ঈদে বিক্রি বাড়াতে চলছে মূল্যছাড়
ফ্রিজের বাজারের বড় অংশই এখন দেশীয় কোম্পানির দখলে। তাতে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছেও ফ্রিজ পৌঁছে গেছে সহজে।
দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা শেষে অবশেষে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। এবার কোরবানির ঈদে বাসার জন্য আপনি নতুন ফ্রিজ কিনবেন। কিন্তু কোন ব্র্যান্ডের ফ্রিজ কিনবেন, কত দামে কিনবেন— তা নিয়ে পড়লেন চিন্তায়। আবার কোরবানি সামনে রেখে কোম্পানিগুলো বিশেষ ছাড়ও দিচ্ছে। এখন কেনার আগে জেনে নিতে পারেন এসব ছাড়ের সুবিধা।
ঈদ উপলক্ষে দেশীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটন তাদের বিক্রয়কেন্দ্রে নির্দিষ্ট কিছু মডেলের ফ্রিজে ২০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় দিচ্ছে। এ ছাড়া গ্রামীণফোনের স্টার গ্রাহকেরা ওয়ালটনের সব পণ্যে পাচ্ছেন ১০ শতাংশ ছাড়। সুদ ছাড়াই ১২ মাসে ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটার ব্যবস্থা তো আছেই। এবার ওয়ালটনের পণ্য কিনতে গাড়িসহ নগদ টাকা পুরস্কার পাওয়ার সুযোগও আছে।
দেশীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটনের ক্রেতারা বর্তমানে ১৪ হাজার ৯৯০ টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ ৪২ হাজার ৯৯০ টাকায় বিভিন্ন ধরনের ফ্রিজ পাবেন। এই দামের মধ্যে ১২৫ লিটার থেকে শুরু করে ৩০০ লিটার পর্যন্ত ইনভার্টার ডিপ ফ্রিজও আছে। বিদ্যুৎ–বিভ্রাটেও এসব ফ্রিজে ১২০ ঘণ্টা পর্যন্ত খাবার সতেজ থাকে।
সম্প্রতি ওয়ালটন তাদের জায়ানটেক সিরিজের নতুন ফ্রিজ বাজারে এনেছে। এ সিরিজের ফ্রিজের দাম একটু বেশি। এই সিরিজের নতুন তিনটি ফ্রিজ বাজারে এনেছে ওয়ালটন। ৬১৯ লিটার থেকে ৬৬০ লিটার ধারণক্ষমতার ওয়ালটনের এই ফ্রিজগুলোর দাম পড়বে ১ লাখ ১৩ হাজার থেকে ২ লাখ টাকার মধ্যে। এসব ফ্রিজে ১ বছরের রিপ্লেসমেন্টের পাশাপাশি কম্প্রেসরে ১২ বছরের গ্যারান্টি পাচ্ছেন গ্রাহকেরা। সারা দেশে প্রায় ২০ হাজার বিক্রয় কেন্দ্র আছে ওয়ালটনের। আর আছে ৭৯টি বিক্রয়োত্তর সেবাকেন্দ্র।
■ ওয়ালটনের ১২৫-৩০০ লিটার ইনভার্টার ডিপ ফ্রিজ লোডশেডিংয়েও ১২০ ঘণ্টা পর্যন্ত খাবার সতেজ রাখে
■ যমুনা ফ্রিজ কিনলে রয়েছে সোনার চেইন, টিভি, এসিসহ লাখ টাকার ঈদ উপহার।
■ ৩৫টি ব্যাংকের গ্রাহককে ৩৬ মাস পর্যন্ত ইএমআই সুবিধা দিচ্ছে ট্রান্সকম ডিজিটাল।
■ সনি-স্মার্ট জিপি স্টার কাস্টমারদের দিচ্ছে ২৬ শতাংশ ক্যাশব্যাক।
■ কনকা ব্র্যান্ডের ৭০টির বেশি মডেলের ফ্রিজ ও ডিপ ফ্রিজ বাজারে।
দেশীয় আরেক ব্র্যান্ড যমুনার ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ১০ শতাংশ ছাড় দিয়ে তাদের ফ্রিজের দাম শুরু হয়েছে ৩১ হাজার ৭৭০ টাকা থেকে। এই ব্র্যান্ডের ফ্রিজের সর্বোচ্চ দাম ১ লাখ ১০ হাজার ৯৬০ টাকা। যমুনার ডিপ ফ্রিজের দাম ২৫ হাজার ৬৩২ টাকা থেকে ৩৮ হাজার ৯৭০ টাকার মধ্যে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে যমুনা ইলেকট্রনিকসে চলছে ‘মিশন মিলিয়নেয়ার’ প্রচারণা। এ প্রচারণার আওতায় বাংলাদেশের যেকোনো যমুনা প্লাজা বা পরিবেশক থেকে যমুনার পণ্য ক্রয় করে গ্রাহকেরা জিতে নিতে পারেন সোনার চেইন, ফ্রিজ, টিভি, এসিসহ লাখ টাকার ঈদ উপহার। ৩৬টি ব্যাংকের কার্ডে শূন্য শতাংশ সুদে ইএমআই সুবিধা আছে এই ব্র্যান্ডের ফ্রিজ কেনাকাটায়।
