অর্থনীতির গেম চেঞ্জার–৪৭
দেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য এখন অর্থনীতিতে। ৫০ বছরে বাংলাদেশ নামের কথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হয়ে উঠেছে চমকে ভরা জাদুর বাক্স। সাহায্যনির্ভর বাংলাদেশ এখন বাণিজ্যনির্ভর দেশে পরিণত। তবে যাত্রাপথটা সহজ ছিল না। বড় ঝুঁকি নিয়ে অভিনব পথে এগিয়ে গেছেন আমাদের সাহসী উদ্যোক্তারা। এ সাফল্যের পেছনে আরও যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে অর্থনীতিবিদ যেমন ছিলেন, আছেন নীতিনির্ধারকেরাও। মূলত অর্থনীতির এসব অগ্রনায়ক, পথ রচয়িতা ও স্বপ্নদ্রষ্টারাই ৫০ বছরে বিশ্বে বাংলাদেশকে বসিয়েছেন মর্যাদার আসনে।
আমরা বেছে নিয়েছি সেই নায়কদের মধ্যে ৫০ জনকে। আমাদের কাছে তারাই অর্থনীতির ‘গেম চেঞ্জার’।
তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন দেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী। আবার তিনিই দেশের একমাত্র অর্থমন্ত্রী, যিনি একজন পরিপূর্ণ রাজনীতিবিদ ছিলেন। অর্থনীতিতে তাঁর তাত্ত্বিক জ্ঞান ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছিলেন। তাঁর গবেষকেরা লিখেছেন, ‘তাজউদ্দীন আহমদ প্রাথমিক রাজনৈতিক জীবনেই অনুধাবন করেন যে রাজনীতিতে সফল নেতৃত্ব দিতে হলে অর্থনীতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাক জরুরি।’ সেই পঞ্চাশের দশকে তাঁর লেখা ডায়েরিতেও এর প্রতিফলন দেখা যায়।
তাজউদ্দীন আহমদ পরপর তিনটি বাজেট দিয়েছিলেন। তিনি একই সঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্বেও ছিলেন। দেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাও তৈরি হয় তাঁর সময়েই। দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব ছিল তাঁরই ওপরে। তিনি আত্মনির্ভরশীল এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন। বাজেটেও ছিল এরই প্রতিফলন।
অর্থমন্ত্রী ও প্রথম বাজেট
তাজউদ্দীন আহমদ তখন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের প্রথম বাজেট অনুমোদিত হয়েছিল প্রবাসী সরকারের আমলেই। ১৯৭১ সালের ১৯ জুলাই প্রবাসী সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি যে বাজেটের অনুমোদন দিয়েছিলেন, তাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭ কোটি ৭৩ লাখ ২৮ হাজার ২০৭ রুপি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ বিজয় লাভ করলে স্বাধীন দেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী হলেন তাজউদ্দীন আহমদ। দায়িত্ব নিয়েই তাঁকে একসঙ্গে দুটি বাজেট নিয়ে কাজ করতে হয়। একটি হচ্ছে ১৯৭১-৭২ অর্থবছরের জন্য। এর সময়কাল ছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। আরেকটি পরবর্তী অর্থবছর ১৯৭২-৭৩-এর জন্য। নতুন অর্থমন্ত্রী দেশের প্রথম বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন ১৯৭২ সালের ৩০ জুন। তিনি একই সঙ্গে ১৯৭১-৭২ ও ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের বাজেট দিয়েছিলেন।
বাজেট বক্তৃতার শুরুতেই তিনি যে আফসোসের কথা বলেছিলেন, সেটি যে অনেক বছরের জন্য সত্যি হয়ে যাবে, তা হয়তো তিনি ভাবেননি। তিনি বলেছিলেন, ‘বেতার ও টেলিভিশনের মাধ্যমে এই বাজেট প্রচার না করে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের সামনে উপস্থাপন করতে পারলে আমি সুখী হতাম। তবে আমি আশা করি যে এর পরে আর কোনো দিন এইভাবে আমাদেরকে বাজেট প্রচার করতে হবে না।’
বাজেট বক্তৃতায় এরপরই তাজউদ্দীন আহমদ দেশের সে সময়ের একটি চিত্র তুলে ধরেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরে যখন ঢাকা মুক্ত হলো, তখন আমরা পেলাম এক যুদ্ধবিধ্বস্ত দেউলিয়া অর্থব্যবস্থা। রেলপথ, সড়ক ও নদীপথসমূহ তখন সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন; নিমজ্জিত জাহাজ ও ভাসমান মাইন দিয়ে বন্দরসমূহ বন্ধ; শিল্পসমূহ শত্রুর আঘাতে বিধ্বস্ত বা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত যন্ত্রপাতি আর কাঁচামালের অভাবে কলকারখানা স্তব্ধ। স্বাধীনতালাভের সাথে সাথেই যে বহুবিধ সমস্যা নতুন সরকারের আশু মনোযোগ দাবি করছিল, তার মধ্যে ছিল দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাব, খাদ্যসামগ্রীর সীমিত সরবরাহ, শ্রমশক্তির বেকারত্ব; আর ছিল লক্ষ লক্ষ সহায়-সম্বলহীন মানুষ আর দেশে প্রত্যাবর্তনকারী অগণিত উদ্বাস্তু মিছিল। এই সব সমস্যার সমাধান যেকোনো সরকারের জন্য ছিল দুঃসাধ্য। আর সম্পদ ও বৈদেশিক মুদ্রাবিহীন এবং যথাযথ প্রশাসন যন্ত্রবর্জিত নতুন সরকারের জন্য এ ছিল এক অসম্ভব কাজ।’ প্রথম অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদের মূল কাজই ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন। প্রথম বাজেটেও মনোযোগ ছিল এদিকেই।
