নিরাপত্তার শঙ্কায় পণ্য খালাস হচ্ছে কম

যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরফাইল ছবি

দেশের সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর থেকে পণ্যের চালান খালাস করে নিচ্ছেন না আমদানিকারকেরা। মূলত পথের নিরাপত্তার শঙ্কায় তাঁরা পণ্য খালাস করছেন না। এতে চট্টগ্রাম বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরে পণ্যের জট লেগেছে। এ ছাড়া অন্যান্য স্থলবন্দরেও গতকাল বুধবার পণ্য খালাস হয়নি বললেই চলে। ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টমস হাউসেও পণ্য খালাস বন্ধ ছিল।

জাহাজ-কনটেইনার জটে বন্দর

পণ্য খালাসের হার কম থাকায় চট্টগ্রাম বন্দর চত্বরে আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনারের স্তূপ বাড়ছে। আবার রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকায় ঢাকায় কমলাপুরগামী কনটেইনারের সংখ্যা ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে বন্দরের পরিচালন কার্যক্রম সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন বন্দরের কর্মকর্তারা।

বন্দরের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, রেল যোগাযোগ চালু হলে যেসব কনটেইনার প্রথমে ঢাকার কমলাপুর কনটেইনার ডিপোতে নেওয়া হবে, সেগুলো গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে জাহাজ থেকে নামানো হয়েছিল।

বন্দর চত্বরে আমদানি পণ্যবোঝাই কনটেইনারের সংখ্যাও বাড়ছে। গতকাল বন্দর চত্বর থেকে খালাস হয়েছে ১ হাজার ৪৩৫ একক কনটেইনার। স্বাভাবিক সময়ে এই সংখ্যা থাকে তিন হাজার একক কনটেইনার। খালাসের হার না বাড়ায় আমদানি পণ্যবোঝাই কনটেইনারের সংখ্যা বেড়ে ৪০ হাজার ৬৭১টিতে উন্নীত হয়েছে, যা বন্দরে কনটেইনার রাখার ধারণক্ষমতার ৯৩ শতাংশ।

বন্দরের সচিব ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, রেল চলাচল বন্ধ থাকায় ঢাকায় কমলাপুরগামী কনটেইনারের জট বেড়ে গেছে। আবার বন্দর চত্বর থেকে পণ্য খালাস না বাড়ায় কনটেইনারের সংখ্যা বাড়ছে।

এদিকে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তারা গতকাল অফিস করেছেন। আগের দিন বেলা আড়াইটার পর নিরাপত্তার শঙ্কায় তাঁরা অফিস ত্যাগ করেছিলেন।

চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি পণ্যবোঝাই কনটেইনারের সংখ্যা বেড়ে ৪০ হাজার ৬৭১টিতে উন্নীত হয়েছে, যা বন্দরে কনটেইনার রাখার ধারণক্ষমতার ৯৩ শতাংশ।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম আকতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পণ্য খালাসের হার ধীরে ধীরে বাড়ছে। দুই-এক দিনের মধ্যে পণ্য খালাসের গতি আরও বাড়বে।

বেনাপোলে পণ্য খালাস নেই

বেনাপোল বন্দরে গতকালও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম হয়নি বললেই চলে। বন্দর এলাকায় শতাধিক পণ্যবোঝাই ট্রাক থেকে পণ্য নামানো হয়েছে। খালি ট্রাক ভারতে গেছে। ভারত থেকেও খালি ট্রাক এসেছে। কিন্তু কোনো পণ্যবোঝাই ট্রাক আসা-যাওয়া করেনি। এর মানে হলো, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম কার্যত বন্ধ ছিল।

এদিকে গতকাল থেকে আমদানি করা পণ্যের ট্রাক পেট্রাপোল বন্দর থেকে বেনাপোল বন্দরে পাঠানোর কথা ছিল। গত মঙ্গলবার উভয় পক্ষের বৈঠকে এমনটাই সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু গতকাল আমদানি করা পণ্যবোঝাই ট্রাক বাংলাদেশে আসেনি।

স্থলবন্দরের কর্মকর্তারা জানান, বেনাপোলে পণ্যের জট লেগেছে। আমদানিকারকেরা নিরাপত্তার অভাবে পণ্য খালাস করছেন না। কারণ, বন্দর এলাকার আশপাশের সড়কপথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দেখা যায়নি।

বেনাপোল স্থলবন্দরের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক (ট্রাফিক) রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশা করি বৃহস্পতিবার (আজ) থেকে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করবে।’

এদিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টমস হাউসেও গতকাল সীমিত পরিসরে পণ্য খালাস হয়েছে। বিশেষ করে দলিলাদি বা ছোটখাটো পণ্যের খালাস করা হয়েছে। ঢাকা কাস্টমস হাউসের কার্যক্রম এখনো স্বাভাবিক হয়নি। সেখানকার অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী কার্যালয়ে যাননি।

দুই দিন পর বাংলাবান্ধায় কাজ শুরু

প্রথম আলোর পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুই দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল সকাল থেকে এই বন্দর দিয়ে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়েছে। গতকাল ভারত ও ভুটান থেকে আমদানি পণ্য (পাথর) নিয়ে ১৪৫টি গাড়ি (ট্রাক) বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করেছে। একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন রপ্তানি পণ্য নিয়ে ২৭টি ট্রাক ভারতে গেছে।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেডের ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, দুই দিন বন্ধ থাকার পর বন্দরের কার্যক্রম সচল হয়েছে। বন্দর এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

এ ছাড়া বিবিরবাজার, সোনামসজিদ, হিলি, তামাবিলসহ দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দরে গতকালও পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়নি বললেই চলে। ভারত থেকে পণ্যবোঝাই ট্রাক আসেনি। আবার আগে আসা পণ্যের চালান কেউ খালাস করে নেননি। সড়কপথে অনিশ্চয়তা ও শঙ্কার কথা চিন্তা করে আমদানিকারকেরা পণ্য খালাস করছেন না। তবে ভোমরা স্থলবন্দরে খুব সীমিত পরিসরে পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়েছে।