এক মাসে দুই দফা নীতি সুদহার বাড়ানো হবে: গভর্নর
মূল্যস্ফীতি কমাতে আগামী এক মাসের মধ্যে আরও দুই দফায় নীতি সুদহার বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসার আগপর্যন্ত সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকবে। বর্তমানে সুদহার বেশি, এটি আরেকটু বাড়তে পারে।
ব্যাংক খাত সংস্কারের জন্য গঠিত টাস্কফোর্সের সঙ্গে সোমবার সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন গভর্নর। আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘গত মাসে একবার নীতি সুদহার বাড়িয়েছি। এই সপ্তাহে বৃহস্পতিবার আবার বাড়াব। আগামী মাসেও একবার নীতি সুদহার বাড়ানো হবে। আশা করছি, আগামী মার্চ-এপ্রিল নাগাদ মূল্যস্ফীতি কমে একটা ভালো জায়গায় চলে আসবে।’
বর্তমান পরিস্থিতিতে সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল করাকেই সবচেয়ে অগ্রাধিকারমূলক কাজ বলে উল্লেখ করেন গভর্নর। তিনি বলেন, ‘লেনদেনের ভারসাম্য ও বিনিময় হার স্থিতিশীল করা এবং মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা—এ তিনটি আমাদের অগ্রাধিকারের কাজ। বিনিময় হার ৩ মাস ধরে ১২০ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে। এটি আরও কয়েক মাস ধরে রাখতে পারলে মূল্যস্ফীতি কমবে। পাশাপাশি ব্যাংক খাতের সংস্কারকাজও চলবে। তবে সেটি করতে সময় লাগবে।’
বাজেটে ব্যয়ের আকার কমিয়ে আনা হচ্ছে জানিয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ব্যাংক খাত থেকে ধারের পরিমাণ কমিয়ে আনা হবে। পাশাপাশি মুদ্রা ও আর্থিক নীতি সংকোচন করা হচ্ছে। এতে সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল হবে, যদিও প্রবৃদ্ধি সেভাবে হবে না। তবে প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের ওপর গেলেই আমরা সন্তুষ্ট থাকব।’
ব্যাংক খাত সংস্কারের উদ্যোগের অগ্রগতি নিয়ে গভর্নরকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। জবাবে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ব্যাংক খাত সংস্কারের জন্য প্রথমে ব্যাংকগুলোর ঋণ ও সম্পদের বিস্তর মূল্যায়ন করতে হবে। এ কাজে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ইউএসএআইডি ও ব্রিটিশ সরকারের এফসিডিও কার্যালয় সহায়তা দিচ্ছে। তাদের অর্থায়ন নিয়ে কিছু আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ এনে আমরা কাজ শুরু করব। এ কাজে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা ও নিরীক্ষকেরাও যুক্ত হবেন।’
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আরও জানান, ‘প্রথমে তিনটা ব্যাংকে মূল্যায়ন করা হবে, এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক থাকবে। এগুলো শেষ করে আবার ৩টি করে ৯টি দুর্বল ব্যাংকের মূল্যায়ন শেষ করা হবে। আশা করি, আগামী এক মাসের মধ্যে পুরোদমে কাজে নেমে পড়তে পারব।’
খেলাপি ঋণের বিষয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ব্যাংক থেকে নামে বা বেনামে কত টাকা নেওয়া হয়েছে, সেটা আগে বের করতে হবে। টাকা নেওয়া প্রতিষ্ঠানের মালিকের দেশে যাতায়াত না থাকলে বুঝতে হবে বেনামে টাকা বের করা হয়েছে। তখন আমরা দেখব, আন্তর্জাতিভাবে কী করা যায়। মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেক টাকা গেছে কয়েকটা গোষ্ঠীর কাছে। এমন বড় খেলাপিদের বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি থাকবে।’