সাক্ষাৎকার

দেশি ব্র্যান্ডের এসিই ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে

দেশি ও বিদেশি—উভয় ব্র্যান্ডের এসির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর রয়েছে নির্ভরযোগ্যতা ও উন্নত মানের সুবিধা। তবে থেমে নেই স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোও। উন্নত প্রযুক্তি ও সাশ্রয়ী দামে এসি সরবরাহ করার মাধ্যমে তারাও এখন টেক্কা দিচ্ছে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোকে। কিন্তু ক্রেতারা কোন ব্র্যান্ড বেশি পছন্দ করছেন? গুণগত মান, দাম, বিদ্যুৎ সাশ্রয় ও বিক্রয়োত্তর সেবা—এসব বিবেচনায় কে এগিয়ে? এসব বিষয়েই প্রথম আলো ডটকমের সঙ্গে কথা বলেছেন ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির চিফ বিজনেস অফিসার (এসি) মো. তানভীর রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তারেক মাহমুদ নিজামী

প্রথম আলো:

বাংলাদেশে কোন ধরনের এসি বেশি জনপ্রিয় এবং কেন?

তানভীর রহমান: বাংলাদেশে আবাসিক ভবনের ধরন, বাসস্থান, রুমের সাইজ ও একক পরিবারের সংখ্যা বেশি হওয়ায় বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী স্প্লিট ইনভার্টার টাইপ এসির ব্যবহার বেশি। ইনভার্টার স্প্লিট এসিগুলো অধিক বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী, সহজেই ঘরের ভেতরে ইনস্টল করা যায় এবং চাহিদা অনুযায়ী নানা সাইজে পাওয়া যায়, যা বিভিন্ন ঘরের জন্য খুব সহজেই ব্যবহারযোগ্য।

প্রথম আলো:

দেশি ও বিদেশি ব্র্যান্ডের এসিগুলোর মধ্যে মূল পার্থক্য কী? ক্রেতারা কোন ধরনের এসির ওপর বেশি আস্থা রাখেন?

তানভীর রহমান: ক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা অন্ধবিশ্বাস এখনো আছে যে বিদেশি ব্র্যান্ড মানেই সেরা, আধুনিক টেকনোলজি ও গুণগত মানসম্পন্ন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজার যাচাই করে দেখা যাচ্ছে, দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোও কম নয়। দেশীয় অনেক ব্র্যান্ড বাংলাদেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন বিভিন্ন দেশে এয়ার কন্ডিশনার (এসি) রপ্তানি করছে। বিশ্বমানের উৎপাদন–মান বজায় রেখে, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছে। এ ছাড়া বৈশ্বিক সম্প্রসারণের মাধ্যমে নিজেদের বিশ্বাস ও যোগ্যতা বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা বিদেশি বাজারে অবস্থান আরও শক্তিশালী করছে। তাই ক্রেতারাও দেশি ব্র্যান্ডের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন। ওয়ালটন তার অন্যতম উদাহরণ।

প্রথম আলো:

স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলো এখন কতটা প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় আছে? স্থানীয় ব্র্যান্ডের কী কী সুবিধা রয়েছে, যা আমদানি করা ব্র্যান্ডের পণ্যে নেই?

তানভীর রহমান: একসময় বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশের বাজার নিয়ন্ত্রণ করলেও বর্তমানে দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এর অন্যতম কারণ হলো, সম্পূর্ণ দেশীয়ভাবে উৎপাদন হওয়ায় খরচ কম এবং সহজে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব। পাশাপাশি দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী ইনভার্টার এসি, স্মার্ট কন্ট্রোল ফিচার, এনার্জি এফিশিয়েন্ট ডিজাইন ইত্যাদি প্রযুক্তি সংযোজন করছে। দেশব্যাপী সার্ভিস সেন্টার থাকায় দ্রুত ও কার্যকর বিক্রয়োত্তর সেবা দিতে পারছে এবং বিদেশি ব্র্যান্ডের তুলনায় কম দামে উন্নত প্রযুক্তির এসি বাজারে দিতে পারছে। ভবিষ্যতে দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর বাজার আরও সম্প্রসারিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রথম আলো:

এসি কেনার সময় ক্রেতারা সাধারণত কোন বিষয়গুলো নিয়ে দ্বিধায় থাকেন?

