‘লকডাউনের’ অজুহাতে বাড়তি দেশি ফলের দাম
পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল বাঙ্গি খেতে মিষ্টি না হলেও রমজানের মধ্যে তার চাহিদা বেড়েছে। সে কারণে দামও বেড়েছে। মোটামুটি বড় আকারের যে বাঙ্গি রোজার আগে ৮০ টাকায় পাওয়া গেছে, গতকাল মঙ্গলবার বাজারে তার দাম উঠেছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, আর মাঝারি আকৃতির বাঙ্গি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।
শুধু বাঙ্গি নয়, রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, গ্রীষ্মের আরেক ফল তরমুজের দামও বাড়তি। বড় আকারের তরমুজের প্রতি কেজির দাম ৫০-৬০ টাকা, আর দেশে উৎপাদিত থাই জাতের পেয়ারা ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ছোট আকারের আনারস ৩০ এবং মাঝারি আকারের আনারস প্রতিটি ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমনকি ছোট আকারের প্রতিটি ডাব ৭০ টাকা ও বড়গুলোর দাম ১২০ টাকা পর্যন্ত।
অথচ এক সপ্তাহ আগেই তরমুজের দাম ছিল ৩০-৪০ টাকা কেজি, ৫০-৭০ টাকায় পাওয়া যেত বাঙ্গি। পেয়ারার কেজি ছিল ৫০ টাকা, আনারস ছিল ২০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে, আর ৩০ থেকে ৫০ টাকাতেই পাওয়া যেত ডাব। রমজান আসতেই অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে এসব ফলের দাম।
এদিকে রোজার প্রথম দিন এক ডজন সাগর কলার দাম উঠেছিল ১২০ টাকা। এখন কলার দাম কিছুটা কমে ৯০ টাকা ডজন হলেও অন্যান্য দেশি ফলের দাম বাড়তি।
দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের বিক্রেতারা জানান, চলমান ‘লকডাউনে’ ফলবাহী গাড়ি চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। এতে ফলের আমদানি কমে যাওয়ায় দাম অনেক বেড়ে গেছে। যদিও চলমান লকডাউনে খাদ্যপণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা নেই। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে কৃষিপণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে বিশেষ স্টিকার দেওয়া হয়েছে, যেন মালামাল পরিবহনে তারা সমস্যায় না পড়ে। এ ছাড়া পরিবহন সচল রাখতে মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফলের দাম বৃদ্ধির একটি কারণ হলো, এ বছর কৃষকেরা দাম সম্পর্কে সচেতন, ফলে তাঁরা দাম কিছুটা বেশি রাখছেন। তারপরও কৃষক পর্যায়ের দাম এবং খুচরা মূল্যের পার্থক্য অস্বাভাবিক, আমরাও বিষয়টি লক্ষ করছি।’
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, দেশে যত ফল উৎপন্ন হয়, তার ৫৬ শতাংশ উৎপাদিত হয় গ্রীষ্মকালের চার মাসে। বাকি ৪৪ শতাংশ ফল বাকি আট মাসে উৎপন্ন হয়। ফলে গ্রীষ্মের শুরুতে ফলের সংকট থাকায় দাম কিছুটা বাড়তি থাকে।
একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ফলের দৈনিক চাহিদা ২০০ গ্রাম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে গড়ে জনপ্রতি দৈনিক ৮২ গ্রাম ফল খাওয়া হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র সরকার বলেন, করোনা ও রোজায় ফলের চাহিদা কিছুটা বেড়ে গেছে, যার সুযোগ বিক্রেতারা নিচ্ছেন।
চাহিদার তুলনায় জোগান কম হলেও বাংলাদেশে ফল উৎপাদন-পরবর্তী অপচয়ের হার ২০-৪০ শতাংশ। বাবুল চন্দ্র বলেন, যেহেতু রোজায় পণ্য ধরে রাখার একটা প্রবণতা কাজ করে, সেহেতু এই সময় বাজার নিয়ন্ত্রণ খুব জরুরি। তা না হলে লাভ করতে গিয়ে বিক্রেতারা পণ্যের অপচয় করে ফেলবেন।