ডিপোতে পণ্যবাহী কনটেইনারের জট 

চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যবাহী কনটেইনারের স্তূপফাইল ছবি

চট্টগ্রামের বেসরকারি ১৯টি ডিপোতে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনারের স্তূপ বাড়ছে। ডিপো থেকে প্রতিদিন রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার জাহাজে তুলে দেওয়া হলেও জট কমছে না। তাতে সময়মতো পণ্য রপ্তানি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি ও ইন্টারনেট বন্ধের জেরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় এই জট তৈরি হয়েছে।

বেসরকারি কনটেইনার ডিপো সমিতির হিসাবে, গত বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামের ১৯টি ডিপোতে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনারের সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ১৮৭। স্বাভাবিক সময়ে ছয় থেকে সাত হাজার কনটেইনার থাকে ডিপোতে। অর্থাৎ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ কনটেইনার রয়েছে এখন ডিপোতে। কনটেইনারের বাইরে ডিপোতে রপ্তানি পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যান রয়েছে দুই হাজারের বেশি।

খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রপ্তানি পণ্যের এই জট আরও বাড়তে পারে। কারণ, কয়েক দিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার থেকে পোশাক কারখানা খুলেছে। সড়কে রপ্তানি পণ্য পরিবহনে অনিশ্চয়তার কারণে অনেক কারখানা মালিক পণ্য পাঠাননি ডিপোতে। রপ্তানির অপেক্ষায় কারখানায় আটকে থাকা এসব পণ্যও এখন ডিপোতে আনা শুরু হয়েছে।  

জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। ফলে কারখানাগুলোতে এখন পুরোদমে কাজ চলছে। তবে ডিপোতে যেহেতু পণ্যের চাপ বেড়ে গেছে, সে জন্য বন্দরের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া দরকার। যাতে ডিপো থেকে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশিসংখ্যক কনটেইনার জাহাজে তুলে দেওয়া যায়।  

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া পণ্যের ৯০ শতাংশেরই ব্যবস্থাপনা করে চট্টগ্রামের বেসরকারি ২০টি ডিপো। রপ্তানিকারকেরা কারখানা থেকে কাভার্ড ভ্যানে পণ্য এনে ডিপোর ছাউনিতে রাখেন। সেখানে কাস্টমসের শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শেষে রপ্তানিকারকের প্রতিনিধিরা বিদেশি ক্রেতার প্রতিনিধি ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার প্রতিষ্ঠানের হাতে এসব পণ্য বুঝিয়ে দেন। ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাররা রপ্তানি পণ্য কনটেইনারে বোঝাই করে বন্দর দিয়ে জাহাজে তুলে দেন। রপ্তানি পণ্য ছাড়াও খালি কনটেইনার সংরক্ষণ করে ডিপোগুলো। আবার ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্য বন্দর থেকে ডিপোতে এনে খালাস করা হয়।

জানতে চাইলে ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খায়রুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দিন অনিশ্চয়তার কারণে রপ্তানি পণ্যের সরবরাহব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে। নতুন সরকার গঠনের পর আশা করছি, খুব দ্রুত এই জট নিরসন হবে। সে জন্য রপ্তানি কার্যক্রমে যুক্ত সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’  

কনটেইনার ডিপো সমিতির দুই দিনের হিসাবে দেখা যায়, ডিপো থেকে বন্দর দিয়ে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার জাহাজে তুলে দেওয়ার হার কমছে। অন্যদিকে কারখানা থেকে ডিপোতে কাভার্ড ভ্যানে পণ্য আনার হার বাড়ছে। গত মঙ্গলবার ডিপো থেকে বন্দরে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার পাঠানো হয়েছে ২ হাজার ৩১২টি। পরদিন তা কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৩টিতে। অন্যদিকে মঙ্গলবার কারখানাগুলো থেকে ডিপোতে পাঠানো কাভার্ড ভ্যানের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৫০৯টি। পরদিন তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ১০২টিতে।

জানতে চাইলে কনটেইনার ডিপো সমিতির মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় এই জট কমাতে হলে বন্দরে কনটেইনারবাহী জাহাজ আগের তুলনায় বাড়ানো দরকার। তাহলে ডিপো থেকে কনটেইনার রপ্তানির হার বাড়বে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে বন্দরে আমদানি কনটেইনারের চাপ বেড়ে যেতে পারে। সেটিও সামাল দেওয়া যাবে, যদি এক মাসের জন্য আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনার ডিপোতে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।

ডিপোর মতো বন্দরও এখন কনটেইনার ও জাহাজজটে পড়েছে। বন্দরের জেটিতে ভেড়ানোর জন্য সাগরে অপেক্ষমাণ জাহাজের সংখ্যা বাড়ছে। গত কয়েক দিন গড়ে ১৫টির মতো জাহাজ অপেক্ষা করছে বহির্নোঙরে। আবার জেটিতেও আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনারের স্তূপ জমছে। বন্দরে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনারের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। 

তবে বন্দরসচিব মো. ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় বন্দর থেকে পণ্য খালাসের হার বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা আমদানি পণ্য খালাসের হার আরও বাড়িয়ে দিলে বন্দরে কনটেইনারের সংখ্যা কমবে। তাতে পরিচালন কার্যক্রম আরও দ্রুততর হবে।