সরকার বর্তমানে ৪০ ধরনের পণ্যে প্রণোদনা দিচ্ছে। নতুন করে বিশেষ প্রণোদনার ঘোষণা আসতে পারে নন-কটন পোশাক রপ্তানি খাতে। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) অনুরোধে বিষয়টি নিয়ে ভাবছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ রয়েছে।
অর্থ বিভাগ প্রণোদনা দেওয়ার সার্বিক দিক যাচাই-বাছাই করে তাদের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংককে পাঠাবে। এরপরই কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রণোদনা বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে। তবে প্রণোদনা দেওয়া হলেও তা বিজিএমইএর চাওয়া অনুযায়ী না-ও হতে পারে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে।
বিজিএমইএ গত ৮ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে নন-কটন খাতে ১০ শতাংশ প্রণোদনা দাবি করে। এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্মত হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের কাছে চিঠি পাঠায় গত ১৫ মে। অর্থসচিব তা পাঠান অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রেহানা পারভীনের কাছে। আর রেহানা পারভীন ৮ জুন বিষয়টি পাঠান বিভাগের মনিটরিং সেলে। এখন মনিটরিং সেল পুরো বিষয়টির খুঁটিনাটি বিচার-বিশ্লেষণ করছে বলে সূত্রগুলো জানায়।
বিজিএমইএ বলেছে, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের ফলে ২০২৬ সালের পর নগদ প্রণোদনা প্রদানের ওপর বিধিনিষেধ আসবে। সে জন্য মাঝখানের সময়টাতে সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে বিনিয়োগ বাড়ানো হবে সময়োপযোগী পদক্ষেপ। ২০৩০ সালের মধ্যে পোশাক খাত থেকে ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের যে লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে, তা অর্জন করতে দরকার পণ্যের বহুমুখীকরণ। বিশেষ করে নন-কটন পণ্যের প্রসার এখন কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম প্রথম আলোকে বলেন, দক্ষিণ আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া—এসব দেশে নন-কটন পণ্যের রপ্তানি বাড়ছে। এ ধরনের পণ্যে মূল্য সংযোজন বেশি। দামও ভালো পাওয়া যায়। কটনের পোশাক ইস্তিরি ছাড়া পরা যায় না, অথচ নন-কটন পোশাক ইস্তিরি ছাড়া কয়েক দিন পরা যায়। বিষয়টিই পশ্চিমা দেশের মানুষকে টানছে বেশি। তাই প্রণোদনা দিলে এ খাতে নিশ্চিতভাবে বিনিয়োগ বাড়বে বলে মনে করেন শহীদুল্লাহ আজিম।
নন-কটন খাতের রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্যোগের পাশাপাশি পোশাক খাতের সুরক্ষার বিষয়ে আরও সংবেদনশীল হওয়া দরকার বলেও মনে করে বিজিএমইএ। এ জন্য পাঁচটি বিষয়কে চিহ্নিত করেছে বিজিএমইএ। বিষয়গুলো হচ্ছে চলমান সংকটে বৈদেশিক মুদ্রাসংক্রান্ত চাপ কমানো ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং প্রবৃদ্ধির ধারা সুরক্ষিত রাখা, বৈদেশিক বাণিজ্যে ভারসাম্য ধরে রাখা এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা।
চিঠিতে বিজিএমইএ জানিয়েছে, বিশ্বের মোট বস্ত্রপণ্যের ৭৫ শতাংশই এখন নন-কটন, বাকি ২৫ শতাংশ কটন। আর বৈশ্বিক পোশাক বাণিজ্যের ৫২ শতাংশ নন-কটনের। তবে বাংলাদেশের নন-কটন পোশাক ২৭ শতাংশ।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, নন-কটনের বৈশ্বিক বাজার অনেক বড়। চীন থেকে নন-কটন পণ্যে বিনিয়োগ সরে যাচ্ছে, ক্রয়াদেশও কমছে। নীতি-সহায়তা পেলে বাংলাদেশ এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগ যেমন আকৃষ্ট করতে পারবে, তেমনি রপ্তানিও বাড়াতে পারবে।