রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে চলছে ঈদমেলা; খাবার, পোশাক, নাগরদোলা—সবই আছে
পিঠা, মিষ্টি, কেক, চটপটি ও ফুচকা কিংবা পোশাক ও শতরঞ্জি। এ ধরনের শতাধিক প্রয়োজনীয় পণ্যের পসরা বসেছে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এখানে বিশেষ মেলা আয়োজন করা হয়েছে।
শেরেবাংলা নগরের অবস্থিত এই সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে দুই দিনের এই ‘ঈদ আনন্দমেলা’ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেলার আয়োজক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। আজ ঈদের দিন সোমবার ও ঈদের পরদিন মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মেলা চলবে। আয়োজকেরা জানিয়েছেন, ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে এ ধরনের মেলা এই প্রথম আয়োজন করা হলো।
ডিএনসিসি জানিয়েছে, মেলায় বিভিন্ন খাতের এসএমই উদ্যোক্তাদের ২০০টির বেশি স্টল আছে। স্টল বরাদ্দের ক্ষেত্রে খাদ্যপণ্য, অলংকার, খেলনা প্রভৃতি পণ্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শিশুদের বিনোদনের জন্য মেলা প্রাঙ্গণে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পাপেট, নাগরদোলা ও খেলার সামগ্রী।
উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন বলেন, ঈদ উপলক্ষে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে এ ধরনের মেলা আয়োজন এই প্রথম হয়েছে।
ক্রেতা-বিক্রেতাদের উচ্ছ্বাস
ঈদ উপলক্ষে বিশেষ শোভাযাত্রা, সাজানো, মেলা আয়োজন করা প্রভৃতি কর্মসূচি অতীতে সচরাচর দেখা যায়নি। এবার চিত্রটা অন্য রকম। চলতি বছর বাণিজ্য মেলার পুরোনো মাঠে ডিএনসিসির আয়োজনে ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে সকাল ১০টা থেকে এই মাঠের পাশেই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে (আগে এর নাম ছিল বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র) কেন্দ্রের প্রাঙ্গণে মেলার কার্যক্রম শুরু হয়। আজ বেলা ১১টার দিকে সরেজমিন সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মেলা দেখতে কয়েক শ মানুষ এসেছেন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ লোক আগে থেকে মেলার খবর জানতেন। আর কিছুসংখ্যক মানুষ যাত্রাপথে মেলা দেখতে এসেছেন।
অন্যদিকে মেলায় অংশ নেওয়া উদ্যোক্তারাও স্টল গুছিয়ে পণ্য বিক্রি করতে শুরু করেছেন। পিজেএম ক্রিয়েশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান ছোটদের পোশাক, অলংকার প্রভৃতি পণ্য নিয়ে মেলায় এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা ঝরনা কস্তা বলেন, ‘মেলায় পণ্য বিক্রি হোক আর না হোক, আনন্দ লাগছে। আমি ১২ বছর ধরে ব্যবসা করছি। এ সময় নিয়মিত বিভিন্ন মেলায় অংশ নিই। তবে এই প্রথম ঈদ উপলক্ষে কোনো মেলায় আসলাম।’
মেলায় শতরঞ্জি ও বিভিন্ন ধরনের পোশাক নিয়ে এসেছেন এসএমই উদ্যোক্তা আঞ্জুমান আরা। তিনি বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে খুবই সীমিত লাভে পণ্য বিক্রি করছি।’
বাসায় তৈরি বিরিয়ানি, নুডলস, সেমাই প্রভৃতি খাদ্য পণ্য নিয়ে মেলায় এসেছেন মিরপুরের বাসিন্দা আফসানা হক। তিনি বলেন, ‘আমি এর আগে বাণিজ্যমেলা, এসএমই মেলা, পয়লা বৈশাখের মেলা প্রভৃতি আয়োজনে অংশ নিয়েছি। তবে ঈদের সময় এ ধরনের মেলায় অংশ নেওয়া এই প্রথম।’
ক্রেতাদের থেকেও মেলা সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা পাওয়া গেছে। যেমন আজ সকালে বাবা, মা, ছোট বোনসহ মেলায় ঘুরতে আসেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী জারিন তাসনিম। তিনি বলেন, ‘আগে ঈদের সময় এ ধরনের কোনো উদ্যাপন ছিল না। ঈদের আনন্দ অনেকটা পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এবার ভিন্ন পরিস্থিতি দেখছি। এখানে এসে ভালো লাগছে।’
আগারগাঁও থেকে ছয় বছর বয়সী ছোট মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে মেলায় আসেন আফজাল হোসেন। তিনি সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের একটি প্রকল্পে কাজ করেন। আফজাল হোসেন বলেন, ‘এটি দারুণ একটি উদ্যোগ হয়েছে। ভবিষ্যতেও ঈদের দিনে যেন এমন আয়োজন চালু থাকে সেই প্রত্যাশা করছি।’