। গত অর্থবছরে ভেজিটেবল ফ্যাটের আমদানি হয়েছে ১৪ হাজার ১৩৩ টন। এর আগের অর্থবছরে যা ছিল ১৪ হাজার ৬১২ টন। জলপাই ও সূর্যমুখী তেলের মতো দেশের ভেজিটেবল ফ্যাটের বাজারও আমদানিনির্ভর। তবে দেশীয় কিছু প্রতিষ্ঠানও এখন সামান্য পরিসরে এ-জাতীয় পণ্য উৎপাদন করছে। 

গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে যখন সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়, তখন সূর্যমুখী তেলের দামও বেড়েছিল। ৫ লিটারের সূর্যমুখী তেলের দাম ছিল ব্র্যান্ডভেদে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮৭৫ টাকা। এখন সয়াবিনের দাম কমে এসেছে। সূর্যমুখীর দামও কমছে। জলপাই তেলের ক্ষেত্রেও একই কথা। ডলারের দাম চড়া থাকায় গত বছর দাম কিছুটা বেড়েছিল। তবে বাজারে জলপাই তেলের নানা ধরন আছে। রান্নার পাশাপাশি জলপাই তেল প্রসাধনী হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। এসব তেলের দাম রান্নার তেল থেকে একটু বেশি।   

জলপাই ও সূর্যমুখী তেলের বর্তমান দরদাম কেমন জানতে চাইলে নিউমার্কেটের হৃদয় বানিয়াতি স্টোরের মো. হৃদয় হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে মানভেদে এক লিটার জলপাই তেল বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। আর ৫ লিটারের বোতলজাত সূর্যমুখী তেলের দাম ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। লিটারপ্রতি দাম আসে ৩০০ টাকার ওপরে। 

বাজারে এখন বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের জলপাই ও সূর্যমুখী তেল পাওয়া যায়। এতে প্রথম দিকে আছে ওলিটালিয়া। এই ব্র্যান্ডের তেল বাজারজাত করছে ফেয়ার গ্রুপ। জনপ্রিয় কিংস ব্র্যান্ডের সূর্যমুখী তেল দেশের বাজারে বাজারজাত করে থাকে বাংলাদেশ এডিবল অয়েল। কোম্পানিটি এই তেল নিয়ে আসে ইউক্রেনের উইল মার ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি থেকে। ‘অলিও অরোলিও’ ব্র্যান্ডের তিন ধরনের অলিভ অয়েল বাজারজাত করে ইস্ট কোস্ট গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইসি অর্গানিক প্রোডাক্টস লিমিটেড।

দেশে সূর্যমুখী তেলের কারখানা গড়ে তুলেছে গ্লোব এডিবল অয়েল। তাদের কারখানায় বিদেশ থেকে আমদানি করা সূর্যমুখীর বীজ থেকে তেল উৎপাদন করা হয়। সেই তেল শেফ ব্র্যান্ড নামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বাইরে বাজারে সানলিকো, অর্কিডসহ বহু ব্র্যান্ডের সূর্যমুখী তেল পাওয়া যায়। জলপাই ও সূর্যমুখী তেলের বড় অংশ আসে ইতালি থেকে। এ ছাড়া মালয়েশিয়া, ইউক্রেন, তুরস্ক, স্পেন, গ্রিস, সাইপ্রাস ও রাশিয়া থেকেও এসব তেল আসে। 

গ্লোব গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ডলার-সংকটের কারণে বিদেশ থেকে শৌখিন তেল বা কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না। তাতে স্বাভাবিকভাবে বাজারটা ছোট হয়ে আসছে। তাতে সম্ভাবনার নতুন এমন শিল্পে যেসব উদ্যোক্তা বিনিয়োগ করেছিল, তারা লোকসানের ঝুঁকির মধ্যে আছে।