বিপণিবিতান চালু, বেচাকেনা কম

খুলেছে দোকানপাট ও বিপণিবিতান। তবে বেশির ভাগ দোকান ও বিপণিবিতান ছিল ক্রেতাশূন্য। ফলে অলস সময় পার করেন বিক্রয়কর্মীরা। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রামের নিউমার্কেটেছবি: জুয়েল শীল

টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল বুধবার কয়েক ঘণ্টার জন্য খুলেছিল রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতান ও দোকানপাট। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকায় বিপণিবিতান ও দোকানপাট প্রায় সাত ঘণ্টা খোলা রাখা হয়।

তবে গ্রাহকের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। ব্যবসায়ীরা বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনো আতঙ্ক রয়েছে। এ জন্য অতি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বিপণিবিতান বা দোকানে আসেননি।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে ঘিরে গত সপ্তাহে সংঘাত-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটতে থাকায় সরকার গত শুক্রবার রাত ১২টা থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করে। প্রথম দিকে কারফিউতে স্বল্প বিরতি থাকলেও গতকাল সাত ঘণ্টা পর্যন্ত শিথিলতা ছিল। এতে দোকানপাট খোলার সুযোগ তৈরি হয়, যদিও ক্রেতাদের উপস্থিতি খুব কমই দেখা গেছে।

গতকাল বেলা দুইটার দিকে রাজধানীর পান্থপথে অবস্থিত বসুন্ধরা সিটি শপিং সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, বিপণিবিতানটি প্রায় ফাঁকা; হাতে গোনা কিছু ক্রেতা-দর্শনার্থী রয়েছেন। সেখানে কথা হয় পোশাকের দোকান জেন্টেল পার্কের ব্যবস্থাপক মো. গোলাম সাদীর সঙ্গে। তিনি জানান, কারফিউর নির্দেশনা মেনে কয়েক ঘণ্টার জন্য তাঁরা দোকান খুলেছেন।

বসুন্ধরা সিটিতে ইমিটেশন অলংকারের দোকান কেজেড ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপক সুমন সরকার জানান, অন্য দিনের তুলনায় গতকাল চার ভাগের এক ভাগও বিক্রি হয়নি। দোকানে ১০ জন কর্মচারী আছেন, অন্যান্য পরিষেবার খরচও রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে গত কয়েক দিনে ভালোই লোকসান হয়েছে তাঁদের।

১৭ জুলাই থেকেই বেচাকেনায় বিঘ্ন

রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের কারণে ১৭ জুলাই বুধবার থেকে বেচাকেনায় বিঘ্ন ঘটে। কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ওই দিন দুপুরে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত এলাকায় অনেক সংঘর্ষ হয়। এতে সেখানকার সব বিপণিবিতান বন্ধ হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার সকালে নিউমার্কেটের কিছু দোকান খুললেও বিকেলে সংঘর্ষের কারণে আবার বন্ধ হয়ে যায় এবং মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা বন্ধ ছিল। অন্যান্য এলাকাতেও একই অবস্থা দেখা গেছে। কয়েক দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল সব দোকানপাট আবার খুলেছে। নিউমার্কেট এলাকা ছাড়াও রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, রামপুরা প্রভৃতি এলাকায় গতকাল বিপণিবিতান খোলার খবর পাওয়া গেছে।

ঢাকা কলেজের উল্টো দিকের নূরজাহান মার্কেটের ডিগনিটি নামক পোশাকের দোকানের স্বত্বাধিকারী মো. সুমন হোসেন বলেন, ‘গত পাঁচ দিনে অন্তত এক লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হতো। আমরা এখন স্বাভাবিক একটা পরিবেশ চাই।’

‘ডাবল ধাক্কা’ নিউমার্কেটে

দুই সপ্তাহ আগে কয়েক ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে কোমরপানির নিচে চলে যায় ঢাকার নিউমার্কেট এলাকা। পরদিন শুক্রবার (১২ জুলাই) সকালে গিয়ে দেখা যায়, নিউমার্কেটের নিচতলায় থাকা সব দোকানেই পানি প্রবেশ করেছে। এতে লাখ লাখ টাকার পণ্য নষ্ট হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এর রেশ কাটতে না কাটতেই কোটা আন্দোলনকে ঘিরে শুরু হয় সহিংসতা। নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, জলাবদ্ধতা ও সংঘর্ষের কারণে ১৫ দিন ধরে তাঁদের ব্যবসা নিম্নমুখী ধারায় রয়েছে।

নিউমার্কেটের একটি পোশাক বিক্রির দোকানের স্বত্বাধিকারী বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘পানিতে ভিজে আমার ৩০ হাজার টাকার পণ্য নষ্ট হয়েছে। এরপর গত কয়েক দিনে বেচাকেনা একেবারেই বন্ধ। এটা আমাদের জন্য ডাবল ধাক্কা।’

এদিকে কারফিউর শিথিলতা থাকলেও অল্প কিছু সাধারণ ক্রেতা সংশয় ও শঙ্কা নিয়েই গতকাল বিপণিবিতানগুলোতে যান।