দুদকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঢেলে সাজানোর পরামর্শ টিআইবির
দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এর মাধ্যমে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে জবাবদিহি নিশ্চিত করা যাবে বলে মত সংস্থাটির।
আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলেছে টিআইবি। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে প্রত্যাশিত নতুন বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোয় আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। এ পরিবর্তনের অপরিহার্য অংশ হিসেবে দুদকসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে আপাদমস্তক ঢেলে সাজাতে হবে। অন্যথায় দুর্নীতিমুক্ত, সুশাসিত, গণতান্ত্রিক ও জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন অধরা থেকে যাবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর দুর্নীতির উদাহরণ তুলে ধরে টিআইবি। সংস্থাটি জানায়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী রুখমিলা জামান চৌধুরীর নামে যুক্তরাজ্যে বিপুল পরিমাণ অঘোষিত সম্পদের তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে দেশের বাইরে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর অপ্রদর্শিত সম্পদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ হয়। তাতে ব্যাপক জন-উদ্বেগ তৈরি হয়। এত কিছু সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো দীর্ঘদিনেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি।
টিআইবি বলেছে, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মতো প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্নীতি ও অর্থ পাচার প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করে থাকে। কিন্তু অবৈধ অর্থের তথ্য পাওয়ার পরও সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে এসব প্রতিষ্ঠান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিষয়টিকে প্রতিষ্ঠানগুলো ও তাদের নেতৃত্বের পর্যায়ে দলীয়করণ ও অকার্যকারিতার নজির বলে মনে করে সংস্থাটি।
ইফতেখারুজ্জামান জানান, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর ‘হলফনামায় প্রার্থী পরিচিতি’ প্রতিবেদন ও ‘নো ইয়োর ক্যান্ডিডেট’ ড্যাশ বোর্ডের মাধ্যমে সংসদ সদস্য প্রার্থীদের তথ্য প্রকাশ করে টিআইবি। পরবর্তী সময়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ ও চলমান ব্যবসা সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ হয়। এসব তথ্য সম্পর্কে দেশবাসীর পাশাপাশি সরকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবগত হয়। পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্যে টিআই-ইউকের অনুসন্ধানেও সাইফুজ্জামান চৌধুরীর অবৈধ অর্থের সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত বেরিয়ে আসে।
চলতি বছরের ৪ মার্চ এসব প্রমাণ ও নথি টিআই-ইউকে ও টিআইবির উদ্যোগে বিএফআইইউ, দুদক, সিআইডি, এনবিআর ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু সব তথ্য-প্রমাণ হাতে থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। বিষয়টিকে চরম হতাশাজনক বলে উল্লেখ করেন ইফতেখারুজ্জামান।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সরকার পতনের পর ও বিএফআইইউর প্রধানের পদত্যাগের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে। এটি ইতিবাচক বিবেচিত হতে পারে। তবে প্রশ্ন হলো, সব তথ্য-প্রমাণ হাতে থাকা সত্ত্বেও এত দিনেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না।
ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, এমন নিষ্ক্রিয়তা কি প্রমাণ করে না যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণের মাধ্যমে অকার্যকর করে রাখা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃস্থানীয়রা এ অকার্যকারিতার অনুঘটক হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন। বস্তুত অর্থ পাচার ও অপ্রদর্শিত সম্পদ অর্জনের বিষয়টিকে প্রকারান্তরে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। মনে রাখতে হবে যে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বিদেশে বিপুল অঘোষিত সম্পদ অর্জনের ঘটনা ‘হিমশৈলের চূড়ামাত্র’।