বিমা কোম্পানি
ডেল্টা লাইফে নতুন পর্ষদ আজ থেকে, প্রশাসক বাদ
দেড় বছরের বেশি সময় ধরে ডেল্টা লাইফ চলেছে তিন প্রশাসকের মাধ্যমে। আদালতের রায়ে প্রশাসক বাদ দিয়ে নতুন পর্ষদ অনুমোদন করেছে আইডিআরএ।
বিমা খাতের আলোচিত ও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্সে নতুন পরিচালনা পর্ষদ বসছে আজ মঙ্গলবার থেকে। আর কোম্পানিটি থেকে সরে যাচ্ছেন প্রশাসক মো. কুদ্দুস খান।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) গতকাল সোমবার কোম্পানিটি থেকে প্রশাসককে অব্যাহতি দিয়েছে। তাঁর বদলে কোম্পানিটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আট সদস্যের পরিচালনা পর্ষদকে। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রশাসক তাঁর দায়িত্ব পর্ষদের কাছে হস্তান্তর করবেন বলে জানা গেছে। আইডিআরএর পক্ষ থেকে গতকাল প্রশাসক মো. কুদ্দুস খান এবং পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হাফিজ আহমেদ মজুমদারকে আলাদা চিঠি পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, আট সদস্যের পুনর্গঠিত পর্ষদের চেয়ারম্যান হবেন হাফিজ আহমেদ মজুমদার, যিনি কোম্পানিটির নিরপেক্ষ পরিচালক। তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও পূবালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান। আর ভাইস চেয়ারম্যান হবেন জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেডের পরিচালক অধ্যাপক মো. জুনায়েদ শফিক। অন্যদের মধ্যে একই পরিবার থেকে পরিচালক থাকছেন ডেল্টা লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুরুর রহমানের স্ত্রী সুরাইয়া রহমান, তাঁদের মেয়ে আদিবা রহমান ও ছেলে জেয়াদ রহমান। আদিবা রহমান কোম্পানিটির সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)।
এ ছাড়া হা-মীম গ্রুপের কর্ণধার এ কে আজাদের ছেলে সাকিব আজাদ নিয়মিত পরিচালক হিসেবে থাকছেন। আরও থাকছে আরকম অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির চাকলাদার রেজানুল আলম। আর নিরপেক্ষ পরিচালক থাকছে আরামিট সিমেন্টের পরিচালক সাকিব আজিজ চৌধুরী। আরামিট সিমেন্ট ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী পরিবারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান।
প্রশাসক মো. কুদ্দুস খানকে দেওয়া চিঠিতে আইডিআরএ বলেছে, গত ২২ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিমা আইন অনুযায়ী তাঁকে ডেল্টা লাইফের প্রশাসকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, যা আজ থেকে কার্যকর হবে।
গত ২৪ জুলাই আইডিআরএ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় সমঝোতার মধ্য দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর গত ২২ আগস্ট পর্ষদ গঠনের সমঝোতা চুক্তি অনুমোদন দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কোম্পানির পর্ষদ স্থগিত করে প্রশাসক বসায় আইডিআরএ। তিনবার এ কোম্পানির প্রশাসক বদল হয়। প্রথমবার প্রশাসক ছিলেন আইডিআরএর সাবেক সদস্য সুলতান উল আবেদীন মোল্লা, দ্বিতীয় প্রশাসক ছিলেন সাবেক যুগ্ম সচিব মো. রফিকুল ইসলাম ও তৃতীয় প্রশাসক ছিলেন কুদ্দুস খান।
৯ শর্তে নতুন পর্ষদ
নতুন পর্ষদ গঠনে ডেল্টা লাইফকে নয়টি শর্ত দিয়েছে আইডিআরএ। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে, কোম্পানির পরের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করতে হবে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিবের নিচে নয়—এমন একজন কর্মকর্তা থাকবেন ডেল্টা লাইফের পর্যবেক্ষক। প্রচলিত আইন অনুযায়ী, নতুন পর্ষদকে সব কাজ করতে হবে এবং কোম্পানির আর্থিক বিবরণী সম্পর্কিত তথ্য উদ্ঘাটনে নতুন করে নিরীক্ষা করতে হবে।
আগে নিরীক্ষিত বিষয়গুলো শুনানি সাপেক্ষে নিষ্পত্তি করা এবং পুনর্গঠিত পর্ষদকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এক বছরের ব্যবসায়িক কৌশলপত্র দাখিল করার কথাও বলা হয়েছে চিঠিতে। কৌশলপত্রের অগ্রগতি এক মাস পর পর আইডিআরএকে জানাতে হবে।
শর্তের মধ্যে আরও বলা হয়েছে, বিমা আইন ও বিধিনিষেধ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করে শিগগিরই একজন দক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য সিইও নিয়োগ করতে হবে। আগের কোনো অনিয়ম চিহ্নিত হয়ে থাকলে, তার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আইডিআরএ আগে যেসব জরিমানা আরোপ করেছে, সেগুলো আইন অনুযায়ী বিবেচিত হবে।
কোম্পানিটি নিয়ে আইডিআরএ ও কোম্পানি কর্তৃপক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলা রয়েছে। মামলাগুলোর কী হবে—জানতে চাইলে নতুন পর্ষদের সদস্য জেয়াদ রহমান গত রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইডিআরএ ও ডেল্টা লাইফের মধ্যে মামলা ছিল ১৫টি। ১২টি প্রত্যাহার করেছে ডেল্টা লাইফ। তিনটি ছিল আইডিআরএর মামলা। আইডিআরএ এগুলো প্রত্যাহারের চিঠি দিয়েছে বলে জেনেছি।’