এ বিষয়ে যমুনা গ্রুপের পরিচালক মনিকা নাজনীন ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের সব জনগোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও পণ্যের অতিরিক্ত দাম না বাড়িয়ে ক্রেতাদের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য সরবরাহ করছে যমুনা।’
দেশীয় প্রতিষ্ঠান ট্রান্সকম ডিজিটালে ফ্রিজ আছে ২০০ লিটার থেকে শুরু করে ৭২০ লিটার পর্যন্ত। ফ্রিজের এমন বৈচিত্র্য আর কোথাও নেই বলে দাবি প্রতিষ্ঠানটির। কারণ, প্রতিষ্ঠানটি বাজারে দেশি-বিদেশি ছয় ব্র্যান্ডের ফ্রিজ বিক্রি করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে ট্রান্সটেক, ওয়ার্লপুল, হিটাচি, স্যামসাং, হায়ার ও বস। দাম ৩১ হাজার ৯০০ টাকা থেকে ৬ লাখ ৪ হাজার ৯০০ টাকা পর্যন্ত।
৩৫টি ব্যাংকের সঙ্গে ট্রান্সকম ডিজিটালের চুক্তি আছে। ফলে এসব ব্যাংকের গ্রাহকেরা ৩৬ মাসের ইএমআই সুবিধায় কিনতে পারবেন পছন্দের ফ্রিজ। এ ছাড়া ৯টি ব্যাংকের সঙ্গে বিশেষ চুক্তি রয়েছে ট্রান্সকমের। এ সব ব্যাংকের কার্ড ব্যবহারে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ ছাড় বা ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি আইপিডিসি ফাইন্যান্সের সহায়তার গ্রাহকদের অগ্রাধিকারমূলক ক্রয় সুবিধা দিয়ে থাকে। ১২ মাস পর্যন্ত বিনা সুদে এই সুবিধা পাওয়া যায়।
ট্রান্সকম ডিজিটালের ব্যবসা প্রধান রিতেশ রঞ্জন প্রথম আলোকে বলেন, দেশের বাজারে বিক্রির জন্য আমাদের কাছে ওয়ার্লপুল ও হিটাচির মতো ব্র্যান্ড আছে। ট্রান্সকম ডিজিটালের বেশির ভাগ রেফ্রিজারেটর স্থানীয়ভাবে সংযোজন করা হয়।
দেশে উৎপাদিত স্মার্ট ব্র্যান্ডের ফ্রিজের পাশাপাশি আমদানি করা বিশ্বখ্যাত শার্প ব্র্যান্ডের ফ্রিজ বাজারজাত করে আসছে স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) লিমিটেড বা সনি-স্মার্ট। এসব ফ্রিজের সর্বনিম্ন দাম ২৫ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা। ঈদ উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানটি দিচ্ছে বিনা সুদে ইএমআই সুবিধা। এ ছাড়া প্রতিটি পণ্যের সঙ্গে ১০০ ভাগ নিশ্চিত উপহার ও জিপি স্টার কাস্টমারদের জন্য ২৬ শতাংশ ক্যাশব্যাক সুবিধাও দিচ্ছে।
দেশের বাজারে চীনা কনকা ব্র্যান্ডের ফ্রিজের বাজারজাত করে ইলেকট্রো মার্ট। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ৭০টির বেশি মডেলের ফ্রিজ ও ডিপ ফ্রিজ আছে। এর মধ্যে সর্বনিম্ন দাম ১২ হাজার ৫০০ টাকা। আর সর্বোচ্চ দাম ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। গ্রাহকেরা নগদ টাকা ছাড়াও ৩৫টি ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে এককালীন বা ৩ থেকে ১৮ মাসের কিস্তি সুবিধায় মূল্য পরিশোধের সুযোগ পেয়ে থাকেন।
এসব ব্র্যান্ডের বাইরে মার্সেল, মিনিস্টার, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ভিশন এবং ওরিয়নের ফ্রিজ বাজারে পাওয়া যায়। ঈদুল আজহা সামনে রেখে এসব প্রতিষ্ঠানও বিক্রি বাড়াতে মূল্যছাড়সহ ক্রেতাদের নানা সুবিধা দিচ্ছে।