ডিমের দাম চড়া, বাজারে ‘কারসাজি’
রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোয় ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন (১২টি) বাদামি ডিমের দাম এখন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। অথচ ডিম উৎপাদক খামারিরা পাইকারদের কাছে এসব ডিম বিক্রি করছেন ১২৫–১৩০ টাকা দরে। অর্থাৎ পাইকারি পর্যায়ে প্রতি ডজনে ২৫ টাকার বেশি দাম বাড়ছে। এমন মূল্যবৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক দাবি করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলেছে, পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণেই ডিমের দাম বাড়ছে।
ডিমের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ভোক্তা অধিদপ্তর। এতে ডিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী, ডিম ব্যবসায়ী সমিতি ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর-সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আরমান হায়দার বলেন, বর্তমানে ফার্মের মুরগির প্রতিটি বাদামি ডিমের সর্বোচ্চ উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৮৮ পয়সা। তবে ডিম উৎপাদনকারী প্রান্তিক খামারি ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা বলেন, তাঁরা এর চেয়েও কম দামে এখন পাইকারদের কাছে ডিম সরবরাহ করছেন। তাহলে খুচরা পর্যায়ে একটি ডিমের দাম কেন ১৩-১৫ টাকা হয়, সেই প্রশ্ন তোলেন সভায় উপস্থিত ব্যক্তিরা।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল জব্বার বলেন, রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ডিমের ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই তিন-চার দফায় হাত বদল হয়, দাম বাড়ে। পরে সকালে খুচরা বিক্রেতাদের জন্য একটি দাম নির্ধারণ করে খুদে বার্তার (এসএমএস) মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়। সেই দরেই সারা দেশে ডিম বিক্রি হয়। এতে খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিম কিনতে ভোক্তাকে তিন–পাঁচ টাকা বেশি দাম দিতে হয়।
খুদে বার্তার মাধ্যমে ডিমের দামে কারসাজির অভিযোগ অস্বীকার করেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের বলেন, ‘আমরা কাউকে কোনো ধরনের এসএমএস দিই না।’
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে বছরে ১ হাজার ৮০৬ কোটি ডিমের চাহিদা রয়েছে। উৎপাদিত হয় ২ হাজার ৩৩৭ কোটি। অর্থাৎ চাহিদার চেয়ে ডিমের জোগান বেশি। ফলে বাজারে ডিমের দাম বেশি থাকার কোনো কারণ নেই।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘বাজারে সত্যিকার অর্থে ডিমের দামে কারসাজি করা হচ্ছে। উৎপাদন পর্যায় থেকে নয়, ডিমের বাজারে দাম নির্ধারণ হয় সরবরাহ শৃঙ্খলের মধ্যবর্তী কোনো জায়গা থেকে। আমরা সেই জায়গাগুলো ইতিমধ্যে চিহ্নিত করেছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমাদের কাছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে যারা কারসাজি করছে, তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেব। বাজার ঠিক না হলে ডিম আমদানির অনুমতির ব্যবস্থা করা হবে।’