প্রথম বাজেটের উপসংহারে তাজউদ্দীন আহমদ মূলত আত্মনির্ভরশীল হওয়ারই তাগিদ দিয়েছিলেন। জোর দিয়েছিলেন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপর। তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের কষ্টের কাল, কৃচ্ছ্রসাধনের সময় তাই বলে পার হয়ে যায়নি। বঙ্গবন্ধু আপনাদেরকে বলেছিলেন যে তিন বছরের মধ্যে সরকার আপনাদেরকে কিছু দিতে পারবেন না। আমি সেই কথা আবার আপনাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। আমরা যে সুখী ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গঠনের চেষ্টা করছি, তার জন্য আমাদেরকে আজ কষ্ট স্বীকার করতে হবে, যাতে আগামীকাল আমাদের সন্তানদের কষ্ট আমরা লাঘব করতে পারি। স্বাধীন জাতি হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে হলে আমাদেরকে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে, অর্থব্যবস্থার দিক দিয়ে স্বাবলম্বী হতে হবে। আজ আমাদের সীমাবদ্ধ সম্পদের ব্যবহার আমরা করছি প্রধানত পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে। ভবিষ্যতে উন্নয়ন পরিকল্পনার ব্যয়ভার অভ্যন্তরীণ সম্পদের ভিত্তিতে নিজেদেরকেই বহন করতে হবে। দেশবাসীকে তার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। পরিকল্পনার আকার ও প্রকার যা–ই হোক না কেন, বাস্তবায়নের উপরেই তার সাফল্য নির্ভর করে। আর সেই সাফল্য সুনিশ্চিত হতে পারে শুধু সুশৃঙ্খল জাতির সমবেত প্রয়াসে।’
আরও দুই বাজেট ও পদত্যাগ
অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদ আরও দুটি বাজেট দিয়েছেন। তাঁর সময়েই তৈরি হয়েছে প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। তবে তৃতীয় বাজেট যখন তাজউদ্দীন আহমদ দিয়েছিলেন, তখন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আসলেই ভালো ছিল না। দেশের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সম্পদের ঘাটতি, বৈদেশিক মুদ্রার অভাব, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি তো ছিলই, বিশ্ব অর্থনীতিও ছিল চরম সংকটে। মধ্যপ্রাচ্য সংকট, জ্বালানিসংকট, ডলার–সংকট—এসবের প্রভাবও পড়েছিল দেশের অর্থনীতিতে। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ ছিল অর্থনীতির জন্য আরেক আঘাত। তিনি দেশের বৈদেশিক সাহায্য নীতিরও সমালোচক ছিলেন। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্ট ম্যাকনামারার প্রথম বাংলাদেশ সফরের সময় তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে যে আলাপচারিতা হয়েছিল, সেই গল্প বিস্তারিত লিখেছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলাম।
তাজউদ্দীন আহমদ মূলত রাজনীতিবিদ। অর্থনৈতিক সংকট ছিল দেশজুড়ে। তাঁর রাজনৈতিক জীবনেও তখন চলছিল টানাপোড়েন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি ঘটলে ১৯৭৪ সালের ২৬ অক্টোবর পদত্যাগ করেন। মার্কিন পররাষ্ট্রসচিব হেনরি কিসিঞ্জারের বাংলাদেশ সফরের ঠিক আগে এই পদত্যাগের ঘটনা ঘটে। পরের দিন দৈনিক ইত্তেফাকে পদত্যাগ নিয়ে লেখা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান পদত্যাগ করিতে বলায় অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ গতকাল (শনিবার) মন্ত্রিসভা হইতে পদত্যাগ করিয়াছেন। পদত্যাগের খবর প্রচারিত হওয়ার পর জনাব তাজউদ্দীন আহমদের সহিত তাঁহার বাসভবনে যোগাযোগ করা হইলে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশেই তিনি পদত্যাগ করিয়াছেন। জাতির বৃহত্তর স্বার্থের খাতিরে এ ব্যাপারে তিনি কোন বিতর্কের সৃষ্টি করিতে চাহেন না। তাজউদ্দীন আহমদ বেলা ১০টা ২২ মিনিটে পদত্যাগপত্র পেশ করেন। সকাল ১০টায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের বৈঠক বাতিল করিয়া দেওয়া হয়। বেলা ১১টায় মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকের অব্যবহিত পর প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদকে পদত্যাগ করিতে নির্দেশ দিলে তিনি পদত্যাগপত্র পেশ করেন।’ অধ্যাপক নুরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘দুই ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগী শেখ মুজিব ও তাজউদ্দীনের মধ্যে সম্পর্কের ভাঙন বাংলাদেশের পক্ষে একটি বড় দুর্ভাগ্য।’
