বাজারদর
চিনির দাম আরও বাড়ল
চিনিকলের মালিকেরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে বলেছেন, আমদানি নিয়ে তারা সিদ্ধান্তহীনতায়।
ঢাকার বাজারে ১০ দিনের ব্যবধানে খোলা চিনির দাম কেজিতে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর বাজারে খোলা চিনির দাম বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। ঈদের আগে বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ছিল সর্বোচ্চ ১২৫ টাকা। খোলা চিনি কিছুটা পাওয়া গেলেও প্যাকেটজাত চিনি মিলছে না বাজারে।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ–সংকটে বাজারে চিনির দামে এই অস্থিরতা চলছে। তবে মিলমালিকেরা বলছেন, দেশে চিনির কোনো সংকট নেই; তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি। এ অবস্থায় গতকাল চিনিকলের মালিকেরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এক চিঠির মাধ্যমে তাঁদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন চিঠিতে বলে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় চিনি আমদানি নিয়ে তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মগবাজার ও মালিবাগ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি খোলা চিনি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই দুই বাজার ও বাজার–সংলগ্ন এলাকার ১২টি মুদিদোকানে চিনির দামের খোঁজ নেয় প্রথম আলো। এসব দোকানের মধে৵ সাতজন দোকানি বলেন, চিনির সরবরাহ না থাকায় তাঁরা চিনি বিক্রি করছেন না। যেসব দোকানে চিনি বিক্রি হচ্ছে, সেসব দোকানি ঈদের আগে এসব চিনি কিনেছিলেন। বর্তমানে দু-একজন বিক্রেতা চিনি পেলেও অধিকাংশ বিক্রেতা তাঁদের চাহিদা অনুযায়ী পাচ্ছেন না।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা। তবে মগবাজার ও মালিবাগ বাজারে দেখা গেছে, প্রতি কেজি চিনি ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত মাসে সরকার প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ১০৪ টাকা বেঁধে দিয়েছিল।
মৌলভীবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল ফটকে দিনের পর দিন ট্রাক বসিয়ে রেখেও চাহিদা অনুযায়ী চিনি মিলছে না। ফলে বাজারে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। দামও বাড়ছে।
তবে মিল থেকে চিনির সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও দেশবন্ধু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দামে অস্থিরতা বিরাজ করছে। আমরা বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছি।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দেওয়া সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চিঠিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে প্রতি টন অপরিশোধিত চিনির দাম ৬৭৫ মার্কিন ডলার। অথচ এক মাস আগেও তা ছিল ৫২০ ডলার। এই বাস্তবতায় চিনি আমদানির ঋণপত্র খুলতে ‘ভীতির সম্মুখীন’ হচ্ছেন অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। কারণ, বর্তমান দামে চিনি আমদানি করলে তাতে প্রতি কেজিতে সব মিলিয়ে খরচ পড়বে ১৩১ টাকা।
চিনির বাজার পরিস্থিতি ও ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণে আজ বুধবার মিলমালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।
জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম ২০৫ টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন। চিনির বিষয়েও একটি আবেদন পেয়েছি। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।’