আইএমএফের পরামর্শগুলো ভালো, বাস্তবায়ন করা উচিত 

শামসুল আলম

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) যা করতে বলেছে, তা শর্ত নয়। আমি বলব, এগুলো পরামর্শ। আইএমএফের পরামর্শগুলো আমাদের অর্থনীতিকে আরও সক্রিয় করতে সাহায্য করবে। এসব পরামর্শ পূরণে কোনো চাপ নেই। তবে আমরা আগে থেকেই আইএমএফের পরামর্শের কাজগুলো করছি। আইএমএফ বলছে, খেলাপি ঋণ কমাতে হবে। ইতিমধ্যে সেই পদক্ষেপ নেওয়াও হয়েছে। তবে বিশেষ পরিস্থিতির কারণে বিভিন্ন সময় খেলাপিদের জন্য সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এগুলো ঋণ আদায়ের কৌশল। আমরা তো আফগানিস্তানের কাবুলিওয়ালাদের মতো আচরণ করতে পারি না। ঋণ আদায় করতেই নানা ছাড় দেওয়া হয়। অনেক সময় ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়েন। তাঁদের ঋণ পুনঃতফসিল করতেই হয়। কোভিডের সময় সেই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ভারতের চেয়ে এখনো আমাদের দেশে ঋণখেলাপির হার কম। ঋণখেলাপির হার ৯ শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক ও ভয়ংকর নয়। 

আমাদের দেশের অর্থনীতিবিদেরা শঙ্কাবাদী। তাঁরাই বলেন, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। কারণ, গত ৫১ বছরে আমরা বিদেশি ঋণে কখনো খেলাপি হইনি। এমনকি কখনো ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদনও করিনি। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪০ শতাংশের মতো ঋণ আছে বাংলাদেশের। আইএমএফের হিসাবে, এ হার ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত বিপদমুক্ত। 

আইএমএফ যে পরামর্শ দিয়েছে, তা অতিশয় নয়। এগুলো ভালো পরামর্শ। বাংলাদেশের দক্ষতা আছে বলেই আইএমএফ দ্রুত ঋণ অনুমোদন ও ছাড় দিয়েছে। এটি এককভাবে অনেক বড় ঋণ। অবশ্য আমাদের অর্থনীতির তুলনায় তেমন বড় নয়। বাংলাদেশের সক্ষমতার ওপর আস্থা আছে বলেই এত বড় ঋণ অনুমোদন করেছে আইএমএফ। যেহেতু আইএমএফ বাজেট সহায়তা হিসেবে ঋণ দিয়েছে, এখন বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকও (এআইআইবি) অবাধে ঋণ দেবে। কোভিড এবং বিশ্বসংকটের মতো এই দুঃসময়ে বাংলাদেশের ক্রেডিট রেটিং বা ঋণমান কমেনি। 

আমাদের খরচের চাহিদা অনেক। তাই আমাদের রাজস্ব আদায় বাড়ানো উচিত। এটি অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। আবার সরকারি ব্যয়ের দক্ষতাও বাড়ানো উচিত। এটাও অস্বীকার করছি না।

আইএমএফের ঋণের যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। এ ঋণ যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারলে ভয়ের কোনো কারণ নেই। সার্বিকভাবে বলব, আইএমএফ আমাদের ভালো পরামর্শ দিয়েছে। এসব পরামর্শ আমাদের বাস্তবায়ন করা উচিত। আইএমএফের মতো বিদেশি ঋণদাতা সংস্থা যখন আমাদের পাশে থাকে, তখন আমরা শক্তি ও সাহস পাই। এখন দরকার অর্থনীতিকে দ্রুত পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া।