‘তাজউদ্দীন আহমদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা’ গ্রন্থে ড. মো. কামাল হোসেন লিখেছেন, ‘তাজউদ্দীন আহমদ জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য যে ৩টি জাতীয় বাজেট এবং একটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন, তাতে কেবল ধনী–দরিদ্রের বৈষম্য কমানোর চেষ্টাই করেননি, গ্রাম ও শহর, সদর ও মফস্বল এলাকার মধ্যেও বৈষম্য কমানোর চেষ্টা এবং উন্নয়নে সমান গুরুত্ব প্রদান করেন। বাজেটে জেলাভিত্তিক বরাদ্দেরও ব্যবস্থা রাখেন। তার বাজেটগুলো সুলিখিত, উপস্থাপনগুণে অত্যন্ত চমৎকার এবং ভারসাম্যপূর্ণ সুষম উন্নয়নের ঐতিহাসিক দলিলে পরিণত হয়েছে। বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশে এত সুচিন্তিত, সুখপাঠ্য বাজেট আর কেউ এ পর্যন্ত প্রণয়ন করতে পারেননি। বাজেটগুলোতে যুদ্ধোত্তর দেশ পুনর্গঠন এবং উন্নয়ন প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতা ও বিবর্তন লক্ষ করা যায়। যেমন ১৯৭২-১৯৭৩ সালের বাজেটটিকে তাজউদ্দীন আহমদ উন্নয়ন, পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনধর্মী বলে উল্লেখ করেন। আবার ১৯৭৩-১৯৭৪ অর্থবছরের বাজেট পেশের প্রারম্ভে বলেন, বিগত বছরটি ছিল জাতীয় জীবনের এক সুকঠিন পরীক্ষা ও সুমহান আশার কাল। যে বহুমাত্রিক সমস্যা উত্তরাধিকারসূত্রে জাতি লাভ করেছিল, তার প্রকৃতি তখন পর্যন্ত স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারেনি মুক্তির আনন্দে ও উচ্ছ্বাসে। ১৯৭৩-১৯৭৪ সনের বাজেটকে তিনি ধ্বংসস্তূপের ওপর অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ার সংগ্রাম বলে অভিহিত করেন। কেননা, প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সূচনা হয় এই বছর। তিনি মন্তব্য করেন, পরিকল্পনাটির সাফল্য-ব্যর্থতার ওপর জাতির ভবিষ্যৎ অনেকাংশে নির্ভরশীল। ১৯৭৪-১৯৭৫ অর্থবছরের বাজেট পেশের সময় তিনি আগের অর্থবছরকে জাতির জন্য বাস্তবানুগ উপলব্ধির কাল বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, সার্বিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে সকল পর্যায়ে নেতৃত্ব, জনগণ ও সম্পদকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে সর্বাত্মক, সৎ, বাস্তবানুগ ও নিরলস প্রচেষ্টার কোনো বিকল্প নেই।’
সংক্ষিপ্ত জীবনী
তাজউদ্দীন আহমদের জন্ম গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানার দরদরিয়া গ্রামে, ১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই। তিনি ১৯৪৪ সালে ঢাকার সেন্ট গ্রেগরিজ হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৪৮ সালে আইএ এবং ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি আইনশাস্ত্রে ডিগ্রি লাভ করেন এবং ঢাকায় আইন ব্যবসা শুরু করেন।
ছাত্রজীবন থেকেই তাজউদ্দীন আহমদ সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত হন। ১৯৪৩ সাল থেকে তিনি মুসলিম লীগের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তবে মুসলিম লীগ সরকারের গণবিচ্ছিন্ন রাজনীতির প্রতিবাদে তিনি এ দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। তিনি ছিলেন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের (১৯৪৯) অন্যতম উদ্যোক্তা। ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৭ সালে তিনি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ছিলেন এবং পরে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট প্রার্থী হিসেবে কাপাসিয়া থেকে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে দেশে সামরিক শাসন জারির পর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধঘোষিত হলে তাজউদ্দীন আহমদ গ্রেপ্তার হন এবং ১৯৫৯ সালে মুক্তিলাভ করেন। ১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত হওয়ার পর তিনি দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী গণহত্যা শুরু করলে তিনি তাঁর কয়েকজন সহকর্মীসহ ভারত যান। ১০ এপ্রিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হলে তিনি এ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন এবং মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেন।
মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের পর ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর তিনি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং সদ্য স্বাধীন দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হলে (১৯৭২) তাজউদ্দীন আহমদ প্রথমে অর্থ এবং পরে অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। তবে ১৯৭৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের নির্দেশে তিনি মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবার নিহত হলে পরদিন তাজউদ্দীন আহমদ গৃহবন্দী হন। ২২ আগস্ট তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়। কারাগারে বন্দী অবস্থায় ৩ নভেম্বর অপর তিন জাতীয় নেতার সঙ্গে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।