কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব
রুটি, পরোটা ও মিষ্টির দাম বেড়েছে
গত এক মাসে কাঁচামালের দাম দফায় দফায় বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বেকারিপণ্য ও রেস্তোরাঁর খাবারের দাম।
রাজধানীর কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা শামীম খান। গতকাল রোববার বেলা দেড়টার দিকে স্থানীয় একটি দোকানে মিষ্টি কিনতে প্রবেশ করেন। গুনে গুনে ৩০টি মিষ্টি দিতে বলেন এই ক্রেতা। দোকান থেকে বের হওয়ার সময় রাখঢাক না করেই বললেন, ‘আগে দুই কেজির দরকার হলে তিন কেজি কিনতাম। এখন আর সেই অবস্থা নেই। সব পণ্যের মতো মিষ্টির দামও বেড়েছে। এ জন্য ৩০টি মিষ্টির দরকার ছিল, ১ কেজি ৭০০ গ্রাম হয়েছে, ওটুকুই নিলাম।’ পরিবারের কেনাকাটায় এখন বাড়তি খরচ বাদ দিয়েছেন বলে জানান এই বেসরকারি চাকরিজীবী।
ঈদের পর সয়াবিন তেলের দাম আরেক দফা বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে চিনি-আটা-ময়দার দামও। এতে পরোটা, নান, শিঙাড়া, পুরি, পাউরুটি, বিস্কুট, টোস্টের মতো বেকারি ও বিভিন্ন পদের মিষ্টির দাম বেড়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মুদিদোকান, বেকারি ও রেস্টুরেন্ট ঘুরে এই চিত্র পাওয়া গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, গত এক মাসে কাঁচামালের দাম দফায় দফায় বেড়েছে। তাই পণ্যের দাম সমন্বয় না করার বিকল্প ছিল না। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দোকানপাট ও রেস্টুরেন্টের বিক্রিতে।
রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার আফতাব রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড কাবাবের স্বত্বাধিকারী ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে কয়েকটি খাবারের (গরুর খিচুড়ি, মোরগ পোলাও ও গরুর সাদা পোলাও) দাম ১০ টাকা বাড়িয়েছি। দাম বাড়ানো নিয়ে বারবার জবাবদিহি করতে হচ্ছে। অথচ বাজারে সব ধরনের কাঁচামালের দাম বেশি। এতে লাভের অঙ্ক কমে এসেছে।
সরেজমিনে রাজধানীর ধানমন্ডি, জিগাতলা, কলাবাগান, পান্থপথ, গ্রিন রোড, ফার্মগেট, তেজগাঁও, মগবাজার ও বাংলামোটর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রেস্টুরেন্টগুলোতে এখন ৫ টাকার পরোটা, শিঙাড়া ও পুরির দাম রাখা হচ্ছে ১০ টাকা। ঈদের আগেও এসব খাবারে দাম ছিল ৫ টাকা। মান ও আকারভেদে প্রতিটি নানের দামও বেড়েছে ৫ টাকা। পাড়া-মহল্লার সাধারণ মানের হোটেল-রেস্টুরেন্টে এখন এক বাটি মুরগির দাম রাখা হচ্ছে ৭০-৯০ টাকা। ঈদের আগেও যার দাম ছিল ৬০-৮০ টাকা। গরুর মাংসের দামও বেড়েছে বাটিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা। মাছের বিভিন্ন পদে বাড়তি গুনতে হচ্ছে ১০-১৫ টাকা।
এক সপ্তাহের মধ্যে কয়েকটি খাবারের (গরুর খিচুড়ি, মোরগ পোলাও ও গরুর সাদা পোলাও) দাম ১০ টাকা বাড়িয়েছি। দাম বাড়ানো নিয়ে বারবার জবাবদিহি করতে হচ্ছে। অথচ বাজারে সব ধরনের কাঁচামালের দাম বেশি। এতে লাভের অঙ্ক কমে এসেছে।
পান্থপথের ক্যাফে ডার্লিংয়ের বিক্রয়কর্মী মনির হোসেন বলেন, ‘ঈদের পর সয়াবিন ও আটার দাম বাড়ায় শিঙাড়া, পরোটা ও পুরির দাম ৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা করেছি। সবজিসহ অন্য সব পদে দাম বেড়েছে ১০ টাকা। তবে গরুর মাংসের দাম একটু বেশি বাড়াতে হয়েছে। ১২০ টাকার এক বাটি গরুর মাংসের দাম এখন ১৪০ টাকা রাখছি।’ দাম বাড়ানোর ফলে এই রেস্টুরেন্টের দৈনিক বেচাকেনা ১০-১২ হাজার টাকা থেকে ৬-৭ হাজার টাকায় নেমে এসেছে বলে জানান তিনি।
বাজারে আটা-ময়দা-সয়াবিনের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে বেকারি পণ্যেও। ২০ টাকা মূল্যের দুটি বনরুটির দাম এখন ২৫ টাকা। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মাঝারি আকারের পাউরুটি ৩৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪০ টাকা। ৫০ টাকার পাউরুটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। বেড়েছে ব্র্যান্ড ও নন-ব্র্যান্ডের কেকের দামও। ১০০ টাকা মূল্যের কেক এখন পাড়া-মহল্লার দোকানে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া স্থানীয় বেকারিতে তৈরি বিস্কুট, চানাচুর, নিমকি ও ড্রাই কেক বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২২০ টাকায়। ঈদের আগেও এসব পণ্যের দাম ছিল ২০০ টাকা।
মিষ্টি বা বেকারিপণ্য বানাতে যেসব কাঁচামালের দরকার হয়, তার প্রতিটির দাম বেড়েছে। বাধ্য হয়ে আমরা আজ (গতকাল রোববার) থেকে দাম সমন্বয় করেছি। দই ছাড়া প্রায় সব পদের মিষ্টিতে ২০ টাকা বেড়েছে।
গ্রিন রোডের হক ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের বিক্রয়কর্মী শাওন ইসলাম বলেন, বেকারি পণ্যের দাম দ্রুত বাড়ছে। অবস্থা এমন যে এখন বেকারি পণ্যের দাম মুখস্থ রাখাই কঠিন। মোড়কের মূল্য দেখেই তবে ক্রেতাকে জানাতে হচ্ছে।
রাজধানীর কলাবাগান ও ধানমন্ডি এলাকার মিষ্টির দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, মিষ্টির বিভিন্ন পদে দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা।
বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডারের কলাবাগান শাখা কাশ্মীরি চমচম, চমচম, ক্ষীর মালাই, গাজর মণ্ডা, গোলাপজাম, মালাইকারী ও কেক সুইটস ইত্যাদির দাম বাড়িয়েছে। এসব মিষ্টির কেজি বর্তমানে ৫৫০-৬২০ টাকা, যা আগে ছিল ৫৩০-৬০০ টাকা।
বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডারের শাখাটির ব্যবস্থাপক রঞ্জন দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘মিষ্টি বা বেকারি পণ্য বানাতে যেসব কাঁচামালের দরকার হয়, তার প্রতিটির দাম বেড়েছে। বাধ্য হয়ে আমরা আজ (গতকাল রোববার) থেকে দাম সমন্বয় করেছি। দই ছাড়া প্রায় সব পদের মিষ্টিতে ২০ টাকা বেড়েছে।’
পাশেই অবস্থিত ভাগ্যকুল মিষ্টান্ন ভান্ডারও তাদের পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার দাস জানালেন, নিমকি, সন্দেশ, কালোজাম, রাজভোগ, দই ও রসমালাইয়ের দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বৃদ্ধি করেছেন তাঁরা।