তানভীর রহমান: প্রথমত, ইনভার্টার নাকি নন–ইনভার্টার এসি। তাই বাড়তি বিদ্যুৎ খরচ থেকে চিন্তামুক্ত থাকতে ইনভার্টার প্রযুক্তির এসি বাছাই করাই বুদ্ধিমানের কাজ। আবার এসির ক্যাপাসিটি নিয়েও অনেকেই দুশ্চিন্তায় থাকেন। এটি সাধারণত রুমের আকার অনুযায়ী নির্ধারণ করা জরুরি। একসঙ্গে এত টাকা দিয়ে এসি কিনতে পারবে না দেখে অনেকেই কিস্তি–সুবিধার খোঁজ করেন। সর্বশেষ যে চিন্তার বিষয়, সেটি হলো বিক্রয়োত্তর সেবা। তাই এসব বিষয় ভালোভাবে যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিলে ক্রেতারা সহজেই তাঁদের প্রয়োজন অনুযায়ী সেরা এসি বেছে নিতে পারবেন।

প্রথম আলো:

গরমকাল শুরু হচ্ছে। এ বছর দেশি নাকি বিদেশি, কোন ব্র্যান্ডের এসির চাহিদা বেশি থাকবে বলে মনে করছেন?

তানভীর রহমান: বর্তমান বাজার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বাংলাদেশে দেশীয় ব্র্যান্ডের এসির চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১০ সালে যেখানে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর বাজার শেয়ার ছিল প্রায় ১০০ শতাংশ, সেখানে ২০২৪ সালে তা অনেকটা নেমে এসেছে। ওয়ালটনের মতো অনেক দেশীয় ব্র্যান্ডের এসি তাদের গুণগত মান বজায় ও নতুন টেকনোলজিসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ করছে। এবার আশা করছি, দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো ৫০ শতাংশের বেশি বাজার দখল করতে সক্ষম হবে। ধারণা করা যায়, চলতি বছরেও দেশীয় ব্র্যান্ডের এসির চাহিদা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।

গুণগত মান ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করায় গ্রাহকদের আস্থা ও মনে জায়গা করে নিয়েছে ওয়ালটন এসি
ছবি: ওয়ালটনের সৌজন্যে
প্রথম আলো:

আপনাদের ব্র্যান্ডের এসি নিয়ে ক্রেতাদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

তানভীর রহমান: ওয়ালটন এসি তার গুণগত মান বজায় রেখে ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করায় গ্রাহকদের আস্থা ও মনে জায়গা করে নিয়েছে। ওয়ালটন প্রতিনিয়তই নিত্যনতুন টেকনোলজিসম্পন্ন বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী এসি ও সেরা বিক্রয়োত্তর সেবা নিশ্চিত করে আসছে। যার ধারাবাহিকতায় ওয়ালটন এসি এখন দেশসেরা ব্র্যান্ড হিসেবে অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত। গ্রাহকের এই আস্থা বজায় রাখার জন্য আমরা প্রতিনিয়তই নতুন নতুন উদ্ভাবন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআইসম্পন্ন প্রযুক্তি ও সাশ্রয়ী দামে পণ্য সরবরাহ করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

প্রথম আলো:

প্রথম আলো ডটকম আয়োজিত এসি মেলায় আপনারা অংশ নিয়েছেন। পাঠক ও আপনাদের গ্রাহকদের উদ্দেশে কী বলার আছে?

তানভীর রহমান: বরাবরের মতো চতুর্থবারেও প্রথম আলো ডটকম আয়োজিত এসি মেলায় অংশ নিতে পেরে আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। এই এসি মেলার মাধ্যমে আমরা আমাদের পণ্য, নতুন টেকনোলজি ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের ভিন্নতা খুব সহজেই গ্রাহকের কাছে উপস্থাপন করতে পারি। যার কারণে গ্রাহকেরা সহজেই যাচাই–বাছাই করে নিজের জন্য সঠিক পণ্য নির্বাচন করতে পারেন। এই মেলায় অংশ নিয়ে আমরা খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি। এমন আয়োজনের জন্য প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানাই।

প্রথম আলো:

আপনাকে ধন্যবাদ।

তানভীর রহমান: আপনাকেও ধন্যবাদ।