জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব
নওগাঁর মোকামে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী
ধানের দাম ও পরিবহন খরচ বাড়ার কারণে এক সপ্তাহ ধরে প্রতি কেজি চালের দাম দুই-তিন টাকা করে বাড়িয়েছে চালকলগুলো।
দেশে ধান-চালের অন্যতম বড় মোকাম নওগাঁয় পাইকারিতে চালের দাম আরও বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সরু ও মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি দুই থেকে তিন টাকা করে বাড়িয়েছে মিলগুলো (চালকল)। ফলে প্রতি কেজি শর্টিং করা জিরা (মিনিকেট) চাল ৬৬-৬৭ টাকা ও নন-শর্টার জিরা ৬৪-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কাটারি ৬৭-৬৮ টাকা, বিআর-২৮ ৫১-৫২ টাকা ও স্বর্ণা-৫ চাল ৫০-৫১ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ কম থাকায় বর্তমানে বাজারে ধানের দাম বাড়তি। এ রকম অবস্থায় জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে ধান-চাল পরিবহনের খরচ বেড়েছে। ফলে ধান-চাল দুটিরই দাম আরও বেড়েছে। এ নিয়ে গত দুই-তিন সপ্তাহে নওগাঁ মোকামে ধানের দাম মণপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এদিকে ধানের দাম ও পরিবহন খরচ বাড়ায় চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে চাল আমদানি করা না গেলে আগামী তিন মাস চালের দাম কমার সম্ভাবনা দেখছেন না তাঁরা। কারণ, নতুন ধান (আমন ধান) বাজারে আসতে অন্তত তিন মাস সময় লাগবে।
নওগাঁ মোকামে ধান-চালের দাম বাড়লে সরাসরি এর প্রভাব পড়ে সারা দেশের বাজারে। কারণ, নওগাঁ সদর উপজেলা ও মহাদেবপুর উপজেলা দেশে চালের অন্যতম বড় মোকাম। ইতিমধ্যে পাইকারিতে দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে স্থানীয় খুচরা বাজারেও। যে কারণে খুচরা বাজারে এখন আর প্রতি কেজি ৫০ টাকার নিচে কোনো চাল পাওয়া যায় না। এর মানে, নিম্ন আয়ের মানুষকেও ১ কেজি চাল কিনতে কমপক্ষে ৫০ টাকা খরচ করতে হবে।
বর্তমানে যে পরিস্থিতি, তাতে বিদেশ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে চাল আমদানি করা না গেলে তিন মাসের মধ্যে চালের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।
নওগাঁ শহরের পুরান চালপট্টি এলাকার কিরণ ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক মোহন সরকার প্রথম আলোকে জানান, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মিলগেটে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চালের দাম ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। মিনিকেট চাল মিলগেটেই ৩ হাজার ৩০০ টাকা করে কিনতে হচ্ছে, যা আগে ছিল ৩ হাজার ২০০ টাকা। এভাবে সব ধরনের চালের দাম বাড়িয়েছেন মিলমালিকেরা। আবার মিল থেকে দোকানে চাল আনা পর্যন্ত পথেও ট্রাক ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় চালের দাম বেড়েছে।
জানতে চাইলে রজনীগন্ধা মিনিকেট ব্র্যান্ডের চাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বেলকন গ্রুপের ব্যবস্থাপক আবু ওয়াহিদ হোসেন আলাল বলেন, মিল পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম দুই-তিন টাকা বাড়ানো হয়েছে দুটি কারণে। প্রথমত, বাজারে বর্তমানে ধানের সরবরাহ কমে গেছে। ফলে প্রতি মণ জিরা ও কাটারি ধানের দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়ে এখন ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি। ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজার থেকে ধান কিনে মিলে আনতে প্রতি ট্রাকে দুই থেকে তিন হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। সে জন্য ধানের বর্তমান বাজারদর ও বাড়তি পরিবহন খরচ সমন্বয় করে মিল পর্যায়ে চালের দাম প্রতি কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা বাড়ানো হয়েছে।
এ সম্পর্কে নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার প্রথম আলোকে বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে বোরো ধানের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় শুরু থেকেই এবার বাজারে ধানের দাম চড়া ছিল। এ কারণে ভরা মৌসুমেও চালের দাম বেড়েছে। মৌসুমের শেষ দিকে এখন বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় ও মিলারদের মধ্যে কেনার প্রতিযোগিতা থাকায় বোরো ধানের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে, যার কারণে চালের দাম বাড়াতে হয়েছে। এ ছাড়া ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি চালের দাম বাড়ার আরেকটি কারণ।
ফরহাদ হোসেন চকদার আরও বলেন, বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে বিদেশ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে চাল আমদানি করা না গেলে তিন মাসের মধ্যে চালের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ আমন মৌসুমের ধান বাজারে উঠতে অন্তত তিন মাস সময় লাগবে।