সিলেট চেম্বারে নির্বাচন দাবি, পাঁচ পরিচালকের পদত্যাগ

সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান কমিটি বাতিল করে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন পর্ষদ গঠনের দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের একটি অংশ। তাদের দাবি, আওয়ামী লীগপন্থী ব্যবসায়ীরা কোনো ধরনের নির্বাচন ছাড়া সমঝোতার মাধ্যমে সর্বশেষ কমিটি গঠন করেছিলেন। এ জন্য দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তারা নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্বের পরিবর্তন চায়।

চেম্বার সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ ব্যবসায়ী সংগঠনে বর্তমানে সাড়ে তিন হাজার ভোটার রয়েছেন। চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি ২০২৪-২৬ মেয়াদের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তাহমিন আহমদ সভাপতি, মো. এমদাদ হোসেন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও এহতেশামুল হক চৌধুরী সহসভাপতি মনোনীত হন। এর আগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরিচালক হন ২২ জন।

সর্বশেষ নির্বাচন নিয়ে একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে জানান, গত জানুয়ারিতে নির্বাচন ছাড়াই ‘গোপনীয়ভাবে’ চেম্বারের কমিটি গঠন করা হয়। এতে পৃষ্ঠপোষকতা করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। ভয়ে তখন কেউ এর প্রতিবাদ করেননি। এখন এ নিয়ে কথা বলার সুযোগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চেম্বারের সভাপতি তাহমিন আহমদ। তিনি বলেন, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে চেম্বারকে অস্থিতিশীল করতেই কয়েকজন পদত্যাগ করেছেন। চেম্বারের নির্বাচন যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে গঠনতান্ত্রিকভাবেই করা হয়েছে।

এদিকে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই হওয়া একাধিক মামলার চেম্বারের সভাপতি তাহমিন আহমদ ও পরিচালক দেবাংশু দাসকে আসামি করা হয়েছে। তাহমিন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য এবং দেবাংশু সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ বর্তমান কমিটি বাতিল করে নতুন নির্বাচনের দাবি জানায়।

চেম্বার সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই চেম্বারের ২২ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির ৫ জন ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। তাঁরা হলেন মো. এমদাদ হোসেন (বর্তমানে বিদেশে আছেন), এহতেশামুল হক চৌধুরী, খন্দকার ইসরার আহমদ, জহিরুল কবির চৌধুরী ও আলীমুল এহছান চৌধুরী। তাঁদের মধ্যে চারজন ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। তবে পরিচালক আলীমুল পদত্যাগপত্রে নতুন নির্বাচনের দাবি জানান।

আলীমুল এহছান চৌধুরী গত বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘আশা করছি, শিগগিরই নির্বাচনের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী এই চেম্বারের পরিচালক পর্ষদ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আমি ব্যবসায়ীদের স্বার্থে অতীতের মতো সব সময় আপনাদের পাশে থাকব।’

কয়েকজন ব্যবসায়ীর অভিযোগ, সর্বশেষ কমিটি গঠনের সময় তফসিল ঘোষণাসহ যাবতীয় নিয়মকানুন গোপনে করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা মূলত ২১ জানুয়ারি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে চেম্বারের নতুন কমিটি গঠনের বিষয়টি জানতে পারেন। পরে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। সমঝোতার মাধ্যমে গঠিত এ কমিটিতে আওয়ামী লীগপন্থী ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বিএনপি ও জামায়াতের অনুসারী হিসেবে পরিচিতি কিছু ব্যবসায়ীও ছিলেন।

সিলেট চেম্বারের নির্বাচন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও চেম্বারের সদস্য আবদুল জব্বার জলিল প্রথম আলোকে বলেন, অতীতের মতো কোনো ধরনের ঘোষণা কিংবা পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে এবং সব ব্যবসায়ীকে না জানিয়ে হুট করে প্রভাব খাটিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে ভোটাররা ক্ষুব্ধ ছিলেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন কমিটি ভেঙে তাই নতুন নির্বাচনের দাবি উঠেছে।

চেম্বারের দুবারের নির্বাচিত সাবেক এক পরিচালক জানান, প্রত্যেক ভোটারের নির্বাচনী তফসিল পাওয়ার কথা। অথচ নির্বাচন হয়ে গেল, কিন্তু সেটা তাঁরা জানেনইনি। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সিলেট জেলা শাখার মহাসচিব মো. আবদুর রহমান বলেন, রাতের আঁধারে গোপনে চেম্বারের কমিটি মনোনীত করা হয়। এখানে কোনো নির্বাচন হয়নি। তাই পরিচালনা পর্ষদের সবাইকে পদত্যাগ করতে হবে।

নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে আওয়ামী লীগের নেতা শফিউল আলম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। অবশ্য শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে তাঁকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।

চেম্বারের সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, মূলত একটা মহল চেম্বারকে অকার্যকর করতে চায়। নির্বাচনের সময় কিছু পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়নি, আবার কিছু পদে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ জন্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সবাই নির্বাচিত হয়েছেন। এটা গোপনে করা কোনো কমিটি ছিল না।

ব্যবসায়ীদের দাবি, প্রকৃত ভোটাধিকারের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব বাছাই করতে হবে। তা না হলে তাঁরা কঠোর কর্মসূচি দেবেন। এর অংশ হিসেবে বর্তমান কমিটির পদত্যাগের দাবিতে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে আজ রোববার মানববন্ধন করার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে চেম্বারের ই-মেইল থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বলা হয়েছে, ‘সভাপতি তাহমিন আহমদ শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় এবং জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. এমদাদ হোসেন ও সহসভাপতি এহতেশামুল হক চৌধুরী পদত্যাগ করায় চেম্বারের জ্যেষ্ঠ পরিচালক মুজিবুর রহমান মিন্টুকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল রোববার (আজ) থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দায়িত্ব পালন করবেন।’ রাতে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।